ইরানে মার্কিন হামলা শুরুই হয় মিথ্যা ও ছলচাতুরি দিয়ে

শনিবার শুরু হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের 'অপারেশন মিডনাইট হ্যামার'-এর শুরুটা হয় একটি প্রতারণামূলক চাল দিয়ে। মার্কিন মিসৌরি ঘাঁটি থেকে কিছু বি-টু বোমারু বিমান প্যাসিফিক মহাসাগরের গুয়াম অঞ্চলের দিকে রওনা দেয়। এটি দেখে সামরিক বিশ্লেষকরা ভেবেছিলেন হয়তো ইরানে হামলার পূর্ব প্রস্তুতি শুরু হলো মাত্র।
কিন্তু তা ছিল শুধু চোখে ধাঁধা দেওয়া। প্রকৃত হামলাকারী সাতটি বি-টু স্টেলথ বোমারু বিমান ইরানের দিকে, গোপনে ১৮ ঘণ্টা ধরে উড়েছে। বিমানগুলো মাঝ আকাশে জ্বালানি নিয়েছে এবং যোগাযোগ কমিয়ে রেখেছে, রবিবার এমন তথ্য জানায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী।
ইরানের আকাশসীমার কাছাকাছি পৌঁছাতেই একটি মার্কিন সাবমেরিন থেকে ২০টির বেশি টমাহক ক্রুজ মিসাইল ছোড়া হয়। একই সঙ্গে কিছু মার্কিন যুদ্ধবিমান সামনে দিয়ে উড়ে ইরানি ফাইটার জেট ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা শনাক্তে 'ডিকয়' হিসেবে কাজ করে।
ইরানের তিনটি মূল পরমাণু স্থাপনায় এই হামলা ছিল বি-টু স্টেলথ বিমানের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অভিযান। এটি ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের পর সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের ফ্লাইটও বটে।
বোমারু বিমানগুলো ১৪টি জিবিইউ-৫৭ 'ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনেট্রেটর' নামের বাঙ্কার-ব্রেকিং বোমা ফেলে, প্রতিটির ওজন ছিল ৩০,০০০ পাউন্ড। পুরো অভিযানে ১২৫টির বেশি মার্কিন সামরিক বিমান অংশ নেয় বলে জানায় পেন্টাগন।
মার্কিন সেনাবাহিনীর দৃষ্টিতে এটি ছিল একটি সফল সামরিক অভিযান। "ইরানি বাহিনী কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেনি," বলেন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন। "তাদের যুদ্ধবিমান উড়েওনি, এমনকি আমাদের দেখতেও পারেনি। আমরা পুরোপুরি চমকে দিতে পেরেছি।"
তিনি জানান, প্রাথমিক মূল্যায়নে দেখা গেছে তিনটি লক্ষ্যবস্তুতেই প্রচণ্ড ক্ষতি হয়েছে। তবে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির কিছু অংশ টিকে আছে কি না সেই বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ আরও নিশ্চিতভাবে বলেন, "ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে আমরা ধ্বংস করেছি, এতে কোনো সন্দেহ নেই।"
কেইন বলেন, অভিযানটি এতটাই গোপন ছিল যে, ওয়াশিংটনে খুব কম কর্মকর্তাই জানতেন এর সময় ও ধরণ। অনেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাও প্রথম খবর পেয়েছেন শনিবার রাতে ট্রাম্পের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট থেকে।
হেগসেথ বলেন, এই হামলার জন্য প্রস্তুতি চলেছে মাসের পর মাস ধরে। তবে চূড়ান্ত পরিকল্পনা তৈরি হয় কয়েক সপ্তাহের মধ্যে।
এখন কী ঘটবে তা অনিশ্চিত
মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় দেশগুলো, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি রয়েছে, তারা ইতোমধ্যে উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। যেকোনো সম্ভাব্য যুদ্ধ আরও বিস্তারের ঝুঁকি বিবেচনা করে।
মার্কিন সেনাবাহিনী মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের বাহিনী ছড়িয়ে দিয়েছে এবং নিরাপত্তা আরও জোরদার করেছে। প্রতিশোধের আশঙ্কায় এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
হেগসেথ জানান, মার্কিন সেনারা আত্মরক্ষায় প্রস্তুত আছে এবং ইরান আক্রমণ করলে পাল্টা জবাব দিতে পারবে।
তবে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, তারা ইরানের সঙ্গে বড় ধরনের যুদ্ধ চায় না। বরং তেহরানকে আলোচনায় বসার জন্য বেসরকারিভাবে বার্তা পাঠানো হয়েছে।
তবে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র আরও বেশি শক্তি দিয়ে নতুন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে প্রস্তুত।
"ইরানের এখন সচেতন হওয়া উচিত। প্রেসিডেন্ট যা বলেছেন, তা তিনি করতে প্রস্তুত," বলেন হেগসেথ।
অনুবাদ : নাফিসা ইসলাম মেঘা