সাবেক গভর্নরকে হারিয়ে নিউইয়র্কের সম্ভাব্য প্রথম মুসলিম মেয়র মিরা নায়ারের ছেলে মামদানি

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনের ডেমোক্র্যাট প্রাইমারিতে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে পরাজিত করে অভূতপূর্ব জয় পেয়েছেন রাজ্য অ্যাসেম্বলিম্যান জোহরান মামদানি।
৩৩ বছর বয়সী এই ডেমোক্র্যাটিক সোশালিস্ট তরুণ জয়ী হলে হবেন নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেয়র।
২০২১ সালে যৌন হয়রানির অভিযোগে গভর্নরের পদ থেকে সরে দাঁড়ান কুমো। এরপর থেকেই তিনি রাজনৈতিকভাবে ফেরার চেষ্টা করছিলেন। তবে এবার ৬৭ বছর বয়সী এই রাজনীতিক তরুণ প্রজন্মের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার কাছে পরাস্ত হলেন।
মঙ্গলবার রাতে সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে কুমো বলেন, 'আজকের রাত মামদানির।' তবে তিনি জানান, ফলাফল আরও বিশ্লেষণ করে তিনি ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
নিউইয়র্কের মতো উদারপন্থী শহরে সাধারণত ডেমোক্র্যাট প্রার্থীই নির্বাচিত হন। তাই প্রাইমারির এই ফলাফলকেই অনেকেই চূড়ান্ত বলে ধরে নিচ্ছেন।
তবে হার মেনে কুমোর আগাম স্বীকারোক্তি এবং মামদানির জয়কে 'আধুনিক নিউইয়র্ক রাজনীতির বড় চমক' হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

কারণ, এবারের নির্বাচনে ব্যবহৃত 'র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং' পদ্ধতির কারণে চূড়ান্ত ফল জানতে এক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এই পদ্ধতিতে ভোটাররা তাদের পছন্দের পাঁচজন প্রার্থীকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ক্রমানুসারে নির্বাচন করেন।
তবে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে, কোনো প্রার্থী সরাসরি ৫০ শতাংশ ভোট না পেলেও মামদানি বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন।
এই জয়কে নিউইয়র্কের রাজনৈতিক ইতিহাসে 'সবচেয়ে বড় অপ্রত্যাশিত পরাজয়' হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ট্রিপ ইয়াং। তিনি বলেন, 'মামদানি দেখিয়ে দিয়েছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাটরা এমন নেতৃত্ব চায়, যারা সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে লড়তে পারে।'
করোনার সময় কুমো মধ্যপন্থী রাজনীতিবিদ হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। তবে মামদানি সম্পূর্ণ ভিন্ন এক রাজনৈতিক চরিত্র। প্রথাগত রাজনীতির বাইরে থেকে উঠে আসা এই তরুণ নির্বাচনী প্রচারে এনেছেন নতুন ধারা।
উগান্ডায় জন্ম নেওয়া মামদানি ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ারের ছেলে। ছোটবেলায় পরিবারসহ নিউইয়র্কে চলে আসেন। প্রচারে তিনি উর্দু ভাষায় ভিডিও, বলিউড ক্লিপ এবং স্প্যানিশ ভাষায় বক্তব্য ব্যবহার করে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি, বিশেষ করে জেনজি-দের মাঝে।

প্যালেস্টাইন সমর্থন ও ইসরায়েল সমালোচনার কারণে তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অনেক প্রথিতযশা নেতার থেকে আলাদা। তিনি গাজায় ইসরায়েলের অভিযানের তীব্র সমালোচনা করেছেন, 'বয়কট, ডিভেস্টমেন্ট অ্যান্ড স্যাংশনস (বিডিএস)' আন্দোলনের পক্ষে কথা বলেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর গ্রেপ্তারেরও দাবি করেছেন।
তবে মামদানি তার নির্বাচনী প্রচারণায় স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, নিউইয়র্কে কোনোভাবেই অ্যান্টিসেমিটিজমের জায়গা নেই। নির্বাচিত হলে ঘৃণাজনিত অপরাধ প্রতিরোধে অর্থায়ন বাড়ানোরও অঙ্গীকার করেছেন তিনি।
নির্বাচনী প্রচারের এক ভিডিওতে দেখা যায়, ট্রাম্পপন্থী ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলছেন তিনি—জানতে চাইছেন কেন তারা রিপাবলিকানদের সমর্থন করেন, এবং কী করলে তারা ডেমোক্র্যাটদের পাশে আসবেন।
তার প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে নাগরিকজীবন ঘিরে কিছু বাস্তবধর্মী প্রতিশ্রুতি—বিনামূল্যে বাস চলাচল, সার্বজনীন শিশু পরিচর্যা, ভর্তুকিপ্রাপ্ত আবাসনের ভাড়া স্থগিত রাখা এবং ধনীদের ওপর কর বাড়িয়ে শহর পরিচালিত মুদি দোকান চালু করা।
এক নির্বাচনী সমাবেশে মামদানি বলেন, 'এই শহরের প্রতি চারজনের একজন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন। প্রতিরাতে প্রায় পাঁচ লাখ শিশু না খেয়ে ঘুমায়। নিউইয়র্ক আজ তার বৈচিত্র্য হারানোর মুখে। আমরা তা রক্ষা করতে চাই '
তার অবস্থানের পাশে দাঁড়িয়েছেন বার্নি স্যান্ডার্স ও আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কোর্টেজের মতো প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাট নেতারা।