নাগরিকদের কাছ থেকে সার্বক্ষণিক তথ্য পেতে নতুন অ্যাপ চালুর নির্দেশ ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরোর
নাগরিকদের কাছ থেকে সার্বক্ষণিক তথ্য পেতে একটি নতুন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। এই অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিকেরা কর্তৃপক্ষকে 'দিনের ২৪ ঘণ্টায় তারা যা দেখছে এবং শুনছে' সবকিছু জানাতে পারবেন।
মাদুরো জানান, এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো দেশের 'শান্তি নিশ্চিত করা'।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই মাদুরো প্রশাসনের এই পদক্ষেপ এলো। জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে মাদুরো সরকার ক্রমবর্ধমানভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, নাগরিকদের তথ্যদাতা এই নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের পরিকল্পনাকে সামরিক বাহিনীর বিদ্যমান সাংগঠনিক কাঠামো পূর্ণ সমর্থন দেবে।
মাদুরো বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, 'ভেনঅ্যাপ সিস্টেমকে [এটি একটি সরকারি অ্যাপ্লিকেশন যা নাগরিকদের সরকারি পরিষেবার সমস্যা জানাতে ও অভিযোগ দায়েরের জন্য ব্যবহৃত হয়] এই নতুন প্রক্রিয়াকে সহজতর করতে হবে। বলিভারিয়ান ন্যাশনাল আর্মড ফোর্সেস, কমিউনাল মিলিশিয়া ইউনিটস এবং ইন্টিগ্রাল ডিফেন্সের জনপ্রিয় বেসগুলোর সমন্বয়ে জাতীয় আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে এই নতুন অ্যাপ্লিকেশনটি যুক্ত হবে।'
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা দেশটির দৈনন্দিন জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে। এই পরিস্থিতিতে ভেনেজুয়েলার সরকার দেশের জনগণের উপর তাদের পূর্ব-বিদ্যমান কঠোর রাজনৈতিক ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার করার দিকে মনোযোগ বাড়িয়েছে।
মাদুরোর ঘোষণার ঠিক আগে, অভ্যন্তরীণ ও বিচারমন্ত্রী এবং সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি ডিয়োসদাদো কাবেলো 'জননিরাপত্তা জোরদার করার' উদ্দেশ্যে গণহারে নজরদারি ক্যামেরা স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। এই উদ্যোগটি 'পিস কোয়াড্রেন্টস' নামক কর্মসূচির অংশ। কারাকাস ও অন্যান্য প্রধান শহরগুলোতে, বিশেষত গভীর রাতে, নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি এমনিতেই লক্ষণীয়।
পর্যবেক্ষকদের মতে, এই নতুন ব্যবস্থাগুলো বিতর্কিত 'ডিক্রি অফ এক্সটার্নাল কমোশন' কার্যকরের পথ প্রশস্ত করতে পারে, যার ইঙ্গিত মাদুরো ইতোমধ্যেই দিয়েছেন। বিশেষত ওয়াশিংটনের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়লে বা কোনো সামরিক পদক্ষেপের ঘটনা ঘটলে এটি কার্যকর হতে পারে।
এই আইনে নির্বাহী ক্ষমতার ব্যাপক ও বিতর্কিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে এবং এর কোনো সুস্পষ্ট সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। এর মাধ্যমে সরকার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং 'দেশের বিরুদ্ধে হত্যা বা সামরিক কার্যকলাপে' জড়িত বলে অভিযুক্ত বিরোধী দলগুলোকে শাস্তি দেওয়ার ব্যাপক ক্ষমতা পাবে।
বিরোধী দলের সঙ্গে সংঘাতের প্রেক্ষাপটে সরকারের তৈরি এই সামাজিক তথ্যদাতা ব্যবস্থা অবশ্য ভেনেজুয়েলায় নতুন নয়। বছরের পর বছর ধরে, তথাকথিত 'সহযোগী দেশপ্রেমিক'রা সক্রিয় রয়েছে। এরা সাধারণত শ্রমিক-শ্রেণির পাড়া বা আবাসিক এলাকার চাভিস্তা কর্মী, যারা রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় সন্দেহজনক গতিবিধি বা অন্যদের আচরণের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষকে খবর দেয় – যেমনটি জুলাই ২০২৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সময় ঘটেছিল।
২০১১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে 'সহযোগী দেশপ্রেমিক'রা বিভিন্ন মাত্রায় তথ্যদাতা হিসেবে কাজ করেছে। তাদের অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষক হলেন মন্ত্রী কাবেলো, যিনি প্রায়শই তার টেলিভিশন অনুষ্ঠানে বেনামি টিপস বা রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে লক্ষ্যবস্তু করেন।
ক্ষমতাসীন দলের তৈরি করা অন্যান্য অনেক সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মতোই, যা সময়ের সাথে সাথে দুর্বল হয়ে পড়েছিল, এখন সেগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং চাভিস্তা আদর্শের প্রতি তাদের আনুগত্য জোরদার করতে সুস্পষ্ট প্রচেষ্টা চলছে।
জুলাই ২০২৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর নিকোলাস মাদুরোর বিজয়ের সরকারি ঘোষণার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসা ১ হাজারেরও বেশি মানুষকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই চাভিস্তা কর্মী এবং 'সহযোগী দেশপ্রেমিক'দের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযুক্ত হয়েছিলেন।
