বন্ধ হলো বগুড়ার মধুবন সিনেপ্লেক্স

তিন কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিকায়নের চার বছর পর স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেল বগুড়ার মধুবন সিনেপ্লেক্স। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) থেকে আর চালু থাকবে না জনপ্রিয় এই প্রেক্ষাগৃহ।
মধুবন সিনেপ্লেক্সের স্বত্বাধিকারী রোকনুজ্জামান ইউনূস সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। একই ঘোষণা দেওয়া হয় 'মধুবন সিনেপ্লেক্স বগুড়া' নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকেও।
সেখানে বলা হয়, 'দীর্ঘদিন ধরে আপনাদের ভালোবাসা ও সমর্থনে মধুবন সিনেপ্লেক্স ছিল বিনোদনের ঠিকানা। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে জানাতে হচ্ছে, দর্শক চাহিদা অনুযায়ী ভালো সিনেমার অভাব এবং সরকারের অনীহার কারণে সামান্য দর্শক নিয়ে হল চালানো সম্ভব হচ্ছে না।'
ঘোষণায় আরও বলা হয়, 'অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীদের বেতন, পর্যাপ্ত দর্শকের অভাবসহ নানা কারণে আমরা আমাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছি। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টের, কারণ সিনেমা হল কেবল ব্যবসা নয়—এটি আমাদের সংস্কৃতি, আবেগ ও একসঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগির স্থান।'
রোকনুজ্জামান ইউনূস বলেন, এখন হলে খরচ তোলা সম্ভব হচ্ছে না। 'তাণ্ডব' সিনেমার পর আর কোনো ব্যবসা সফল সিনেমা আসেনি। অনেক ছবি মুক্তি পেলেও দর্শকের সাড়া মেলেনি। লোকসান দিয়ে আর সিনেপ্লেক্স চালানো যাচ্ছে না।
কয়েক বছর আগেও বগুড়ায় সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ৩৮টি। গত ১০ বছরে ৩১টি হল ভেঙে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে কাগজে-কলমে সাতটি সিনেমা হল থাকলেও একটিও চালু নেই।
এই চরম দুর্দিনে, ২০২১ সালে বগুড়ার প্রথম সিনেপ্লেক্স হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল মধুবন। তখন রোকনুজ্জামান ইউনূস রুবেল বলেছিলেন, 'অনেক আশা নিয়ে তিন কোটির বেশি বিনিয়োগ করেছি। ভালো সিনেমা এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখবে।'
সিনেপ্লেক্স হওয়ার গল্প
বগুড়া শহরের চেলোপাড়া এলাকায় ১৯৬৯ সালে মধুবন সিনেমা হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রোকনুজ্জামান ইউনূসের বাবা, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এম ইউনূস। নানা জটিলতায় বিলম্ব হলেও ১৯৭৪ সালের ১০ অক্টোবর ৮৮৭ আসন নিয়ে 'মধুবন' হল উদ্বোধন হয় 'ডাকু সুলতান' ছবি দিয়ে।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে 'ঢাকা অ্যাটাক' প্রদর্শনের পর দর্শক কমে যাওয়ায় হলটি বন্ধ করে সংস্কার কাজ শুরু করা হয়। এরপর হলটিকে আধুনিক এক স্ক্রিনের সিনেপ্লেক্সে রূপান্তর করা হয়। আসন সংখ্যা রাখা হয় ৪৩০টি। দিনমজুর শ্রেণির জন্য টিকিট ছিল ৮০-১০০ টাকা, শিক্ষার্থীদের জন্য ১৫০ টাকা এবং উন্নতমানের আসনে ৩০০ টাকা।
হলে ছিল নিজস্ব মেশিন, ই-টিকিটিং ব্যবস্থা, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ, পার্কিং সুবিধা ও ফুডকোর্ট। বেলজিয়াম থেকে আনা হয় প্রজেকশন মেশিন, আমেরিকা থেকে সাউন্ড সিস্টেম ও মুম্বাই থেকে 'গ্যালালাইট মেটাল কোডেড' পর্দা।
২০২১ সালের ১৫ অক্টোবর নতুন করে চালু হয় প্রেক্ষাগৃহটি।
আয়নাবাজি' বদলে দেয় সবকিছু
রোকনুজ্জামান ইউনূস জানান, ২০১৫ সালে শাকিব খানের 'লাভ ম্যারেজ' মুক্তির সময় ভাঙা চেয়ার, ছারপোকার কামড়, গরমের মধ্যেও দর্শক হলভর্তি করেন। ২০১৬ সালে 'আয়নাবাজি' প্রদর্শনের সময় শিক্ষিত শ্রেণির দর্শকের ঢল নামে। নোংরা পরিবেশেও দর্শকদের আগ্রহ দেখে হল কর্তৃপক্ষ বিস্মিত হয়।
এই অভিজ্ঞতা থেকে দর্শকের চাহিদা বুঝে সিনেপ্লেক্স তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, 'আয়নাবাজি প্রমাণ করে শহরের শিক্ষিত তরুণরা হলে আসতে চায়।' সেই সময় দর্শকদের সঙ্গে কথা বলে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা হয়।
এরপর সিনেপ্লেক্স নির্মাণে আগ্রহী হয়ে ওঠে কর্তৃপক্ষ। বেলজিয়াম থেকে আনা হয় প্রজেকশন মেশিন, আমেরিকা থেকে সাউন্ড সিস্টেম এবং মুম্বাই থেকে 'গ্যালালাইট মেটাল কোডেড' পর্দা। সিনেপ্লেক্স এলাকায় ছিল শীততাপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ, দর্শকদের জন্য পার্কিং সুবিধা এবং একটি ফুডকোর্ট।
২০২১ সালের ১৫ অক্টোবর নতুন রূপে প্রথম শো চালু করা হয়। নানা প্রতিকূলতার কারণে আজ থেকে প্রেক্ষাগৃহটির পর্দা নামল।