মশার আকারের গুপ্তচর ড্রোন বানাল চীন, সামরিক বিশেষজ্ঞদের আগ্রহ

দেখতে ঠিক মশার মতোই ছোট, তবে এটি মশা নয়। পাতলা ডানা, তারের মতো পা, আর আকারে মানুষের নখের চেয়েও ক্ষুদ্র—এই 'মশা' আসলে চীনের তৈরি সামরিক গুপ্তচর ড্রোন।
গত মাসে চীনের জাতীয় প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষভাবে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য এই মশার আকৃতির ক্ষুদ্র ড্রোনটি তৈরি ও উন্মোচন করে।
'মাইক্রো ড্রোন' নামে পরিচিত এই ড্রোনটি গোপন নজরদারির কাজে ব্যবহৃত হবে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সামরিক সম্প্রচার চ্যানেল সিসিটিভি সেভেন-এর একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে আসে এই ড্রোনটি।
ড্রোনটি আকারে ছোট হলেও গোপন নজরদারি এবং সামরিক অভিযানে ব্যবহারের জন্য উপযোগী বলে চীন দাবি করেছে।
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষুদ্র আকারের কারণে সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও পর্যবেক্ষণ ও নজরদারিতে এটি কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও সহযোগিতা কেন্দ্রের গবেষক হার্ব লিন বলেন, ভবনের ভিতরে নজরদারির ক্ষেত্রে এই ড্রোন কার্যকর হতে পারে।
তিনি জানান,'ভিডিও পর্যবেক্ষণের জন্য, বিশেষ করে ভবনের ভেতরে ব্যবহার করলে এটি কাজে লাগবে।'
তবে এর আকার ও শক্তির সীমাবদ্ধতার কারণে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে বলেও উল্লেখ করেন লিন।
'যদি এটি প্রচলিত ব্যাটারিতে চলে, তাহলে দীর্ঘ সময় উড়তে পারবে না,' তিনি বলেন। 'এছাড়া খুব হালকা হওয়ায় বাতাসের ঝাপটায় সহজেই নড়ে যেতে পারে, ফলে বিস্তৃত এলাকায় নজরদারির জন্য উপযোগী নয়।'
তবে ছোট আকারের ড্রোন নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর ওপর নজরদারিতে কার্যকর হলেও এর ব্যবহারিক সক্ষমতা এখনও নিশ্চিত নয়।
ধারণা করা হচ্ছে, ড্রোন পরিচালনার বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে আবহাওয়ার প্রভাব। বাতাস, বৃষ্টি, তুষার, ঠান্ডা কিংবা কুয়াশার মতো পরিবেশে ড্রোন সহজেই প্রভাবিত হতে পারে।
মার্কিন 'সেন্টার ফর নেভাল অ্যানালাইসিস'-এর উপদেষ্টা ও ড্রোন বিশেষজ্ঞ স্যামুয়েল বেনডেট বলেন, 'ড্রোন যত ছোট হবে, পরিবেশগত প্রতিক্রিয়ার প্রতি তার সংবেদনশীলতাও তত বেশি হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'ঘরের ভিতরেও হালকা বাতাস, এসির হাওয়া, খোলা জানালা বা সামান্য প্রতিবন্ধকতা ড্রোনটির কার্যক্ষমতায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে।'
ড্রোনটির আকার খুবই ছোট হওয়ায় এতে উন্নত ধরনের যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি যুক্ত করা কঠিন বলেও জানান তিনি।
'প্রযুক্তিগতভাবে এ ধরনের ছোট ড্রোন তৈরি সম্ভব,' বলেন স্যামুয়েল বেনডেট। 'তবে বাস্তব পরিস্থিতিতে এর কার্যকারিতা পরিবেশ ও ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে।'
চীনের ড্রোন প্রযুক্তি এখন অনেক বেশি উদ্ভাবনী হয়েছে। এই মশার মতো ড্রোন তারই একটি উদাহরণ,' বলেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের জ্যেষ্ঠ গবেষক ও প্রযুক্তি বিশ্লেষক মাইকেল হোরোভিট্জ।
তবে তিনি মনে করেন, এই ড্রোনের বাস্তব সক্ষমতা এখনও স্পষ্ট নয়। এটি পুরোপুরি কার্যকর কিনা, কখন ব্যবহার উপযোগী হবে, কিংবা কী ধরনের অভিযানে ব্যবহার করা যাবে—এসব প্রশ্ন এখনো অনিশ্চিত।
তবুও, চীন আরও সূক্ষ্ম ও উন্নত পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে—এ ড্রোন তারই একটি প্রতিফলন।