‘আমি করতে পারি, নাও করতে পারি’: ইরানে হামলা করা প্রসঙ্গে ট্রাম্প

হাইলাইটস:
- ট্রাম্পের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ দাবি প্রত্যাখ্যান খামেনির, যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে 'অপূরণীয় ক্ষতির' হুঁশিয়ারি
- আত্মরক্ষা ইরানের বৈধ ও ন্যায্য অধিকার: এরদোয়ান
- ইরানের জন্য 'অস্তিত্ব সংকটের মুহূর্ত': আল জাজিরাকে বিশ্লেষক
- ইসরায়েলের দাবি, ইরানে ৪০টি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালাবে কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, 'আমি [ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথ হামলা] করতে পারি, নাও করতে পারি।'
বুধবার (১৮ জুন) হোয়াইট হাউসের লনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সেসময় এক সাংবাদিক জানতে চান, যুক্তরাষ্ট্র কি ইরানে হামলার দিকে এগোচ্ছে?
জবাবে ট্রাম্প বলেন, 'আমি সেটা বলতে পারছি না… আপনি কি সত্যিই ভাবছেন আমি এই প্রশ্নের উত্তর দেবো?'
তিনি বলেন, 'আপনারা জানেন না আমি এটা করব কি না। আমি হয়তো করব, হয়তো করব না। কেউ জানে না আমি কী করতে যাচ্ছি।'
ট্রাম্প আরও বলেন, 'ইরান এখন বড় সমস্যায় রয়েছে এবং তারা আলোচনায় বসতে চায়। আমার কথা, তারা আগে আলোচনা করল না কেন—এই মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞের আগে?'
তিনি আরও বলেন, 'আমি তাদের বলেছি যে আপনারা কেন দুই সপ্তাহ আগেই আমার সঙ্গে আলোচনা করেননি? তাহলে সব ঠিকঠাক থাকতো।'
ট্রাম্পের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ দাবি প্রত্যাখ্যান খামেনির, যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে 'অপূরণীয় ক্ষতির' হুঁশিয়ারি
দ্য গার্ডিয়ান
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালাবে কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সরাসরি উত্তর না দিয়ে পরিস্থিতিকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বুধবার হোয়াইট হাউসের লনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তখন এক সাংবাদিক জানতে চান, যুক্তরাষ্ট্র কি ইরানে হামলার দিকে এগোচ্ছে? জবাবে ট্রাম্প বলেন, "আমি সেটা বলতে পারি না… আপনি কি সত্যিই ভাবছেন আমি এই প্রশ্নের উত্তর দেবো?"
তিনি বলেন, "আপনারা জানেন না আমি সেটা করব কি না। আমি হয়তো করব, হয়তো করব না। কেউ জানে না আমি কী করতে যাচ্ছি।"
ট্রাম্প আরও বলেন, "ইরান এখন বড় সমস্যায় রয়েছে এবং তারা আলোচনায় বসতে চায়। আমি বলেছি, 'তারা আগে আলোচনা করল না কেন—এই মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞের আগে?' আমি তাদের বলেছি, 'তোমরা কেন দুই সপ্তাহ আগেই আমার সঙ্গে আলোচনা করোনি? তাহলে সব ঠিকঠাক চলত, তোমাদের একটা দেশ থাকত।'"
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ' নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ' দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বুধবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ইরান ট্রাম্পের 'নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ'-এর আহ্বান মেনে নেবে না, ইরান আত্মসমর্পণ করবে না।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শুক্রবারের পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণে খামেনি বলেছেন, 'শান্তি বা যুদ্ধ ইরানের ওপর কোনোটাই চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।'
ভাষণে খামেসনি বলেন, 'ইরান, ইরানি জাতি এবং এর ইতিহাস সম্পর্কে জানা বুদ্ধিমান মানুষেরা কখনোই এই জাতিকে এমন ভাষায় হুমকি দেন না। কারণ ইরানি জাতি আত্মসমর্পণ করবে না।'
তিনি সতর্ক করে বলেন, 'যেকোনো মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের ফল হবে মারাত্মক ও অপূরণীয় ক্ষতির কারণ।'
খামেনি বলেন, 'আমেরিকানদের জানা উচিত যে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ নিঃসন্দেহে তাদের অপূরণীয় ক্ষতি ডেকে আনবে।
বুধবার ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান রাতভর তেহরানে বোমা হামলা চালানোর জেরে হাজার হাজার মানুষ তেহরান ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
এদিকে, ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে ইসরায়েলের চালানো হামলায় যোগ দেওয়ার বিষয়টি ডোনাল্ড ট্রাম্প বিবেচনা করছেন বলে জানিয়েছে বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজ। খবর বিবিসি'র
সিবিএস নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
হামলার সম্ভাব্য লক্ষ্য ইরানের ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ফোর্ডো। এই কেন্দ্রটি প্রায় ৩০০ ফুট গভীরে একটি পর্বতের নিচে অবস্থিত এবং শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা সুরক্ষিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সম্ভাব্য স্থল হিসেবে বিবেচিত।
সিবিএস নিউজের প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এই বিষয়ে পূর্ণ সমর্থন নেই।
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজের সিচুয়েশন রুমে জাতীয় নিরাপত্তা দলের সঙ্গে বৈঠকে এই বিষয়টি আলোচিত হওয়ার কথা ছিল।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে.ডি. ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ, জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড, মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং সিআইএ পরিচালক জন র্যাটক্লিফ।
ইরান ইসরায়েলের হামলার পর দাবি করেছে যে, তারা দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
তবে এই বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা মূল্যায়নে বলা হয়েছিল যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না।
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, ইরান সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য প্রযোজ্য ইউরেনিয়ামের মজুদ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে।
ইরান সরকার দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে যে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির উদ্দেশ্যে শান্তিপূর্ণ।
ট্রাম্প প্রশাসন জনসমক্ষে এবং গোপনে জানিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের আক্রমণে জড়িত নয়।
যদিও সিবিএস নিউজ আগে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পাল্টা হামলার প্রতিরোধে ইসরায়েলকে সহায়তা করেছে।
প্রসঙ্গত, টানা ছয়দিন ধরে ইসরায়েল ও ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইরানের 'নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ' দাবি করেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অবস্থান জানে।
তিনি এও লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাকে (খামেনি) হত্যা করবে না। তবে ইরানের 'নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের' দাবি জানায়।
ট্রাম্প তার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, 'আমরা জানি তথাকথিত 'সর্বোচ্চ নেতা' কোথায় লুকিয়ে আছেন। তিনি একটি সহজ লক্ষ্য, তবে তিনি নিরাপদ। আমরা তাকে বাইরে বের করে আনতে যাব না (হত্যা করব না), অন্তত এখনই নয়। কিন্তু আমরা চাই না ইরান সাধারণ নাগরিকদের বা মার্কিন সেনাদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করুক। আমাদের ধৈর্য শেষ হয়ে আসছে। এ বিষয়ে আপনার মনযোগের জন্য ধন্যবাদ।'
এর কয়েক মিনিট পর ট্রাম্প আবারও একটি পোস্ট করেন। সেখানে ইংরেজি বড় অক্ষরে লেখেন, 'আনকন্ডিশনাল সারেন্ডার' বা 'নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ'।
এর প্রায় ৩০ মিনিট আগে ট্রাম্প পৃথক একটি পোস্টে বলেছিলেন, 'আমরা এখন ইরানের আকাশ পুরোপুরি এবং সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি।'
অন্যদিকে, ট্রাম্পের এই হুমকির পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, 'মর্যাদাবান হায়দারের নামে,যুদ্ধ শুরু হলো।'
'হায়দার' হচ্ছে ইসলামের চতুর্থ খলিফা ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর চাচাতো ভাই ইমাম আলী (রা.)-এর আরেক নাম। ইরানসহ শিয়া মুসলিমরা তাকে তাদের প্রথম ইমাম হিসেবে মানেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খামেনিকে নিয়ে মন্তব্য করার পর এটি ছিল তার প্রথম প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া।
ইরানের এ সর্বোচ্চ নেতা আরেক পোস্টে বলেন, 'আমাদের সন্ত্রাসী জায়নবাদী [ইসরায়েল] শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে কঠোর জবাব দিতে হবে। আমরা জায়নবাদীদের কোনো দয়া দেখাব না।'
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের পাল্টা হামলায় কমপক্ষে ২৪ জন নিহত এবং শত শত মানুষ আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে, ইরান বলেছে, ইসরায়েলি হামলায় তাদের ২২৪ জনের বেশি নাগরিক নিহত এবং এক হাজারেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা তেহরানে একটি সেন্ট্রিফিউজ স্থাপনাসহ অস্ত্র মজুদের বিভিন্ন স্থাপনায় রাতভর হামলা চালিয়েছে।
অন্যদিকে, ইরানও ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালিয়েছে।
রাতের বেলায় ইসরায়েলে দুই দফায় সাইরেন বেজে ওঠে। তবে তেহরানের হামলার মাত্রা অনেকটাই কমে এসেছে বলে জানিয়েছেন বিবিসির হুগো ব্যাচেগা।
আত্মরক্ষা ইরানের বৈধ ও ন্যায্য অধিকার: এরদোয়ান
মিডল ইস্ট আই

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, ইসরায়েলের চলমান বোমা হামলার মধ্যে ইরানের আত্মরক্ষার প্রচেষ্টা "সম্পূর্ণ বৈধ, ন্যায্য এবং আইনসম্মত"।
আজ বুধবার এক বিবৃতিতে এরদোয়ান বলেন, "ইসরায়েলের সন্ত্রাসবাদ ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষা করা ইরানের একটি খুবই স্বাভাবিক, বৈধ ও আইনগত অধিকার।"
এর একদিন আগে তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে আখ্যা দেন "এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা হুমকি" হিসেবে।
এরদোয়ান বলেন, "এই হামলাগুলো সংঘটিত হয়েছে এমন এক সময়, যখন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চলছিল।"
তিনি আরও বলেন, "যে ইসরায়েল নিজের পারমাণবিক অস্ত্র রাখার অধিকার দাবি করে এবং আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করে, তারা এ আলোচনার আগেই এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে।"
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে বলেন, "আমরা ইসরায়েলের হামলার পরিস্থিতি খুব ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের সব সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার জন্য সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।"
"আমরা প্রতিটি সম্ভাব্য পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। কেউ আমাদের পরীক্ষা করার দুঃসাহস দেখাবেন না," বলেন তিনি।
এরদোয়ান আরও জানান, সোমবার তিনি তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পকে নির্দেশ দিয়েছেন, যেন মধ্য ও দীর্ঘ-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়ানো হয়। এর লক্ষ্য হলো ইসরায়েল-ইরান আকাশযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দেশের প্রতিরোধ সক্ষমতা বাড়ানো।
ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা বাড়াবে
আল জাজিরা
ইসরায়েলকে সরাসরি সামরিক সহায়তা দিলে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে ব্যাপকভাবে অস্থিতিশীল করে তুলবে বলে সতর্ক করেছেন রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে গত ছয় দিন ধরে চলছে আকাশপথের যুদ্ধ। যেখানে ইরান মূলত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করছে। অন্যদিকে, এই ধরনের অস্ত্র ছাড়াও বিমান থেকে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষ হয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে এমন সম্ভাবনার কথাও বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এসব প্রেক্ষাপটে রিয়াবকভের এই মন্তব্য আসে। রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, রিয়াবকভ বলেন, ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেওয়া বা এমন কোনো পদক্ষেপ বিবেচনায় নেওয়ার বিষয়েও যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করছে মস্কো।
তিনি আরও জানান, রাশিয়া ইসরায়েল এবং ইরান—দুই দেশের সঙ্গেই যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে।
ইরানের জন্য 'অস্তিত্ব সংকটের মুহূর্ত': আল জাজিরাকে বিশ্লেষক
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে একমত থাকলেও, দেশটিতে 'শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন' আনা হবে কি না—তা নিয়ে ওয়াশিংটনে এখনো বিতর্ক চলছে বলে জানিয়েছেন ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি বিশ্লেষক পরামর্শক মার্কো ভিসেনজিনো।
আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভিসেনজিনো বলেন, "চাপের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। গত চার দশকে এরকম দুর্বল অবস্থায় কখনো পড়েনি ইরানের সরকার। এটা তাদের জন্য একটি অস্তিত্ব সংকটের মুহূর্ত।"
তিনি আরও বলেন, সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সাম্প্রতিক 'চ্যালেঞ্জ ছোড়া' বক্তব্য আসলে মুখরক্ষা ও রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখার কৌশলমাত্র। "এই বক্তব্য মূলত টিকে থাকার কৌশল হিসেবেই দেখা উচিত।"
প্রসঙ্গত, আজ বুধবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ইরান ট্রাম্পের 'নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ'-এর আহ্বান মেনে নেবে না, ইরান আত্মসমর্পণ করবে না।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, 'যেকোনো মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের ফল হবে মারাত্মক ও অপূরণীয় ক্ষতির কারণ।'
মার্কো ভিসেনজিনো হুঁশিয়ার করে বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র একদিকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংসের পাশাপাশি শাসনব্যবস্থার পতনের দিকেও এগোয়, তাহলে তেহরান 'মরণপণ' পদক্ষেপ নিতে পারে—যার ফলে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে বিশৃঙ্খলা।
"যদি ইরানকে কোণঠাসা করে ফেলা হয়—তাহলে কি সরকার ভেঙে পড়বে, নাকি পাল্টা হামলার মতো মরিয়া কিছু করবে?"—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে, কিংবা উপসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন তেল স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে।
"এসবই এখনো খোলা প্রশ্ন, যার নির্ভরতা ভবিষ্যতের কৌশলের ওপর," তিনি যোগ করেন।
ইসরায়েলের দাবি, ইরানে ৪০টি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা
আল জাজিরা
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, আজ সকালে দেশটির বিমানবাহিনী ইরানের পশ্চিমাঞ্চলে একাধিক সামরিক স্থাপনায় ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
আজ বুধবার (বাংলাদেশ সময়) আইডিএফের 'এক্স' (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে দেওয়া পোস্টে বলা হয়, "আজ সকালে গোয়েন্দা শাখার নির্দেশনায় বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলো ইরানের পশ্চিমাঞ্চলে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে একটি অভিযান সম্পন্ন করেছে।"
"প্রায় ২৫টি যুদ্ধবিমান ৪০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র কাঠামো, ক্ষেপণাস্ত্র মজুতস্থল এবং ইরানি শাসকগোষ্ঠীর সামরিক বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়," এতে আরও বলা হয়।
এর আগে ইসরায়েল দাবি করেছে তারা ইরানের অন্তত দুটি পারমাণবিক সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্রে বোমাবর্ষণ করেছে—যার মধ্যে রয়েছে তেহরানে অবস্থিত মূল পারমাণবিক স্থাপনাও।
এই হামলা ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শক্তিগুলো।