বগুড়ায় ‘প্রাইভেট পুন্ড্র ইকোনমিক জোন’ গড়ার উদ্যোগ
 
বগুড়ায় বেসরকারি উদ্যোগে অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে চায় ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস) ও তার অঙ্গ সংগঠন বিল্ডিং কনসট্রাকশন লিমিটেড (বিসিএল)। 'প্রাইভেট পুন্ড্র ইকোনমিক জোন' নামে এই শিল্পাঞ্চল করতে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের পাশে করতোয়া নদীর অববাহিকায় অবকাঠামো গড়ে তুলেছে প্রতিষ্ঠান দুটি।
সংস্থা দুটির প্রতিনিধি জানান, এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। কর্মসংস্থান হবে অন্তত ৪ হাজার মানুষের।
জানা যায়, প্রস্তাবিত এই প্রকল্প অনুমোদনের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৭ নভেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দল প্রস্তাবিত এলাকা পরিদর্শন করেন।
'প্রাইভেট পুন্ড্র ইকোনমিক জোন' অঞ্চল কর্তৃপক্ষ জানায়, বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন। ইতোমধ্যে এখানে বিসিএল গ্লাস ইন্ডাট্রিজ প্রতিষ্ঠার কাজ শেষ প্রায় হয়েছে। গ্যাস সংযোগ উৎপাদনে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে তাদের।
অর্থনৈতিক জোনের উদ্যোক্তা টিএমএসএস ও বিসিএলের তথ্যমতে, উত্তরাঞ্চলে বড় কোনো শিল্পাঞ্চল নেই, কিন্তু অনেক কিছু করা সম্ভব। বগুড়া এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র।
এখানে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, ভেষজ তেল উৎপাদন, ফিডমিল ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প, সিরামিক শিল্প, মাছের ফিড কারখানা, কীটনাশক, প্যাকেজিংসহ নানা ধরনের শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। এই শিল্প কারাখানা প্রতিষ্ঠা হলে অনেক প্রতিষ্ঠান এখানে কারখানা করার সুযোগ পাবে।
প্রাইভেট পুন্ড্র ইকোনমিক জোনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রাথমিকভাবে প্রয়োজন ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি নেসকো চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ দিতে প্রস্তুত। এখানে শিল্পায়ন দ্রুত করতে হলে দরকার গ্যাস। এই বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্য আলোচনা চলছে।
টিএমএসএসের প্রধান প্রকৌশলী ও পরিচালক প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান জানান, ২০২১ সালে দখল আর দূষণে মৃত প্রায় করতোয়া নদীর পাশে ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়কের পাশে বগুড়ার গোকুল এলাকায় প্রায় ৪০০ বিঘা জমির নিয়ে উত্তরাঞ্চলের প্রথম এ বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়। এই প্রকল্পে আরও ১০০ বিঘা জমি যুক্ত করা হবে।
শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখানে পর্যাপ্ত শ্রম সুবিধা, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সুবিধা, স্বল্পমূল্যে শিল্প অবকাঠামো গড়ে তোলার মতো জায়গার সহজ লভ্যতা, সেই সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় বেসরকারি খাতের অনেকে আগ্রহী হবেন।
বগুড়ার দ্বিতীয় বাইপাস সড়কের পাশে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত পণ্যের কারখানা ও গোডাউন স্থাপন করেছে। এতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
জেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও নারী উদ্যোক্তা তাহমিনা পারভীন শ্যামলী বলেন, শিল্পাঞ্চল হলে এই এলাকার অর্থনীতির গতি আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে এবং একই সাথে এই অঞ্চলে ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
পুন্ড্র ইকোনোমিক জোনের কাছেই আবাসন সুবিধা, কারিগরি শিক্ষার সাথে উচ্চ শিক্ষার জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল রয়েছে।
অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষের আশা, অনুমোদন মিললে এখানে দেশের সব অঞ্চলসহ বিদেশি বড় বড় বিনিয়োগকারী তাদের প্রতিষ্ঠান গড়বে। তৈরি হবে উদ্যোক্তা। শিল্পাঞ্চল তৈরি হলে আমদানি নির্ভরতা কমবে। বাড়বে রপ্তানি আয়।
গ্যাস, বিদ্যুৎ ও ভালো সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার ট্যানারি, রড-সিমেন্ট, মোটরবাইক ও গাড়ি তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠার সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবু মোত্তালেব মনিক বলেন, 'শিল্পনগরী বগুড়ায় অর্থনৈতিক জোন খুবই দরকার। অর্থনৈতিক জোন হলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, এই অঞ্চলের কৃষি কিংবা শিল্প খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। বৃদ্ধি পাবে স্থানীয় মানুষদের আয়। এই জোনের মাধ্যমে প্রাইভেট ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা সম্ভব হবে। এতে জেলা ও অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও বেগবান করবে।'
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারি বা বেসরকারি অর্থনৈতিক জোন রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এতে বস্ত্র, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, হালকা ওষুধ বা হ্যান্ডিক্রাফ্ট ইত্যাদির রপ্তানি বাড়াতে সাহায্য করবে। অর্থনৈতিক জোনের কারণে রাস্তা, বিদ্যুৎ, পানি ও অন্যান্য সুবিধা উন্নত হবে। এর ফলে আঞ্চলিক অবকাঠামোর সমন্বয় ও উন্নয়নে সহায়ক হবে।
বিসিক কর্মকর্তারাদের তথ্যমতে, শিল্পের শহর বগুড়ায় হালকা প্রকৌশল শিল্পর প্রায় দেড় হাজার কারখানা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে মাত্র ৬৪ টি কারখানা বিসিকের মধ্যে। বাকিগুলো শহরজুড়ে। এসব কারখানাগুলো নির্বিচারে দূষণ ছড়াচ্ছে।
বিসিক কর্মকর্তারাও শিল্প কারখানাগুলোকে শহরের বাহিরে কোনো এক জায়গায় স্থানান্তরের কথা বলছেন দীর্ঘদিন ধরে।
বগুড়ায় দেশীয় যন্ত্রাংশের বাজার প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার। কিন্তু কারখানাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এগুলো এক ছাতার নিচে নিয়ে আসা গেলে শহরের পরিবেশ ঠিক হবে।
একইসঙ্গে এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে সেখানেও কিছু কারখানা স্থানান্তর হওয়ার সুযোগ আছে।
বগুড়ায় প্রাইভেট ইকোনমিক জোনের গুরুত্ব উল্লেখ করে টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা বেগম বলেন, বর্তমান বর্জুয়া প্রাধান্য দুনিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ একটি ভৌগলিকভাবে ছোট বর্ধনশীল দেশ। এই দেশের পরিকল্পিত উন্নয়ন, উলম্ব উন্নয়ন সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত আছে। বিগত সরকার বিভিন্ন জেলায় ইকোনমিক জোন সৃষ্টি করে প্রয়োজনীয় বহুমুখী সাপোর্ট, গ্যাস, বিদ্যুৎ, নীতিসহায়তার প্রাচুর্যতা বৈশিষ্যপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, আমরা একটি নৈতিক, আদর্শিক গণমানুষের সংস্থা। টিএমএসএস শুধুমাত্র নিজের কল্যাণে নয়, সমাজ, জাতি এবং মানবতার কল্যাণে কাজ করার উদ্দেশ্যে পুন্ড্র ইকোনমিক জোন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা আশাবাদী, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ উৎসাহী হবেন।

 
             
 
 
 
 
