পোস্টাল ব্যালট: প্রবাসী ভোটে খরচ গড়ে ৭০০ টাকা, নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে আসছে অ্যাপ
প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিদেশে বসেই ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। এজন্য নভেম্বরে চালু হতে যাচ্ছে 'পোস্টাল ভোট বিডি' অ্যাপ। পোস্টাল ব্যালটে এবার প্রতি ভোটে সরকারের খরচ হবে গড়ে ৭০০ টাকা।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
এসময় লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে অনলাইনে যুক্ত হয়ে ইসি বলেন, ''প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে আগামী নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে 'পোস্টাল ভোট বিডি' অ্যাপ চালু হতে যাচ্ছে।''
তিনি বলেন, 'পোস্টাল ব্যালটে এবার প্রতি ভোটে সরকারের খরচ হবে গড়ে ৭০০ টাকা। এর মধ্যে ৫০০ টাকা যাবে ডাকযোগে ব্যালট আনা-নেওয়ার খরচে, আর বাকি ২০০ টাকা অন্যান্য খাতে। ভোটের জন্য প্রবাসীদেরকে কোনো ধরনের চার্জ দিতে হবে না।'
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, 'প্রবাসীদের ভোটাধিকার কার্যকর করতে ব্যয়বহুল হলেও যৌক্তিক বিবেচনায় আমরা এবার আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং চালু করছি।'
বিশ্বব্যাপী অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে ইসি বলেন, 'প্রবাসীদের মধ্যে পোস্টাল ব্যালটে নিবন্ধনের হার মাত্র ২.৭%। নিবন্ধিতদের মধ্যেও ভোটদানকারীর হার ৩০ শতাংশের নিচে।'
ভারতের উদাহরণ টেনে ইসি জানান, সেখানে প্রায় চার কোটি প্রবাসীর মধ্যে ভোটের জন্য নিবন্ধন করেছিলেন মাত্র ১ লাখ ১৯ হাজার, কিন্তু ভোট দেন মাত্র ২ হাজার ৯০০ জন।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, '২০০৮ সাল থেকে আইনগতভাবে প্রবাসী ভোটের ব্যবস্থা থাকলেও ব্যালট পাঠানো-আনা এবং সময় সংকটের কারণে এতদিন একটি ভোটও প্রবাস থেকে কাস্ট করা যায়নি। প্রতীক বরাদ্দের পর ভোটের আগে মাত্র ৭-১০ দিন সময় থাকে। এই অল্প সময়ে প্রবাসে ব্যালট পাঠানো ও ফেরত আনা সম্ভব হয়নি।'
এই সমস্যা সমাধানে ইসির নেওয়া উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'এবার একটি হাইব্রিড সমাধান আনা হচ্ছে। যারা অনলাইনে নিবন্ধন করবেন, তাদের কাছে আগে থেকেই প্রতীক সম্বলিত ব্যালট পাঠানো হবে। প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর ভোটাররা মোবাইল অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে প্রার্থীর নাম ও প্রতীক দেখে ভোট দিতে পারবেন এবং ডাকযোগে খাম ফেরত পাঠাবেন।'
ইসি জানান, পোস্টাল ব্যালটের অন্যতম দুটি চ্যালেঞ্জ হলো— গোপনীয়তা রক্ষা- যাতে কোনো ভোটারকে প্রভাবিত করা না যায় এবং প্রার্থী তালিকার পরিবর্তন- শেষ মুহূর্তে আদালতের আদেশে প্রার্থী তালিকা পরিবর্তন হলে প্রবাসে প্রদত্ত সব ভোট বাতিল হয়ে যাবে।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, 'আমি এই উপপাদ্যগুলো তুলে ধরছি যাতে বুঝতে পারেন যে চ্যালেঞ্জটা কোন জায়গায়। আরেকটা চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পোস্টাল ব্যালটের; বিশেষ করে গ্লোবাল ওয়েস্টেজ রেট ২৪%। প্রতি চারটা পোস্টাল ব্যালটের একটা দেশে এসে পৌঁছায় না।'
এটা বিভিন্ন কারণে হয় উল্লেখ করে তিনি জানান, এরমধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে ইন্ডিভিজুয়াল ভোটার যখন ওসিবির জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন, যে ঠিকানাটা দেন সেই ঠিকানায় ডাকটা পৌঁছায় না। আবার অনেকে আছেন ডাক পৌঁছায়, কিন্তু আর সময়মতো ভোট দিয়ে পোস্ট করেন না। এই সময়মতো পোস্ট ফেরত না আসার কারণে এটা গণনার মধ্যে নেওয়া সম্ভব হয় না।'
তিনি বলেন, 'আউট অব কান্ট্রি ভোটিং রেজিস্ট্রেশন অ্যাপ নভেম্বরের দ্বিতীয় বা সর্বোচ্চ তৃতীয় সপ্তাহে উদ্বোধন করা হবে। তখন থেকে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে ভোটাররা নিবন্ধন করতে পারবেন।'
তিনি জানান, নিবন্ধনের জন্য প্রবাসীদের ৭ থেকে ১০ দিন সময় দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে তিনি জানান, এসব দেশেও পোস্টাল ভোট চালু করতে নানা সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। মালয়েশিয়ায় প্রায় ১৮ লাখ প্রবাসীর মধ্যে সর্বশেষ নির্বাচনে মাত্র ৫৪ হাজার নিবন্ধন করেছিলেন।
ইসি বলেন, 'আমাদেরকে এটা শুরু করতেই হবে। প্রত্যাশা সীমিত হলেও ধীরে ধীরে সবাই সম্পৃক্ত হবেন।'
নভেম্বরের শেষে অ্যাপ চালুর পর প্রবাসী ভোট নিয়ে সবার মাঝে প্রচারণা চালানোর আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে, আগামী ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণা এবং আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের পরিকল্পনার কথা জানায় ইসি।
