প্রাণনাশের চেষ্টা চালানোয় 'নিরাপদ স্থানে' আশ্রয় নিয়েছেন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট

মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা জানিয়েছেন, তার প্রাণনাশের চেষ্টা চালানো হয়েছে। এ ঘটনার পর তিনি বর্তমানে 'নিরাপদ স্থানে' আশ্রয় নিয়েছেন।
ফেসবুকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া সরাসরি ভাষণে ৫১ বছর বয়সী রাজোয়েলিনা বলেন, 'সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য ও রাজনীতিবিদ আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন।'
তিনি নিজের অবস্থান গোপন রেখেছেন। তবে অনিশ্চিত কিছু সূত্রের বরাতে জানা গেছে, তিনি ফরাসি সামরিক বিমানে করে দেশ ছেড়ে গেছেন।
এর আগে, রাজোয়েলিনা দেশ ছেড়েছেন বলে জানিয়েছিলেন দেশটির বিরোধী দলীয় নেতা ও সরকারি কর্মকর্তারা। দেশটির তরুণদের (জেন-জি) নেতৃত্বে চলমান আন্দোলনের মুখে সরকারের পতনের এ ঘটনা ঘটে।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) দেশটির পার্লামেন্টের বিরোধী নেতা সিতেনি র্যান্ড্রিয়ানাসোলোনিয়াইকো জানান, সেনাবাহিনীর কয়েকটি ইউনিট বিক্ষোভকারীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার পর রাজোয়েলিনা রোববার (১২ অক্টোবর) দেশ ত্যাগ করেন।
তিনি আরও জানান, রাজোয়েলিনার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে তারা কিছু জানেন না।
দেশটির প্রেসিডেন্টের দপ্তর আগে জানিয়েছিল, রাজোয়েলিনা সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। তবে পরবর্তীতে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া জানায়নি দপ্তরটি।
সামরিক একটি সূত্র জানায়, রাজোয়েলিনা একটি ফরাসি সামরিক বিমানে করে দেশ ছাড়েন। ফরাসি গণমাধ্যম আরএফআই জানিয়েছে, তিনি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখোর সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছিলেন।
সূত্রটি জানায়, রোববার মাদাগাস্কারের সেন্ট মারি বিমানবন্দরে একটি ফরাসি সেনা পরিবহন বিমান অবতরণ করে। এর পাঁচ মিনিট পর একটি হেলিকপ্টার এসে তার যাত্রীকে সেই বিমানের কাছে নিয়ে যায়। সূত্রের দাবি, সেই যাত্রী ছিলেন প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা।
সোমবার জাতির উদ্দেশে তার ভাষণটি কয়েক দফা স্থগিত হয়, কারণ তখন সৈন্যরা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সদর দপ্তর দখলের হুমকি দিচ্ছিল।
পরে ফেসবুকে সরাসরি ভাষণ দিয়ে রাজোয়েলিনা বলেন, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে তার প্রাণনাশ ও ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, 'নিজের প্রাণ রক্ষার জন্য আমাকে নিরাপদ স্থানে যেতে হয়েছে।' তিনি আরও বলেন, 'এই সংকটের একমাত্র সমাধান হলো দেশের প্রচলিত সংবিধানকে সম্মান জানানো।'
গত ২৫ সেপ্টেম্বর দেশটিতে পানি ও বিদ্যুৎ সংকটকে কেন্দ্র করে প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয়। তবে দ্রুতই এটি দুর্নীতি, অদক্ষ শাসন ও মৌলিক অধিকারের অভাবের বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়।
মাত্র ৩৪ বছর বয়সে মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা আফ্রিকার সর্বকনিষ্ঠ নেতা হিসেবে ক্ষমতায় আসেন। চার বছর দেশ পরিচালনার পর তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে আবার ক্ষমতায় ফেরেন।
ধনাঢ্য পরিবারে জন্ম নেওয়া রাজোয়েলিনা রাজনীতিতে নামার আগে একজন উদ্যোক্তা ও ডিজে হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি নিজের উদ্যোগে একটি রেডিও স্টেশন ও একটি বিজ্ঞাপন সংস্থা গড়ে তোলেন।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার জনপ্রিয়তা ম্লান হয়ে যায়। তার বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও গভীর দুর্নীতির অভিযোগ ক্রমেই জোরালো হতে থাকে।
উল্লেখ্য, মাদাগাস্কারের সংকট শুরু হয় ১৯ সেপ্টেম্বর। রাজধানী আন্তানানারিভোতে বিদ্যুৎ ও পানির সংকট নিয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ডাক দেওয়ায় দুই শীর্ষ রাজনীতিবিদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ঘটনাই অসন্তোষের আগুনে ঘি ঢেলে। রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহকারী সংস্থার ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে জনজীবন আগে থেকেই বিপর্যস্ত ছিল।
গ্রেপ্তারের ঘটনাকে ভিন্নমত দমনের চেষ্টা হিসেবে দেখে রাজপথে নেমে আসে সাধারণ মানুষ। 'জেন-জি মাডা' নামে তরুণদের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম দ্রুতই এই বিক্ষোভকে সংগঠিত করে। যা প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরে রাজধানী ছাড়িয়ে দ্বীপের আরও আটটি শহরে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, সরকার জনগণের মৌলিক অধিকার পূরণে ব্যর্থ এবং এর পেছনে রয়েছে ব্যাপক দুর্নীতি।
সরকারি পরিষেবার সংকট নিয়ে শুরু হলেও বিক্ষোভটি এখন পুরোপুরি রাজনৈতিক পরিবর্তনের দাবিতে রূপ নিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের সুনির্দিষ্ট কোনো ইশতেহার না থাকলেও তাদের মূল দাবি প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনার পদত্যাগ।