৫ আগস্ট চানখাঁরপুলে হত্যা: ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গৃহীত, আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু

গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুলে ৬ জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফরমাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র) আমলে নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার বরাবর আজ (২৫ মে) ফরমাল চার্জ দাখিল করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
চার্জ আমলের নেয়ার মাধ্যমে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের এটিই প্রথম কোনো মামলা যার আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া ট্রাইব্যুনালে শুরু হলো। বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই মামলার ফরমাল চার্জ দাখিলের পর শুনানি শেষে এই নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন।
মামলার ৮ আসামীর মধ্যে পলাতক থাকা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩ জুন মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে, যেখানে পলাতক চার আসামিসহ মোট আটজনকে হাজির করার আদেশ দেয়া হয়েছে।
এর আগে গত ২০ এপ্রিল এই মামলায় ৮ জনকে অভিযুক্ত করে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কাছে দাখিল করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
তদন্ত সংস্থা এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর চিফ প্রসিকিউটর সাংবাদিকদের জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার দেয়া এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদনটি ৯০ পৃষ্ঠার। তদন্ত করতে তদন্ত সংস্থার সময় লেগেছে ৬ মাস ১৩ দিন। তদন্ত প্রতিবেদনে ৭৯ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এছাড়া ১৯টি ভিডিও, পত্রিকার ১১ টি রিপোর্ট, দুটি অডিও, বই ও রিপোর্ট ১১ টি এবং ছয়টি ডেথ সার্টিফিকেট সংযুক্ত করা হয়।
অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ আলম ও মো. আখতারুল ইসলাম, রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম। তাদের মধ্যে শেষের চারজন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন, বাকিরা পলাতক রয়েছেন।
গ্রেপ্তার থাকা আসামিদের রোববার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট চানখাঁরপুল এলাকায় শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে গুলি চালায়। এতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যরা এই অভিযানে সরাসরি অংশ নেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্দোলন দমন করতে ব্যবহার করা হয় আগ্নেয়াস্ত্র, এপিসি কার, হেলিকপ্টার, ড্রোন ও বিপুল পরিমাণ বুলেট। পুলিশের এই অভিযানে নিহত হন শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদী হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিক।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পলাতক আসামি হাবিবুর রহমানসহ অন্য অভিযুক্তরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং অধীনস্তদের গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। তাদের সহযোগিতা ও নির্দেশেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।