যশোরে বিএনপি নেতা ও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীকে বালুতে পুঁতে ৪ কোটি টাকা আদায়ের অভিযোগ

যশোরের অভয়নগরে বিএনপির সাবেক এক স্থানীয় নেতা ও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এক ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বুকসমান বালুতে পুঁতে রেখে দুই দফায় চার কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ব্যবসায়ীর স্ত্রী অভয়নগর সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর টিপু নওয়াপাড়ার জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী। অন্যদিকে অভিযুক্তরা হলেন, অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনি ও নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন।
গত ৩১ জুলাই এ ঘটনায় অভয়নগর সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর স্ত্রী মোছা. আসমা খাতুন।
অভিযোগে তিনি বলেছেন, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় টিপুকে কৌশলে নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনির অফিসে ডেকে নিয়ে যান সৈকত হোসেন হিরা নামের এক ব্যক্তি। পরে তাকে মারধর ও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জনি দুই কোটি টাকা দাবি করেন। তখন টিপুর স্ত্রী সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে জনির নিজ প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে দুই কোটি টাকা পাঠান। টাকা পেয়ে টিপুকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তিনি আরো জানান, এরপর গত ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে টিপু গ্রামের বাড়ি চলিশিয়া থেকে মোটরসাইকেলে বাজারে যাওয়ার পথে সৈকত তার পথরোধ করেন। এরপর বেলা ৩টা পর্যন্ত টিপুর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে জানতে পারেন তাকে বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান জনির কনা ইকো পার্কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরপর টিপুর স্ত্রী সেখানে গেলে আসাদুজ্জামান জনি, সম্রাট হোসেন ও নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে তার ওপর হামলা চালান।

এরপর শাহনেওয়াজের বুক পর্যন্ত গর্ত করে বালু চাপা দিয়ে তার কাছে আরো দুই কোটি টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ করেন আসমা। এ সময় টিপু বাধ্য হয়ে তার ম্যানেজারকে ফোন করে টাকা দিতে বলেন। এরপর ম্যানেজার সাংবাদিক মফিজের অ্যাকাউন্টে পুবালী ব্যাংক থেকে ৬৮ লাখ ও সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে ৩২ লাখ টাকা পাঠান।

এ সময় মফিজ আরও এক কোটি টাকার চেক আদায় করেন। পাশাপাশি জনির নামে ক্রয়কৃত তিনটি ও দিলিপ শাহার নামে ক্রয়কৃত তিনটি ১০০ টাকার ফাঁকা স্টাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। এরপর কাউকে কিছু বললে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
অভিযোগের বিষয় জানতে অভিযুক্ত আসাদুজ্জামান জনি ও মফিজ উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও তাদের নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।

তবে জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, 'সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে জনির বিরুদ্ধে আগেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সে এখন আমাদের কেউ না। ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা আদায় সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা নেই। তার কর্মকাণ্ডের দায় আমাদের দল নেবে না।'
এ বিষয়ে অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলিম জানান, একটি মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। তবে আপনি ব্যবসায়ী টিপুর স্ত্রীকে বলেন থানায় অভিযোগ দিতে। অভিযোগটি গ্রহণ করে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।