নির্বাচন কমিশন বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে: এনসিপির বিক্ষোভে নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী

বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন করে দ্রুত স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে আজ বুধবার (২১ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বিক্ষোভ কর্মসূচিতে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
সমাবেশে নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী অভিযোগ বলেন, "বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। আমরা যতদিন বেঁচে আছি, এই কমিশন পুনর্গঠন করে ছাড়ব।"
তিনি বলেন, "ইসি পুনর্গঠন ছাড়া এনসিপি কোনো ভোট করতে দেবে না। ইসি বিএনপির দলীয় কার্যালয় হিসেবে কাজ করছে। রক্তের ম্যানডেট নিয়ে বিএনপির পক্ষে কাজ করতে পারেন না। ইসিকে আগে স্থানীয় নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।"
"বিভিন্ন জায়গা দালাল চক্র দখল করছে। উপদেষ্টা প্যানেল থেকে বিএনপিপন্থীদের বের করে দেন, আমরা দেখতে চাই। বিএনপির লাশের রাজনীতি শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের টাকায় বিএনপি বড় বড় কথা বলে। আওয়ামী লীগের টাকায় বিএনপি নগর ভবন বন্ধ করছে। বাংলাদেশে মুজিবীয় সংবিধান চলবে না", যোগ করেন তিনি।
এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টাকে 'বিএনপির মুখপাত্র' হিসেবে আখ্যায়িত করে পাটোয়ারী বলেন, "সংস্কার সুপারিশ বাস্তবায়ন না হলে উপদেষ্টাদের মধ্যে যারা 'বিএনপির মুখপাত্র' তাদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে।''
তিনি অভিযোগ করে বলেন, "বাংলাদেশে এডুকেশন ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য ওয়াহিদউদ্দিন ভাই (উপদেষ্টা) কাজ করছেন, দেশে ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টরকে ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য সালেহ উদ্দিন ভাই (উপদেষ্টা) কাজ করছেন। আইন মন্ত্রণালয় ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য আসিফ নজরুল কাজ করছেন।"
তিনি আরও অভিযোগ করেন, "সালাহউদ্দিন, আপনি ভারত থেকে এসে ভারতের দালাল হয়ে গেছেন। দেশ ধ্বংস করছেন...সালাহউদ্দিন ভারতের প্রেসক্রিপশনে কাজ করছেন।"
আইন উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, "আসিফ নজরুল জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে টালবাহানা করছেন। জনগণের রক্তের সঙ্গে তিনি বেআইনি করছেন। জুলাই ঘোষণাপত্র না দিলে আপনি দেশে থাকতে পারবেন না।"
এ মাঠে 'কুসুম কুসুম খেলা' চলবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, "এনসিপি নেতারা যতদিন আছি, জাতীয় নির্বাচনের আগে অবশ্যই স্থানীয় নির্বাচন দিতে হবে। স্থানীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় কোনো নির্বাচন হবে না।"
সমাবেশে এনসিপির কলাবাগান প্রতিনিধি মাসুম বিল্লাহ বলেন, "বর্তমান ইসি প্রশ্নবিদ্ধ কাজ করছে, অবৈধ আইনে গঠিত হয়েছে। আমরা এ ইসি পুনর্গঠনের দাবি জানাই। আমরা চাই দ্রুত স্থানীয় সরকার নির্বাচন।"
বিক্ষোভ কর্মসুচি ঘিরে আজ সকাল সাড়ে ১১টা থেকেই এনসিপির কর্মীরা মিছিল নিয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সামনে এসে অবস্থান নেন। এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি থাকলেও তাদের কোনো ধরনের বাধার মুখে পড়েনি বিক্ষোভকারীরা। শান্তিপূর্ণভাবেই তারা সেখানে অবস্থান নেয়।
পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যদেরও নির্বাচন ভবনের সামনে মোতায়েন করা হয়েছিল। ভবনের সামনের রাস্তায় বসানো হয়েছিল কাঁটাতারের ব্যারিকেডও।
বেলা সোয়া ১টার দিকে এনসিপির নেতারা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের মূল ফটকে অবস্থান নেন। তারা বলছেন, তাদের এই কর্মসূচি চলবে। এ সময় তাদেরকে 'ইসি তুই দলকানা, ইসি তুই চলে যা'; 'ফ্যাসিবাদের কমিশন, মানি না মানব না', 'খুনি হাসিনার কমিশন, মানি না মানব না' স্লোগান দিতে শোনা যায়।
দুপুর ২টা ১১ মিনিটে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

এর আগে, ইসি পুনর্গঠনসহ কয়েকটি দাবিতে গতকাল (২০ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, 'আমরা অনতিবিলম্বে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।'
নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা না থাকার কারণ ব্যাখ্যা করে আখতার হোসেন বলেন, 'বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে "প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২" অনুযায়ী, যা ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার প্রণয়ন করেছে। সে সময় এই আইনটি ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল ও পক্ষ প্রত্যাখ্যান করেছিল।'
মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ নিয়ে যে সংকট, তা সরাসরি ইসি তৈরি করেছে বলে উল্লেখ করে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, 'ইসি এই মামলায় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি এবং আপিলও করেনি। ফলে এটা খুবই স্পষ্ট যে তারা একটা দলের পক্ষ নিচ্ছে, একটা প্রার্থীর পক্ষ নিচ্ছে। এই কমিশনের ওপর জাতীয় নির্বাচন বা যেকোনো নির্বাচনের আস্থা রাখা যাচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দিকে যেতে হবে।'