ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত যুক্তরাজ্যের; রাষ্ট্রদূতকে তলব, নতুন নিষেধাজ্ঞা

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নতুন করে হামলা করায় ইসরায়েলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্য। এছাড়া ব্রিটেন ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত তিজপি হোটেভলিকে তলব করেছে এবং পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। মঙ্গলবার (২০ মে) দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এ ঘোষণা দিয়েছেন।
এর আগে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, গাজায় সামরিক হামলায় তিনি গভীরভাবে মর্মাহত।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গত সপ্তাহে গাজায় একটি নতুন সামরিক অভিযান শুরু করার ঘোষণা দেয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, পুরো গাজা নিয়ন্ত্রণে নেবে ইসরায়েল।
মার্চের শুরু থেকে গাজায় চিকিৎসা, খাদ্য ও জ্বালানির মতো জরুরি পণ্যের প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রেখেছে ইসরায়েল। এর ফলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, 'গাজায় চলমান সামরিক অভিযান অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি করার উপায় হতে পারে না।'
তিনি ইসরায়েলকে অবিলম্বে মানবিক সহায়তার ওপর আরোপিত অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানান এবং ইসরায়েল সরকারের একটি অংশ, যেটিকে তিনি 'চরমপন্থি' বলে আখ্যায়িত করেছেন, তাদের তীব্র সমালোচনা করেন।
ল্যামি ব্রিটিশ এমপিদের উদ্দেশে বলেন, 'নতুন করে এই হামলার ব্যাপারে আমরা চুপ থাকতে পারি না। এটি আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মূলভিত্তির সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।'
তিনি আরও বলেন, 'সোজা কথা বলতে গেলে, এটি ব্রিটিশ জনগণের মূল্যবোধের প্রতি অপমান। তাই আজ আমি ঘোষণা দিচ্ছি, আমরা এই ইসরায়েলি সরকারের সঙ্গে নতুন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা স্থগিত করছি।'
সোমবার ফ্রান্স ও কানাডার সঙ্গে এক যৌথ বিবৃতিতে ব্রিটেন গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সম্প্রসারণের নিন্দা জানিয়েছে এবং মানবিক সহায়তার ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এই তিন দেশ একত্রে জানিয়েছে, যদি ইসরায়েল তাদের নতুন সামরিক অভিযান বন্ধ না করে, তবে তারা 'আরও কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ' নেবে।
মঙ্গলবার সংসদে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার বলেন, 'আজ আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, ইসরায়েলের এই ধ্বংসাত্মক অবস্থান আমাদের আতঙ্কিত করেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা আবারও যুদ্ধবিরতির দাবি জানাচ্ছি—কারণ এটাই জিম্মিদের মুক্ত করার একমাত্র পথ। আমরা পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি নির্মাণের বিরোধিতা পুনর্ব্যক্ত করছি এবং গাজায় মানবিক সহায়তা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করার দাবি জানাচ্ছি।'
এছাড়া ব্রিটেন পশ্চিম তীরে কয়েকজন ব্যক্তি ও দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যাদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের ওপর সহিংসতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এর আগে ২০২৪ সালেও পশ্চিম তীরে কিছু অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ও সংগঠনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ব্রিটেন। তাদের বিরুদ্ধে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে সমর্থন করার অভিযোগ আনা হয়েছিল।
বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে ইসরায়েল যে ভূমি দখল করেছিল, সেখানে গড়ে ওঠা ইহুদি বসতিগুলোকে অবৈধ বলে মনে করে। এসব বসতির সম্প্রসারণ বহু দশক ধরে ইসরায়েল, ফিলিস্তিন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে অন্যতম বিতর্কিত ইস্যু হিসেবে রয়ে গেছে।
ল্যামি বলেন, 'আমরা আবারও প্রমাণ করছি যে, যারা নৃশংস মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে থাকব।'
ইসরায়েলের স্থল ও বিমান হামলায় গাজা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ২৩ লাখেরও বেশি বাসিন্দা গৃহহীন হয়েছে এবং ৫৩ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, তার দেশ 'বর্বরতার বিরুদ্ধে সভ্যতার যুদ্ধ' চালিয়ে যাচ্ছে এবং তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে ইসরায়েল 'ন্যায়সঙ্গত উপায়ে আত্মরক্ষা করে পুরোপুরি বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত এই লড়াই চালিয়ে যাবে।'