আগামীকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কারফিউ বহাল থাকবে

গোপালগঞ্জে জেলায় চলমান কারফিউ আগামীকাল (১৯ জুলাই) সকাল ৬টা পর্যন্ত বহাল থাকবে।
আজ (১৮ জুলাই) গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ কামরুজ্জামান এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই ঘোষণা দিয়েছেন।
গত বুধবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পূর্বঘোষিত 'মার্চ টু গোপালগঞ্জ' কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষের পর ওই রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছিল। এরপর গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
তবে শুক্রবার বেলা ১১ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত ৭ ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল হওয়ার পর গোপালগঞ্জ শহরে কিছুটা প্রাণের সঞ্চার হয়। বাড়ে যানবাহন চলাচল ও লোকজনের উপস্থিতি। স্বল্প সংখ্যক দোকানপাট খুলেছে, চলেছে কিছু বেচাকেনা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ওই হামলা চালায়। এতে সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজনের মৃত্যু হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রমজান মুন্সি (৩৫) নামে এক রিকশাচালক গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ৫ জনে।
এদিকে গোপালগঞ্জ শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত লঞ্চঘাট সংলগ্ন রাস্তায়, চৌরঙ্গীতে স্বল্প সংখ্যক ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও টেম্পু (মাহিন্দ্র) চলছে। সড়কে রয়েছে প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল। জরুরি দরকারে বিভিন্ন গন্তব্যে গেছেন মানুষ। মূল সড়কের পাশের ও গলির ভেতর বেশ কিছু দোকান খুলেছে। তবে মার্কেট বন্ধ রয়েছে এবং বাজারের বেশিরভাগ দোকান খোলেনি।
এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে ফল-সবজির মতো কাঁচা পণ্যের ব্যবসায়ীরা পড়েছেন মহাবিপাকে। দোকান বন্ধ থাকায় তাদের পণ্য পচে যাচ্ছে।
শহরের বড় বাজারের ফল ব্যবসায়ী বিল্লাল খান বলেন, 'কারফিউয়ে দোকান খুলতে না পারায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছি। তিন দিনে হাজার হাজার টাকার ফল পচে গেছে। আজ সাত ঘণ্টার জন্য দোকান খুলেছি। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে তেমন একটা বিক্রি হয়নি। বাকি ফলগুলোও পচে যাবে। আমরা চাই, দ্রুত পরিস্থিতি সাভাবিক হয়ে আসুক।'
শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্কতার সঙ্গে টহল ও অবস্থান করতে দেখা গেছে।
ফের কারফিউ শুরুর পর দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। শহরে যান চলাচল কমেছে। শহরের অলিতে গলিতে মানুষের চলাচল সীমিত হয়ে এসেছে।
গোপালগঞ্জের সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫
গোপালগঞ্জ শহরের লঞ্চ ঘাট এলাকায় গুলিবিদ্ধ রমজান মুন্সী (৩৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। এ নিয়ে মৃতের সংখা বেড়ে দাড়িয়েছে পাঁচ জনে।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ২ টার দিকে তিনি মারা যান। রমজান মুন্সির ভাই জামাল মুন্সি তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রমজান মুন্সি পৌরসভার থানাপাড়ার ৬ নং ওয়ার্ডের মৃত আকবর আলী মুন্সির ছেলে।
নিহত রমজান মুন্সির ভাই জামাল মুন্সি জানান, তার ভাই রিকশা চালাতো। বুধবারের সংঘর্ষের সময় সে এক যাত্রীকে পৌঁছে দিতে রিকশা নিয়ে লঞ্চ ঘাট এলাকায় যান। তখন সংঘর্ষের মধ্যে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এইচ খান মঞ্জুর বাসভবনের পাশের গলিতে ঢুকে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়|
রমজান কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেন জামাল মুন্সি।
তিনি তার ভাইয়ের হত্যার বিচার দাবি করেন।
জামাল আরও বলেন, পোস্টমর্টেম শেষে লাশ গোপালগঞ্জে আনা হবে।
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ও সমাবেশকে ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় এ নিয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হলো। এর আগে গত বুধবার ঘটনার দিনই চারজন নিহত হন।
তারা হলেন- মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশের দোকানি সোহেল মোল্লা (৩৫), পোশাক ব্যবসায়ী দীপ্ত সাহা (২৫), ক্রোকারিজ পণ্যের দোকানের কর্মচারী ইমন তালুকদার (১৭) ও টাইলস মিস্ত্রির সহকারী রমজান কাজী (১৮)। পরবর্তীতে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যু হওয়া রমজান মুন্সি (৩৫) রিকশাচালক।
গোপালগঞ্জ আড়াইশ' শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক ডা. জীবিতেষ বিশ্বাস বলেন,'গুলিবিদ্ধ হয়ে রমজান মুন্সি বুধবার বিকেলে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসেন। তার অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। তাই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওইদিন রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গোপালগঞ্জে পুলিশের গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় মামলা
গোপালগঞ্জে পুলিশের ওপর হামলা, মারপিট গাড়ি পোড়ানো ও এক পুলিশ পরিদর্শক সহ ৫ পুলিশকে মারপিট করে আহত করার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) গভীর রাতে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আহম্মেদ আলী বাদী হয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা,সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ালসহ ৭৫ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ৪৫০-৫০০ জনকে আসামি করে এ মামলা দায়ের করেন।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান আজ শুক্রবার বিকালে মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওসি জানান, গত বুধবার (১৬ জুলাই) সকালে এনসিপির পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট আঞ্চলিক সড়কের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুরের পাশে খাটিয়া গড় চরপাড়ায় পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল।
তিনি জানান, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ালের নেতৃত্বে একদল লোক অতর্কিতে কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলা করে। তারপর তারা গোপীনাথপুর পুলিশ ফাড়ির পরিদর্শক আহম্মেদ আলী বিশ্বাসসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যকে মারপিট করে আহত করে এবং গাড়ি ভাঙচুরের পর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
কারফিউয়ের মধ্যে গোপালগঞ্জে আটক ১৬৪
কারফিউয়ের মধ্যে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে ১৬৪ জনকে আটক করেছে। এরমধ্যে মুকসুদপুর থানায় ৬৬ জন, গোপালগঞ্জ সদর থানায় ৪৫ জন, কাশিয়ানী থানায় ২৪ জন, টুঙ্গিপাড়া থানায় ১৭ জন এবং কোটালীপাড়া থানায় ১২ জনকে আটক করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান, মুকসুদপুর থানার ওসি মোস্তফা কামাল, কাশিয়ানী থানার ওসি কামাল হোসেন, কোটালীপাড়া থানার ওসি মো. আবুল কালাম আজাদ এবং টুঙ্গিপাড়া থানার ওসি খোরশেদ আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।