আধুনিক ইতিহাসে এই প্রথম কোনো রাজধানী শহর পানিশূন্য হওয়ার দ্বারপ্রান্তে

শুষ্ক পাহাড় ঘেরা শহর কাবুলে সূর্য উঠতেই শুরু হয় রাহিলাদের পানির জন্য প্রতিদিনের যুদ্ধ।
রাজধানীর একটি পাড়ায় জলবাহী ট্যাংকারের শব্দ শোনামাত্রই ৪২ বছর বয়সী রাহিলা রাস্তায় দৌড়ান হাতে পুরনো বালতি আর জেরিকেন নিয়ে। চার সন্তানের এই মা জানান, তার পরিবারের পানি সবসময়ই ফুরিয়ে আসে, আর প্রতিটি লিটার পানির দাম এতটাই বেশি যে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে।
'খাবার পানির কোনো ব্যবস্থা নেই,' বলেন রাহিলা, 'পানি সংকট আমাদের প্রতিদিনের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।'
বিপর্যয়ের দোরগোড়ায় কাবুল। আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা মার্সি কর্পসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, পানির সংকট এভাবে চলতে থাকলে কাবুল হতে পারে বিশ্বের প্রথম আধুনিক রাজধানী, যেখানে সম্পূর্ণভাবে পানি ফুরিয়ে যাবে। সংস্থাটির মতে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে তা শহরটিকে অর্থনৈতিক পতনের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং লাগাতার অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে পানির স্তর নেমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। শহরের প্রায় অর্ধেক কুয়া ইতিমধ্যেই শুকিয়ে গেছে।
রাহিলার পরিবারকে প্রতিটি ফোঁটা পানির জন্য টাকা গুনতে হয়। প্রতিদিনের ব্যবহারে থাকতে হয় চরম সতর্ক। শুধু পানি কিনতেই কাটছাঁট করতে হচ্ছে খাবারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসে।
'আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন,' বলেন রাহিলা। 'বৃষ্টি হলে হয়তো কিছুটা রেহাই মিলবে, কিন্তু পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে কীভাবে বাঁচব, জানি না।'
মার্সি কর্পসের আফগানিস্তান প্রোগ্রামের পরিচালক মারিয়ান্না ফন জান সতর্ক করে বলেন, 'এটি শুধু পানির সংকট নয়। এটি একযোগে একটি স্বাস্থ্য সংকট, অর্থনৈতিক সংকট এবং মানবিক জরুরি অবস্থা।'
মাত্র তিন দশক আগেও কাবুলের জনসংখ্যা ছিল ২০ লাখের নিচে। তবে ২০০১ সালে তালেবান সরকারের পতনের পর নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার আশায় শহরে বিপুল মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করে।

জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পানির চাহিদাও।
কাবুলের পানির উৎস প্রায় সম্পূর্ণভাবেই নির্ভর করে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর, যা হিন্দুকুশ পর্বতমালা থেকে বরফ ও হিমবাহ গলে আসা পানির মাধ্যমে পূরণ হয়।
কিন্তু বছরের পর বছর অব্যবস্থাপনা ও অতিরিক্ত উত্তোলনের ফলে গত এক দশকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৩০ মিটার পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে বলে জানিয়েছে মার্সি কর্পস।
মার্সি কর্পসের তথ্য অনুযায়ী, প্রাকৃতিকভাবে পুনরায় যে পরিমাণ পানি সরবরাহ সম্ভব, কাবুল তার চেয়ে বছরে প্রায় ৪৪ মিলিয়ন ঘনমিটার বেশি ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করছে। এই বিশাল অসমতা শহরের পানি ভান্ডার যেমন শুষে নিচ্ছে, তেমনি নিঃশেষ করে দিচ্ছে বাসিন্দাদের অর্থনৈতিক সঞ্চয়ও।