সাকিবের জন্য বাংলাদেশ দলের দরজা এখনও খোলা রেখেছে বিসিবি

বাংলাদেশের হয়ে সর্বশেষ খেলেছেন গত বছরের অক্টোবর মাসে। এরপর থেকে আর জাতীয় দলে দেখা মেলেনি সাকিব আল হাসানের। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলের বাইরে আছেন সাকিব আল হাসান।
একদিকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে নাম না থাকা, অন্যদিকে টেস্ট ক্রিকেট থেকেও কার্যত অবসরের পর অনেকেই ভাবছিলেন, হয়তো জাতীয় দলের দরজা সাকিবের জন্য চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। তাই তার ফেরার সম্ভাবনা ঘিরে দেখা দিয়েছিল অনিশ্চয়তা।
তবে সেই অনিশ্চয়তার মধ্যেই আশার বার্তা শোনালেন বিসিবি পরিচালক ইফতেখার রহমান মিঠু। তিনি জানান, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সাকিব আল হাসানের জাতীয় দলে ফেরার পথ এখনও খোলা রেখেছে।
গেল সপ্তাহে লাহোর কালান্দার্সের হয়ে পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) খেলতে নেমে প্রায় ৬ সপ্তাহ পর আবারও প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরেছেন সাকিব। তবে দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে থাকার মূল কারণ ছিল তার বোলিং অ্যাকশনে সমস্যা ধরা পড়া। সাকিব আল হাসানের বোলিং অ্যাকশনকে সব ধরনের ক্রিকেটের জন্য অবৈধ ঘোষণা করেছিল ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। তবে চলতি বছরের শুরুতে ইসিবি তার বোলিং অ্যাকশন বৈধ ঘোষণা করে।
অবশ্য গত বছরের অক্টোবর থেকে বিসিবিও সাকিবের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছে। সেবছর ভারতের বিপক্ষে কানপুরে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টটাই ছিল তার জাতীয় দলের শেষ ম্যাচ। সেই ম্যাচের আগেই সাকিব ঘোষণা দিয়েছিলেন, দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেই বিদায় নেবেন টেস্ট ক্রিকেট থেকে, আর টি-টোয়েন্টি খেলবেন না।
কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তার বিদায়ী ম্যাচটি খেলতে পারেননি সাকিব। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসেবে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দলটি ১৫ বছর পর ক্ষমতা হারানোর পর থেকে জনরোষের আশঙ্কায় আর দেশে ফেরেননি তিনি।
বিসিবি তাকে পরবর্তী সিরিজগুলোতেও সুযোগ দেয়নি। এমনকি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলেও জায়গা হয়নি তার।
তবে সাকিবকে পুরোপুরি বাদ দেয়নি বিসিবি। বোর্ডের পরিচালক ইফতেখার রহমান বলছেন, 'সাকিব সবসময় নির্বাচক ও দল ব্যবস্থাপনার বিবেচনায় থাকবেন। যে কোনো দলের জন্য তিনি একজন বড় সম্পদ। সাকিব একজন বিশ্বমানের ক্রিকেটার। বোলিং অ্যাকশন সংশোধন করে ফেরার পর টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে অবশ্যই নজরে রাখবে। বিসিবির সাথে সাকিবের সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়নি। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সে মাত্র কয়েকটি ম্যাচ খেলেছে। আরও কিছু ম্যাচ খেললে আমরা তার ফেরার ব্যাপারে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে পারব।'
বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক দুর্দশার প্রেক্ষাপটে সাকিব আল হাসানের জাতীয় দলে ফেরার বিষয়টি আলোচনায় আসে। সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি সিরিজে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। এরপর পাকিস্তান সফরে আরও একটি তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার কথা রয়েছে।
দলের এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্স নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন, মুশফিকুর রহিম এখন শুধুমাত্র টেস্ট ক্রিকেট খেলছেন। সাকিবের অবস্থাও অনিশ্চিত, কারণ তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নেননি। তবে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের অবস্থান আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে নেমে এসেছে দশ নম্বরে।
ইফতেখার বলেন, 'এই চার সিনিয়র ক্রিকেটার (শাকিব, তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ) ছাড়া দলটি একরকম নতুন। তাই এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। তবে বর্তমান প্রজন্মের ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রতিভা আছে। যত বেশি খেলবে, পারফরম্যান্স তত ভালো হবে। আমার ধারণা, আমরা এখন যে অবস্থায় আছি, এখান থেকে শুধু উপরের দিকেই যাওয়া সম্ভব।'