ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক: উপদেষ্টার নির্দেশনার পরদিনই তালাবদ্ধ অফিস, সরাইল-বিশ্বরোডে ১২ কর্মকর্তার কেউ নেই

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজট এখন নিত্যদিনের চিত্র। আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশ যাত্রীদের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ অবস্থায় গতকাল বুধবার (৮ অক্টোবর) বেহাল মহাসড়ক পরিদর্শন শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বেহাল অংশে চলমান মেরামত কাজ দ্রুত সময়ে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সড়ক ও জনপথের ১২ জন কর্মকর্তাকে সরাইল-বিশ্বরোড মোড়ে অস্থায়ী কার্যালয়ে (ক্যাম্প অফিস) সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেন।
তবে নির্দেশনার পরদিনই দেখা নেই কোনো কর্মকর্তার। এছাড়া, আজ বৃহস্পতিবারও (৯ অক্টোবর) সকাল থেকে সরাইল-বিশ্বরোড মোড়ে যানজট সৃষ্টি হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালে আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত প্রায় ৫১ কিলোমিটার সড়ক চারলেনের জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটির কাজ করছে ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এফকন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। নানা জটিলতায় ৫ বছরেও প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়নি। আশুগঞ্জ থেকে সরাইল-বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত অংশটুকু চারলেন মহাসড়ক প্রকল্পের আওতায় পড়েছে। ফলে এ অংশে সড়ক বিভাগের নিয়মিত সংস্কার কাজ করা যায়নি। এছাড়া, জুলাই অভ্যুত্থানের পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রাখায় সড়কটির অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়ে। বর্তমানে মহাসড়কটিতে সৃষ্ট ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের কারণে প্রতিনিয়ত দীর্ঘ যানজট তৈরি হচ্ছে। ১২ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিতে যানবাহনগুলোর সময় লাগে ৪-৬ ঘণ্টা। কোনো কোনো সময় আরও দীর্ঘ সময় সড়কে দুর্ভোগ পোহাতে হয় চালক ও যাত্রীদের।
সম্প্রতি আশুগঞ্জ গোলচত্বর ও সরাইল-বিশ্বরোড মোড়ের খানাখন্দ অস্থায়ীভাবে মেরামত কাজ শুরু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এই কাজ তদারকিতে ১২ সদস্যের কমিটিও গঠন করে দেয়া হয়েছে। এই কমিটিতে আছেন ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক, সড়ক ও জনপথের কুমিল্লা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, আশুগঞ্জ-আখাউড়া চারলেন মহাসড়ক প্রকল্পের পরিচালক, ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের অতিরিক্ত পরিচালক, আশুগঞ্জ-আখাউড়া চারলেন মহাসড়ক প্রকল্পের অতিরিক্ত পরিচালক, সড়ক ও জনপথের কুমিল্লা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথের মনিটরিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, আশুগঞ্জ-আখাউড়া চারলেন মহাসড়ক প্রকল্পের ব্যবস্থাপক (প্যাকেজ-২) এবং ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক (প্যাকেজ-৩)।
আরও পড়ুন: মহাসড়ক পরিদর্শনে গিয়ে যানজটে আটকা, গাড়ি ছেড়ে মোটরসাইকেলে উঠলেন উপদেষ্টা
এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান মহাসড়কটি পরিদর্শনে এসে নিজেও দুই ঘণ্টারও বেশি যানজটে আটকা পড়েন। পরে গাড়ি ছেড়ে কিছুক্ষণ পায়ে হাঁটার পর মোটরসাইকেলে করে সরাইল-বিশ্বরোড মোড়ে আসেন তিনি।
বেহাল মহাসড়ক পরিদর্শন শেষে সরাইল-বিশ্বরোড মোড়ে প্রকল্পের অস্থায়ী কার্যালয়ে সড়ক বিভাগ গঠিত ১২ সদস্যের কমিটির সবাইকে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, 'যানজটের মূল কারণ ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা। হাইওয়ে পুলিশের যে দায়িত্ব পালনের কথা সেটা পালন হচ্ছে না। যানবাহন ব্যবস্থাপনা আগে উন্নতি করতে হবে।'

তিনি বলেন, 'আমরা ১২ জনকে বলেছি এটাই তোমাদের ক্যাম্প অফিস (সরাইল-বিশ্বরোড)। ঢাকায় সড়ক ও জনপথের অফিসে যাওয়া লাগবে না। এখানে থেকে এই সমস্যাটার (সংস্কার ও যানজট) সমাধান করতে হবে। এখানে যদি কোনো কর্মকর্তাকে না পাওয়া যায় তাহলে সাথে সাথে তাকে বরখাস্ত করা হবে।'
তবে আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় সরেজমিন ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সরাইল-বিশ্বরোড মোড়ে করা অস্থায়ী কার্যালয়টি তালাবদ্ধ। কার্যালয়ের আশপাশেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বর্তমানে জাপানে অবস্থান করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আশুগঞ্জ-আখাউড়া চারলেন মহাসড়ক প্রকল্পের পরিচালক মো. আব্দুল আওয়াল মোল্লা বলেন, 'সরাইল-বিশ্বরোড মোড়ে এখন তেমন যানজট নেই। রামরাইলে আমাদের সাইড অফিস আছে। আমরা সবাই কাজে আছি। সবাই প্রকল্প এলাকাতেই আছি।'
তবে মহসড়কে যানজট আছে জানিয়ে খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'সকাল সাড়ে ১০টার দিকে যানজট সৃষ্টি হয়। সকালে সড়ক বিভাগের সংস্কার কাজ শুরুর পর যানজট লাগে। বিশ্বরোড মোড়ের দুই দিকে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় যানজট আছে। পুলিশ যানজট নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছে।'