দুই বছরের হত্যাযজ্ঞের পর নেচে, গেয়ে, হাততালি দিয়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তি উদযাপন গাজাবাসীর

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে হামাস ও ইসরায়েল। তাদের মধ্যে হওয়া চুক্তি উদযাপন করতে খান ইউনিসের রাস্তায় আনন্দের বন্যা বয়ে গেছে।
রয়টার্সের হাতে আসা এক ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন মানুষের ছোট একটি দল গান গাইছে, নাচছে ও উল্লাস করছে। শিশুদেরও হাততালি দিতে দেখা গেছে। এক পর্যায়ে একটি স্পিকার থেকে জোরে গান বাজতে শুরু করে তারা।
গাজায় তখনও ভোররাত, আর অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় ইন্টারনেট সংযোগ খুবই দুর্বল। তাই অনেকেই হয়ত হামাস ও ইসরায়েলের চুক্তির খবর এখনো জানেন না বলে সিএনএনকে জানিয়েছেন গাজার সাংবাদিকরা।
তারা আরও বলেন, গাজা সিটিতে এখনো বোমাবর্ষণ চলছে—বিশেষ করে সেই এলাকায়, যেখানে গত মাসে ইসরায়েল স্থল অভিযান চালিয়েছিল। এ কারণেই অধিকাংশ মানুষ আপাতত বাড়িতেই অবস্থান করছেন।
গাজা সিটির বাসিন্দা মোহাম্মদ আল-জারু সিএনএনকে জানান, বুধবার তিনি বেশ নীচ দিয়ে যুদ্ধবিমান উড়তে দেখেছেন এবং মঙ্গলবার সারাদিন ও রাতজুড়ে সেখানে বিমান হামলা ও বিস্ফোরণ হয়েছে।
তাই গাজাবাসী চুক্তি উদযাপন করলেও তারা সতর্ক রয়েছেন। আর সতর্ক থেকেই আশা প্রকাশ করছেন যে, চুক্তিটি অবরুদ্ধ উপত্যকায় ইসরায়েলের নৃশংস হামলার অবসান ঘটাবে।
খান ইউনিসের বাসিন্দা খালেদ শাআত বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, 'এগুলো এমন মুহূর্ত, যা ঐতিহাসিক হিসেবে বিবেচিত হবে। দুই বছরের হত্যাযজ্ঞ ও গণহত্যার পর ফিলিস্তিনিদের জন্য এটাই ছিল দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মুহূর্ত।'
খান ইউনিসের আরেক বাসিন্দা ওয়েল রাদওয়ান এই চুক্তির কৃতিত্ব দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। তিনি বলেন, 'যারা যুদ্ধ থামাতে এবং রক্তপাত বন্ধ করতে অবদান রেখেছেন—যদি তা কেবল মুখের কথাও হয়ে থাকে—তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।'
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মাজিদ আবদ রাব্বো বলেন, 'পুরো গাজা উপত্যকাই এই ঘোষণায় খুশি।' রয়টার্সের প্রতিবেদনে তিনি বলেছেন, 'সমস্ত আরব জনগণ, এমনকি পুরো বিশ্বই যুদ্ধবিরতি এবং রক্তপাতের অবসানে আনন্দিত।'
খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের কাছে ভোররাতের অন্ধকারে লোকজন জড়ো হয়ে উদযাপন করেন। তারা হাততালি ও উল্লাসধ্বনি দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন।
তবে মনে রাখতে হবে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে—যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। বুধবার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঘটনায় আরও ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৪১ জন আহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জাতিসংঘ ও একাধিক মানবিক সংস্থার মতে, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেক বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও বহু হাজার মানুষ চাপা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের একটি স্বাধীন তদন্তে প্রথমবারের মতো বলা হয়, গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই ফলাফল অন্যান্য গণহত্যা বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার সংস্থার পর্যবেক্ষণের সঙ্গেও মিলে যায়। তবে ইসরায়েলি সরকার এই অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছে।