প্রতারণা ঠেকাতে এখন থেকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করতে পারবে সিঙ্গাপুর পুলিশ

সিঙ্গাপুরে এখন থেকে যদি কেউ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বলে সন্দেহ হয়, তাহলে পুলিশ তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণে নিতে পারবে এবং লেনদেন বন্ধ করতে পারবে—একটি নতুন আইনে এমন ব্যবস্থার সুযোগ রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে এই আইন কার্যকর হয়েছে। খবর বিবিসির।
দেশটির সরকারের ভাষ্যে, অনেক সময় মানুষ প্রতারণার ফাঁদে পড়লেও তারা সেটা মানতে চান না। পুলিশের সাবধানবাণীকেও তারা গুরুত্ব দেন না। তাই এই আইন প্রয়োগ করে তাদের রক্ষা করাই মূল লক্ষ্য।
নতুন এই আইনটির নাম 'প্রটেকশন ফ্রম স্ক্যামস অ্যাক্ট'। চলতি বছরের শুরুর দিকে দেশটির সংসদে এটি পাস হয়। তবে কিছু সাংসদ একে 'ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ' বলে মন্তব্য করেছেন।
২০২৪ সালে সিঙ্গাপুরে প্রতারণার পরিমাণ নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে—মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার (প্রায় ৮৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৬৩০ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড)। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে প্রতারণা ঠেকাতে নতুন আইনকে অত্যন্ত জরুরি মনে করছে সিঙ্গাপুর সরকার।
নতুন আইনের আওতায়, কোনো ব্যক্তিকে প্রতারণার শিকার হিসেবে সন্দেহ হলে পুলিশ ব্যাংককে তার লেনদেন বন্ধের নির্দেশ দিতে পারবে। সেইসঙ্গে প্রয়োজনে তার এটিএম ও ক্রেডিট সুবিধাও সীমিত করা যাবে।
এমনকি সম্ভাব্য ভুক্তভোগী যদি বিশ্বাস না-ও করেন যে তিনি প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, তবুও পুলিশের সিদ্ধান্তে তার ব্যাংক লেনদেন সীমিত করা যাবে।
তবে এমন পরিস্থিতিতে অ্যাকাউন্টধারী ব্যক্তি নিত্যদিনের খরচ ও বিল পরিশোধের মতো জরুরি প্রয়োজনের জন্য সীমিত পরিসরে টাকা ব্যবহার করতে পারবেন—যেটির অনুমতি দেবে পুলিশ।
সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (এমএইচএ) তথ্যমতে, এই ধরনের নিয়ন্ত্রণ সর্বোচ্চ ৩০ দিনের জন্য কার্যকর থাকতে পারে এবং বিশেষ প্রয়োজন দেখা দিলে তা পাঁচ দফা পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।
আইনটির সমালোচকরা এর অপব্যবহার ও জবাবদিহিতার অভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জানুয়ারিতে সংসদে আইনটি নিয়ে আলোচনা চলাকালে কিছু সাংসদ প্রস্তাব দেন—নাগরিকদের যেন এই আইন থেকে 'অপ্ট আউট' হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় অথবা কারও লেনদেন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব যেন পরিবারের মনোনীত কাউকে দেওয়া যায়।
তবে সমর্থকরা বলছেন, ভুক্তভোগীদের বড় অঙ্কের ক্ষতি ঠেকাতে ও তাদের সুরক্ষায় এই আইন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ব্যক্তি ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত যাচাই করেই সিদ্ধান্ত নেবে পুলিশ। তারা বলেছে, 'এই ধরনের নিয়ন্ত্রণ কেবল শেষ উপায় হিসেবে নেওয়া হবে—যখন ভুক্তভোগীকে বোঝাতে অন্য সব পথ ব্যর্থ হবে।'
সিঙ্গাপুরে প্রতারণার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে—২০২০ সালে যেখানে ১৫ হাজার ৬০০ অভিযোগ ছিল, ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজারেরও বেশি।
দেশটিতে সাধারণত চাকরির প্রলোভন, ভুয়া বিনিয়োগ ও ই-কমার্স প্রতারণার ঘটনা বেশি ঘটে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে প্রতারণা করাও বাড়ছে, যেখানে প্রতারকরা মাসের পর মাস অনলাইনে সম্পর্ক তৈরি করে পরে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
প্রতারণা ঠেকাতে সিঙ্গাপুর ইতিমধ্যে আরও কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে ব্যাংক গ্রাহকদের নিজ অ্যাকাউন্টের একটি নির্দিষ্ট অংশ ডিজিটাল লেনদেন থেকে লক করার সুযোগ দেওয়া হয়।
এ ছাড়া, বেশিরভাগ ব্যাংকে একটি 'কিল সুইচ' চালু আছে, যার মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়েছে বলে সন্দেহ হলে গ্রাহক নিজেরাই দ্রুত তা ফ্রিজ করতে পারেন।