কাঠগড়ায় সাথী–আফ্রিদির খোশগল্প, রিমান্ডের কথা শুনে হাসলেন হাজী সেলিম

জুলাই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকার চানখারপুলে ঝুট ব্যবসায়ী মো. মনির হত্যা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম ও তার ছেলে সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান সেলিমকে চার দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
এছাড়া, হত্যাচেষ্টা মামলায় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাইটিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথী এবং তার ছেলে চ্যানেলটির পরিচালক ও 'কনটেন্ট ক্রিয়েটর' তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গত ১৩ অক্টোবর মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক মাইনুল খান পুলক হাজী সেলিম ও সোলায়মান সেলিমের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। অন্যদিকে বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক গোলাম কিবরিয়া খান ১৯ অক্টোবর নাসির উদ্দিন সাথী ও তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। আদালত আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) শুনানির দিন ধার্য করেন।
এদিন সকাল ১০টার দিকে পুলিশ আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করে। পরে তাদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। সকাল ১১টার দিকে এজলাসে তোলা হলে তাদের হাতে হাতকড়া, মাথায় হেলমেট ও বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরানো ছিল। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের কাঠগড়ায় আনা হয়। একে একে হেলমেট ও জ্যাকেট খুলে দেওয়া হলে নাসির উদ্দিন সাথী সামনে এগিয়ে যান, পাশে দাঁড়ান ছেলে তৌহিদ আফ্রিদি। দুজনকে তখন খোশগল্পে মেতে থাকতে দেখা যায়। এসময় তারা হাসছিলেন। তবে হাজী সেলিম ও সোলায়মান সেলিম দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন, কথা বলেননি।
বেলা ১১টা ৫ মিনিটে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি.এম. ফারহান ইশতিয়াক এজলাসে ওঠেন। প্রথমে দুর্জয় আহম্মেদ হত্যাচেষ্টা মামলায় নাসির উদ্দিন সাথী ও তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানি হয়। বিচারক তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, তারা এজাহারনামীয় আসামি কি না। জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা জানান, তারা ৪৫ ও ৪৬ নম্বর আসামি। পরে আদালত তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন।
এরপর মিরপুর মডেল থানার মাহফুজ আলম শ্রাবণ হত্যা মামলায় নাসির উদ্দিন সাথীকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর হাজী সেলিম ও সোলায়মান সেলিমের রিমান্ড আবেদনের শুনানি শুরু হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী শ্রী প্রাণনাথ রিমান্ড বাতিল ও জামিনের আবেদন করেন।
শুনানিতে আইনজীবী বলেন, "এর আগেও তাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল, কিছুই উদ্ধার হয়নি।" হাজী সেলিম আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলতে চান জানালে তিনি ইশারায় বলেন, "আমি বোবা, কথা বলতে পারি না।" পরে আইনজীবী বলেন, "তিনি জেলে আছেন, প্রয়োজনে জেলগেটেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।" এরপর আদালত তাদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ডের আদেশ শোনার পর হাজী সেলিম ইশারায় জানতে চান, কী হলো। পাশে থাকা সোলায়মান সেলিম বলেন, "দুইজনকেই চার দিনের রিমান্ড দিয়েছে।" এসময় হাসতে দেখা যায় হাজী সেলিমকে।
সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ দ্রুত আসামিদের হাজতখানায় নিয়ে যায়। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান নাসির উদ্দিন সাথী ও তৌহিদ আফ্রিদি। পরে দ্রুতই তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালত থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে তৌহিদ আফ্রিদি বলেন, "দোয়া করবেন, আমার স্ত্রীর বেবি ডেলিভারি হবে।"
মামলার বিস্তারিত
দুর্জয় হত্যাচেষ্টা মামলার অভিযোগে বলা হয়, জুলাই আন্দোলনের সময় গত ২০ জুলাই মধ্যবাড্ডার ইউলুপ এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে দুর্জয়ের দুই চোখ নষ্ট হয়, মাথায় গুরুতর আঘাত পান তিনি। তাকে মৃত ভেবে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়। পরে পথচারীরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে পাঠান। পরে তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এ ঘটনায় গত বছরের ২০ নভেম্বর তিনি বাড্ডা থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৯০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মাহফুজ হত্যা মামলার অভিযোগে বলা হয়, বিএনপি কর্মী মাহফুজ আলম শ্রাবণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। গত ৫ আগস্ট দুপুরে মিরপুরে ছাত্রজনতার মিছিলে হামলা চালায় আসামিরা। গুলিতে আহত শ্রাবণকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মনির হত্যা মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন চানখারপুল এলাকায় আন্দোলনে অংশ নেন ঝুট ব্যবসায়ী মো. মনির। সেদিন দুপুরে গুলিতে নিহত হন তিনি। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী রোজিনা আক্তার গত ১৪ মার্চ শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন, যেখানে ৩৫১ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়।