কেরুর চিনি উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি: ২ বছরের প্রকল্পের মেয়াদ ১৩ বছর পর ফের বাড়ছে

হাইলাইটস
- কেরুর ৮৭ বছর পুরনো যন্ত্রপাতি বদলে চিনি উৎপাদন বাড়াতে এই প্রকল্প নেওয়া হয়
- ২০১২ সালে দুই বছরের মেয়াদ নিয়ে প্রকল্পটি শুরু হয়
- বারবার সময় বাড়ানোর পর ৪৬.৫৭ কোটি টাকার প্রকল্পের ব্যয় এখন ১০২ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে
- সরকার ও কেরু যৌথভাবে এ প্রকল্পের অর্থায়ন করছে
দেশের একমাত্র চিনি ও লিকার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেডের দীর্ঘদিন ধরে বিলম্বিত চিনি উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রকল্পের মেয়াদ ফের বাড়তে যাচ্ছে।
২০১২ সালে দুই বছর মেয়াদে এই প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু একের পর এক বিলম্বের কবলে পড়ে ১৩ বছর পরও পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করা যায়নি।
চলতি বছরের জুনেই প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, আখ মাড়াই মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন আর ট্রায়াল রান সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। শিল্প মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রস্তাব ইতিমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে।
প্রকল্পটি ২০২৫ সালের জুনে শেষ করার পরিকল্পনা থাকলেও যন্ত্রপাতির সমস্যার সমাধান না হওয়া এবং আখ মাড়াই মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা সম্ভব হয়নি বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আগামী মৌসুমে পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষামূলক উৎপাদনের নিশ্চিত করার জন্য গত ২৪ মার্চ শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে এক বছর সময় বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রকল্প পরিচালক ফিদা হাসান বলেন, প্রকল্পের সব কাজ প্রায় শেষ করে ট্রায়াল রানের জন্যও খেতে আখ প্রস্তুত রাখা হয়। তবে 'কিছু মেশিনে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ট্রায়াল রান করা যায়নি'।
তিনি টিবিএসকে বলেন, 'আখের মৌসুম শেষ হয়ে গেছে, ট্রায়াল রান করতে আগামী বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এজন্যই মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। স্টিয়ারিং কমিটির সভায় মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।'
কেরুর চিনি ইউনিট আধুনিকায়ন, প্রতিস্থাপন এবং উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে নেওয়া এই প্রকল্পের জন্য শুরুতে বরাদ্দ ছিল সরকারি অর্থায়নের ৪৬.৫৭ কোটি টাকা। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০১৪ সালের জুনে।
কিন্তু একের পর এক প্রকল্পের মেয়াদ ও বাজেট বাড়তে বাড়তে বর্তমানে ব্যয় দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি, ১০২.২১ কোটি টাকা। সরকার ও কেরু সম্মিলিতভাবে এই অর্থ দিচ্ছে।
কেরুর আর্থিক অবস্থা
১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত কেরুর চিনিকলের যন্ত্রপাতি পুরনো হওয়ায় আশানুরূপ চিনি উৎপাদন করতে পারছে না। ফলে চিনি ইউনিট থেকে বছর বছর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোকসান। আর্থিক প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে চিনি উৎপাদন থেকে যে আয়, তারচেয়ে তিনগুণ লোকসান হচ্ছে।
তবে মদ উৎপাদনে একচেটিয়া ব্যবসার কারণে কেরু সার্বিকভাবে মুনাফায় রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সুগার ইউনিটে লোকসান ৬১ কোটি টাকা, আর ডিস্টিলারি ইউনিটে মুনাফা ১৪৪ কোটি টাকা।
এতে সবমিলিয়ে ওই অর্থবছরে কেরুর নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৮৪ কোটি টাকা, যা আগের বছর ছিল ৬৪ কোটি টাকা।
সক্ষমতা বাড়ানোর প্রকল্প
কেরুর ৮৭ বছরের পুরনো চিনি ইউনিট প্রতিস্থাপন এবং আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল। শুরুতে দুবার এক বছর করে সময় বাড়ানো হয়। পরে প্রকল্পে বড় রকমের সংশোধন এনে বাজেট ও মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সাল পর্যন্ত করা হয়, যা ২০১৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন দেওয়া হয়।
তবু একের পর এক সময় বাড়ানো সত্ত্বেও কাজ শেষ হয়নি। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ছিল ৭৭.২৪ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি ৯৮ শতাংশ।
স্টিয়ারিং কমিটি মনে করছে, প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য একটি সম্পূর্ণ মাড়াই মৌসুমে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদনের মাধ্যমে ট্রায়াল রান সম্পাদন করতে হবে। সেজন্যই ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো প্রয়োজন।