জাকসু নির্বাচন: ভোটগ্রহণ চলছে ডোপ টেস্টের ফলাফল ছাড়াই; পোলিং এজেন্ট জটিলতার অভিযোগ প্রার্থীদের

প্রায় তিন দশক পর ফের অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া ভোট চলবে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
দীর্ঘ বিরতির পর নির্বাচনকে ঘিরে পুরো ক্যাম্পাসে তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এই নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদে লড়ছেন ১৭৭ প্রার্থী। এর মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯ জন এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে আছেন ৮ জন। আগে ১৪টি পদ থাকলেও গঠনতন্ত্র সংশোধন করে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৫টি। এর মধ্যে ছাত্রীদের জন্য রাখা হয়েছে ৬টি সংরক্ষিত পদ, যাতে নেতৃত্বে তাদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ে।

ভোটে অংশ নিচ্ছে ক্যাম্পাসের সক্রিয় প্রায় সব সংগঠন। নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনীকে রাখা হয়েছে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি এক ব্রিফিং-এ জানিয়েছেন, নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ, আনসার, বিজিবি ও সেনাসহ সব বাহিনীই মাঠে থাকবে। প্রয়োজনে সেনারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে দায়িত্ব পালন করবে।
ভোট গণনায় ব্যবহার করা হবে ওএমআর মেশিন। ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে সিনেট হলে বড় পর্দায় প্রদর্শিত হবে। প্রতি ঘণ্টায় ক্যাম্পাসজুড়ে আপডেট জানানো হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও জনসংযোগ দপ্তরের ফেসবুক পেজেও ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
পোলিং এজেন্ট নিয়ে জটিলতা
জাকসু নির্বাচনে কয়েকটি ভোট কেন্দ্রে প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দেয়া নিয়ে জটিলতার অভিযোগ তুলেছেন প্রার্থীরা।
তবে পোলিং এজেন্টকে ঢুকতে না দেওয়া ও সার্বিক বিষয়ে হলের পোলিং অফিসাররা জানান, গতকাল রাতে ভোট কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট নিয়োগের বিষয়টি জানানো হয়। তবে সবার কাছে দেরিতে তথ্য পৌঁছানোর কারণে এই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, কয়েকটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ দেরিতে শুরু হয়েছে। সকাল বেলা ভোটকেন্দ্রগুলোতে সরেজমিনে দেখা যায়, কাজী নজরুল ইসলাম হলসহ কয়েকটি হলে ১০ থেকে ৩০ মিনিট দেরীতে ভোট গ্রহণ শুরু হয়।
এসব কেন্দ্রের দায়িত্বরত পোলিং অফিসার জানান, মূলত সার্বিক প্রস্তুতি, পোলিং এজেন্ট জটিলতায় নির্বাচনে ভোট বিলম্ব হয়৷
ভোটকেন্দ্রে পোস্টার বিলির অভিযোগ
এদিকে, ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্রে পোস্টার বিলির অভিযোগ এনেছেন 'শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম' প্যানালের জিএস পদপ্রার্থী তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম।
আজ ২১ নং হলের সামনে তিনি এমন অভিযোগের কথা জানিয়ে দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডকে বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনী প্রচারণার সময় শেষ হলেও আজকেও শিবির কর্মীদের বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার বিলি করতে দেখা গিয়েছে যা নির্বাচনী আচরণবিধি বহিভূর্ত।'
অন্যদিকে অভিযোগের বিপরীতে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী মাজহার বলেন, 'যারা আগ্রহী হয়েছেন একমাত্র তাদের নির্বাচনে প্যানেল পরিচিতি দরকার। প্রশাসন আমাদের গতকালকে জানিয়েছিলেন নির্বাচনে প্যানেল পরিচিতি স্মরণ রাখার জন্য চাইলেই ভোট কেন্দ্রে কেউ চিরকুট ব্যবহার করতে পারবেন৷
বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্টের ফলাফল ছাড়াই ভোট গ্রহণ
জাকসু নির্বাচনে বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্টের কথা বলা হলেও, ফলাফল ছাড়াই ভোট গ্রহণ চলছে।
এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থীর জন্য ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করে ৯ সেপ্টেম্বর ডোপ টেস্টের নমুনা সংগ্রহের জন্য আহ্বান করে জাকসু নির্বাচন কমিশন।
তবে নির্বাচন শুরু হলেও ডোপ টেস্টের ফলাফল ঘোষণা করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন।

এ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশন ড.মনিরুজ্জামানকে আগের দিন রাতে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আজকে কিছু ডোপ টেস্টিং বাকি ছিলো তাদের সহ আমরা দ্রুতই ডোপ টেস্ট এর ফলাফল ঘোষণা করবো। আমাদের সময় সীমাবদ্ধতার কারণে এই পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয়েছে৷ তবে কোড ও কন্ডাক্ট অনুযায়ী কেউ যদি ড্যাগ এডিক্ট ধরা পড়েন তাহলে অবশ্যই তাদের প্রার্থীতা বাতিল।'
তবে নির্বাচনে ডোপ টেস্টে ফলাফল প্রকাশ না করতে পারলে কমিশনের পদক্ষেপের কথা বললে তিনি জানান, 'সেক্ষেত্রে নির্বাচনের পরবর্তীতে অভিযোগের প্রেক্ষিতে কেউ যদি অভিযোগ আনেন এবং তা প্রমাণিত হয় তবে তার প্রার্থীতা বাতিল হবে৷'
অন্যদিকে নির্বাচনের দিনে ডোপ টেস্ট নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি৷
ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ভোট স্থগিত
ঢাকার বঙ্গবন্ধু বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে অনিয়মের অভিযোগে দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। ফলে তারা ভবনের প্রধান ফটকের সামনে অপেক্ষা করছেন।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে সেনা সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হলে পৌঁছেছে।

তাজউদ্দিন হলে এক ঘণ্টা বন্ধ ছিল ভোট গ্রহণ
শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ হলে দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটের দিকে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।
প্রথমে ভোটার তালিকায় ছবি না থাকায় এ প্রশ্ন ওঠে—প্রকৃত ভোটার ভোট দিচ্ছেন, নাকি অন্য কেউ তার হয়ে ভোট দিচ্ছেন।
এরপর প্রায় এক ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে ছবিসহ ভোটার তালিকা পৌঁছালে আবার ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
হল প্রভোস্ট লুৎফুল এলাহী এ বিষয়ে বলেন, 'আশা করি সমস্যার সমাধান হয়েছে। ছবিসহ একটি ভোটার তালিকা এসেছে। যারা ভোট দিয়েছেন, তারা ওই তালিকায় স্বাক্ষর করেছেন। কেউ পুনরায় ভোট দিতে এলে শনাক্ত করা যাবে।'
একজন শিক্ষার্থী জানান, ছবিহীন তালিকার ভিত্তিতে ১৫৯ জনের ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে আসলে কে ভোট দিয়েছেন বা অন্য কেউ হয়ে ভোট দিয়েছে কি না, তা যাচাই করার উপায় নেই। শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে ভোট স্থগিত করা হয়।
ভোটার তালিকার পরিবর্তে যাচাইয়ের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছিল হল কর্তৃপক্ষের দেওয়া অস্থায়ী ইনডেক্স কার্ড, যেখানে ছবি সংযুক্ত ছিল।
ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুরুল আজিজ অভিযোগ করে বলেন, 'সব ভোটারের আঙুলে অমোচনীয় কালি লাগানো হয়নি। এতে ভোট কারচুপির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।'
তাজউদ্দিন হলের শিক্ষার্থীরা স্পষ্টভাবে জানতে চান, কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না।