প্রশাসনে জামায়াতপন্থীদের প্রাধান্য দেওয়ার অভিযোগ বিএনপির, সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসনিক রদবদল ও পদায়নে জামায়াতপন্থীদের প্রভাব বাড়ছে বলে মনে করছে বিএনপি। নির্বাচনী কাজে তাদের গুরুত্ব দেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দলটি। ফলে আসন্ন নির্বাচনে অন্তর্বর্তী সরকারের 'নিরপেক্ষতা' নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি।
সোমবার দলটির স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয় বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। এদিন গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে রাত ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
দলীয় সূত্র জানায়, প্রশাসনে সচিব পর্যায়ে নিয়োগ, রদবদল ও পদায়নের ক্ষেত্রে জামায়াত ঘরানার কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় বৈঠকে। বিশেষভাবে তাদের লোকদের প্রশাসনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে পদায়ন করা হচ্ছে, অথচ বিএনপির কোনো সুপারিশই বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না।
এ অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশে ফিরলে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। সেখানে বিএনপির পক্ষ থেকে এসব উদ্বেগ জানানো হবে।
সূত্র জানায়, পাশাপাশি দু–এক দিনের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তারা দলীয় উদ্বেগ ও পর্যবেক্ষণ আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন।
বৈঠকে 'জুলাই সনদে' স্বাক্ষর প্রসঙ্গেও আলোচনা হয়। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা জানান, সংলাপে বিএনপি যেসব প্রস্তাব ও মতামত দিয়েছে, তা সনদে অন্তর্ভুক্ত থাকলে দলটি এতে স্বাক্ষর করবে। আলোচনার এক পর্যায়ে কয়েকজন গণভোটের বিষয়টি তোলেন। এ নিয়ে স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য মত দেন, নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন সম্ভব নয়; তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হলে তাতে কারও আপত্তি থাকবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, সরকারের কিছু উপদেষ্টার বক্তব্য, কার্যক্রম ও আচরণে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তারা পক্ষপাতমূলক ভূমিকা রাখছেন, বিশেষ করে জামায়াতপন্থীদের পক্ষে কাজ করছেন। একই সঙ্গে মাঠপর্যায়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল তৈরির ক্ষেত্রেও জামায়াতে ইসলামীর প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে— এমন তথ্য বিএনপির কাছে এসেছে বলেও তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, "একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের স্বার্থে সরকারের এখনই নিজেদের নিরপেক্ষ অবস্থান স্পষ্ট করা জরুরি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো নিরপেক্ষ কাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যাতে প্রশাসন ও সরকারের শতভাগ নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হয়।"
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।