সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও আরেকটি ১/১১-এর পথ তৈরি না করার বিষয়ে সতর্ক করলেন হাসনাত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণ) হাসনাত আবদুল্লাহ সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক সালিশির ক্ষমতা প্রদান করে আরেকটি '১/১১'-এর পথ তৈরি না করার ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ (২২ মে) তিনি এক ফেসবুক পোস্টে এ কথা জানান। একই সঙ্গে এনসিপিপন্থী বলে অভিযোগ তুলে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগের দাবি জানানোয় বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সমালোচনা করেন তিনি।
হাসনাত লেখেন, 'সেনাবাহিনী সব সময় আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সতর্ক প্রহরীর ভূমিকা পালন করেছে। দেশের প্রয়োজনে ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমরা যুদ্ধে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকব। কিন্তু ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পেছনে যে গণতান্ত্রিক অধিকার ও সুষ্ঠু ক্ষমতা হস্তান্তরের আকাঙ্ক্ষা, সেখানে সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়।'
সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আহ্বানের পর তিনি এমন মন্তব্য করেন।
হাসনাত লেখেন, 'রাজনৈতিক সালিশির মাধ্যমে কেউ আবার '১/১১'-এর পথ তৈরি করছে কি না, সে বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।'
তিনি আরও লেখেন, 'আমাদের সাব-কনশাস মাইন্ডে [অবচেতন মনে] আর্মিকে রাজনৈতিক সালিশের ক্ষমতা দিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অথচ বিএনপি ঐতিহাসিকভাবে সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ভুক্তভোগী একটা দল। আমরা এখনো ওয়ান-ইলেভেনের ইতিহাস ভুলে যাইনি, এখনো তারেক রহমানের নির্যাতনের ঘটনা আমাদের স্মরণে রয়েছে।'
এনসিপি নেতার দাবি, পরিকল্পিতভাবে এনসিপিকে 'নির্বাচনবিমুখ' দল হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম গতকাল (২১ মে) দলীয় অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন বিষয়ে দলের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।
হাসনাত লেখেন, 'প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত সময়সীমা দিয়েছেন, আমরা তা সমর্থন করেছি। এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব। তবে একই সঙ্গে আমরা বিচার ও সংস্কারের দাবিও জানিয়েছি।'
তিনি আরও জানান, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ১০ মে একই বক্তব্য দিয়েছেন।
হাসনাত লেখেন, 'ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে—মাহফুজ ভাই এ বক্তব্য আগেই দিয়েছেন।'
তবে একই সময়ে 'ছাত্র উপদেষ্টারা দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে চান'—এমন গুজব ছড়িয়ে নেতিবাচক প্রচারণাও চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
হাসনাত প্রশ্ন তোলেন, 'যারা অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ, সেই দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ কেন চাওয়া হচ্ছে?'
তিনি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ ইস্যুতে সব রাজনৈতিক দলের ঐক্য চেয়েছেন।
হাসনাত লেখেন, 'আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ আন্দোলনে যারা পাশে ছিলেন, তাদের প্রতি আমাদের চিরকাল কৃতজ্ঞতা থাকবে। আওয়ামী লীগের বিচার এবং রাষ্ট্র সংস্কারের দাবিতে দ্রুত নির্বাচনের লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কোনো বড় দলের পক্ষ থেকে এই দাবির প্রতি অবহেলা আমাদের ব্যথিত করে।'
তিনি আরও লেখেন, 'যদি আমরা নিজেরাই বিভক্তির পথে যাই, তবে অন্যরা তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের সুযোগ পেয়ে যাবে। বিদেশি হস্তক্ষেপ ও অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক সম্ভাবনাকে হুমকির মুখে ঠেলে দেবেন না।'