শ্যাম্পু কি চুলের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করতে পারে? প্রচলিত চার ভুল ধারণার সত্যতা
সুস্থ, স্বাস্থ্যজ্জ্বোল ও সুন্দর চুল চায় সবাই, হোক তা ঢেউ খেলানো, কোঁকড়ানো বা একেবারে সোজা। তাই বাজারে চুলের যত্নের অগণিত পণ্য এবং অনলাইনে নানা ট্রেন্ড ও টিকটক টিপস ঘুরে বেড়ায়। এত কিছুর ভিড়ে অনেক সময় আমরা মৌলিক বিষয়গুলোই ভুলে যাই। আসলে চুলের যত্ন মানে ব্যয়বহুল পণ্য বা জটিল রুটিন নয়; বরং সহজ ও মৌলিক নিয়ম মেনে চলা।
যুক্তরাজ্যের ইউকে হেয়ার কনসালট্যান্টসের ট্রাইকোলজিস্ট ইভা প্রাউডম্যান এবং হেয়ার অ্যান্ড স্ক্যাল্প ক্লিনিকের ট্রেসি ওয়াকার জানিয়েছেন, চুলের যত্নে প্রচলিত চারটি ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত।
১. ঠান্ডা পানি চুল উজ্জ্বল করে না
আপনি কি চুল ঝলমলে করার আশায় কখনো বরফঠান্ডা পানিতে গোসল করেছেন? যদি করে থাকেন, তাহলে আজ থেকেই তা বন্ধ করতে পারেন।
প্রাউডম্যান বলেন, ঠান্ডা পানিতে চুল ধোয়ার কোনো উপকার নেই।
তিনি বলেন, 'চুলকে রাসায়নিক, তাপ ও পরিবেশের প্রভাব থেকে সুরক্ষা দেওয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।'
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, অতিরিক্ত গরম পানিতে চুল ধোয়া ঠিক নয়, কারণ এতে চুল শুষ্ক হয়ে যায় এবং মাথার ত্বকও পুড়ে যেতে পারে।
২. কোনো পণ্যই ক্ষতিগ্রস্ত চুলের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করতে পারে না
যারা নানা পণ্য ব্যবহার করে চুলের ডগা ফাটা রোধ করতে চান , তারা হয়তো এ কথা জেনে হতাশ হবেন যে এসব পণ্য চুল ফাটা রোধ করতে পারবে না। কারণ এর একমাত্র সমাধান হলো চুল কাটা।
প্রাউডম্যান বলেন, 'চুলের ডগা ফাটা আসলে স্টকিংয়ের ছেঁড়া অংশের মতো—এটা সারানোর কোনো উপায় নেই।'
ওয়াকার বলেন, 'চুলকে যদি মাইক্রোস্কোপে দেখা যায়, দেখা যাবে এটি যেন দুই-তিনটি শাখায় ভেঙে গেছে। বাজারের পণ্যগুলো এক ধরনের আঠার মতো কাজ করে, যা সাময়িকভাবে চুলকে একত্রে ধরে রাখে।'
তিনি সতর্ক করে বলেন, এসব পণ্যের পেছনে কাড়িকাড়ি টাকা খরচ করা অর্থহীন, কারণ এগুলো স্থায়ী সমাধান দেয় না।
প্রাউডম্যান আরও বলেন, 'চুল কাটলে চুল দ্রুত বাড়ে'—এই ধারণাও সম্পূর্ণ ভুল।
তার মতে, 'চুল দ্রুত বাড়ানো সম্ভব নয়। যে কোম্পানি দাবি করে তাদের পণ্য দ্রুত চুল বাড়াতে পারে, তারা আসলে মিথ্যা বলছে।'
৩. চুল কখনো নিজে থেকে পরিষ্কার হয় না
অনেকেই দাবি করেন, তারা চুলকে এমনভাবে মেইনটেইন করেন যে চুল নিজেই পরিষ্কার থাকে, ফলে চুল ধোয়ার প্রয়োজন হয় না।
প্রাউডম্যান বলেন, এটি একেবারেই ভুল ধারণা। 'আমাদের মাথায় প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার তেলগ্রন্থি আছে। চুল নিয়মিত না ধুলে এসব গ্রন্থিতে ময়লা ও ধুলো জমে।'
ওয়াকার বলেন, 'যেভাবে শুধু পানি দিয়ে কাপড়ের তেলচিটে দাগ ওঠে না, তেমনি চুলও কেবল পানি দিয়ে পরিষ্কার হয় না। এজন্য প্রয়োজন শ্যাম্পু।'
তিনি বলেন, নিয়মিত চুল না ধুলে দুর্গন্ধ হয় এবং খুশকি বা চুলকানির মতো সমস্যা বেড়ে যায়। কারণ অতিরিক্ত তেল জমলে খুশকি ও ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায়।
প্রাউডম্যানের পরামর্শ, যদি আপনার চুল খুব তেলচিটচিটে হয় বা অনেক বেশি পণ্য ব্যবহার করার অভ্যাস থাকে, তাহলে একদিন পরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
হাডার্সফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যানালিসিস বিভাগের অধ্যাপক লরা ওয়াটার্স বলেন, খুব তেলতেলে চুলের জন্য শক্তিশালী শ্যাম্পু ভালো, তবে শুষ্ক চুলের ক্ষেত্রে সালফেট-মুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করলে তেল যায় না।
৪. ড্রাই শ্যাম্পু কখনো আসল শ্যাম্পুর বিকল্প নয়
ব্যস্ত জীবনে প্রতিদিন চুল ধোয়া, শুকানো ও যত্ন করা সম্ভব হয় না। তাই অনেকেই দ্রুত সমাধান হিসেবে ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করেন।
প্রাউডম্যান বলেন, 'ড্রাই শ্যাম্পু একবার ব্যবহার করলে তেমন কোনো সমস্যা নেই, তবে টানা দুই-তিন দিন ব্যবহার করা ঠিক নয়।'
তিনি বলেন, 'স্ক্যাল্পের প্রাকৃতিক তেল ড্রাই শ্যাম্পুর সঙ্গে মিশে জমে যায়, এতে মাথায় খুশকি জন্মায় ও চুলকানি সৃষ্টি হয়।'
তার পরামর্শ, যেভাবে মুখের যত্ন নেন, সেভাবেই চুলের যত্ন নিন। মুখে যেভাবে কেউ মেকআপ না তুলে নতুন করে মেকআপ লাগায় না, তেমনি চুলও পরিষ্কার না করে বারবার পণ্য ব্যবহার করা ঠিক নয়।
