ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের সামরিক ক্ষমতার লাগাম টানতে ডেমোক্র্যাটদের প্রস্তাব

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের তিন ডেমোক্রেটিক আইনপ্রণেতা একটি `যুদ্ধ ক্ষমতা প্রস্তাব' পেশ করেছেন। এই প্রস্তাবের উদ্দেশ্য হলো প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যবহারের ক্ষমতা সীমিত করা, বিশেষ করে সপ্তাহান্তে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার পর।
তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি হাউস এবং সিনেট উভয় কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রেখেছে, যার ফলে তার কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ করার কোনো প্রস্তাব উভয় কক্ষে পাশ হওয়ার সম্ভাবনা কম।
ইরান গতকাল সোমবার প্রতিশোধ নিতে কাতারে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়। এর আগে গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের উপর হামলা চালিয়ে তাদের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করে।
সোমবার রাতেই ডেমোক্র্যাটিক দলের তিন মার্কিন কংগ্রেসম্যান—জিম হাইমস, গ্রেগরি মিকস এবং অ্যাডাম স্মিথ—একটি যৌথ বিবৃতি দেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে দাবি করেন যে ইসরায়েল ও ইরান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে তার কয়েক ঘণ্টা পরই তারা এই বিবৃতি দেন।
তিন কংগ্রেসম্যান বলেন, 'কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ইরান কিংবা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করতে দেওয়া যাবে না।' তারা আরও বলেন, 'ট্রাম্প অর্থবহ পরামর্শ বা কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই এই হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।'
কিছু ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা কংগ্রেসকে আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে ট্রাম্পের ইরানে সামরিক শক্তি ব্যবহারে লাগাম টানা যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এই সংঘাতে জড়ানো থেকে বিরত রাখা যায়।
অনেক ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা বলেছেন, ট্রাম্পের এসব পদক্ষেপ সংবিধান পরিপন্থী, কারণ বিদেশে যুদ্ধ ঘোষণা করার ক্ষমতা কেবল কংগ্রেসেরই আছে।
তবে হাউস স্পিকার মাইক জনসন সোমবারের শুরুতে বলেন, এই মুহূর্তে যুদ্ধক্ষমতা সংক্রান্ত কোনো প্রস্তাব বিবেচনার সময় নয়।
ট্রাম্পের মিত্ররা বলছেন, তিনি ইরানের পক্ষ থেকে আসা সম্ভাব্য পারমাণবিক হুমকি মোকাবেলায় একতরফাভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার সাংবিধানিক ক্ষমতা রাখেন।
কিন্তু ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা এর বিরোধিতা করে বলেন, ট্রাম্পের পদক্ষেপগুলো কেবল একটি সীমিত অভিযানের চেয়েও ব্যাপক।
তারা বলেন, ট্রাম্প রোববার সামাজিক মাধ্যমে ইরানে 'সরকার পরিবর্তনের' ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা থেকে বোঝা যায় এই অভিযান কেবল পারমাণবিক হুমকি দূর করার উদ্দেশ্যে ছিল না।
ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা বলেন, 'প্রেসিডেন্ট সামাজিক মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন নিয়ে পোস্ট পারমাণবিক হুমকি মোকাবেলার জন্য চালানো সীমিত পরিসরের অভিযানের দাবিকে দুর্বল করে দেয়।'
তারা আরও বলেন, 'এখানে কোনো চিন্তাশীল আলোচনাও হয়নি, কোনো সুপরিকল্পিত প্রস্তুতিও ছিল না— অথচ গুরুতর সিদ্ধান্ত নিতে হলে প্রয়োজন হয় গুরুতর বিতর্কের, প্রেসিডেন্টের আবেগে নয়।'
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলই একমাত্র দেশ, যার কাছে পরমাণু অস্ত্র রয়েছে বলে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয়। তারা দাবি করে, ইরানের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধের লক্ষ্য হলো তেহরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরির হাত থেকে বিরত রাখা।
অন্যদিকে, ইরান বলছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত এবং তারা পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (এনপিটি) সদস্য। অপর দিকে ইসরায়েল এ চুক্তিতে যোগ দেয়নি।