জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতদের আর্থিক সহায়তা দিতে খসড়া অধ্যাদেশ প্রস্তুত সরকারের

আইনি কাঠামোর আওতায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থনে হতাহতদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে 'জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ছাত্র-জনতার কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ-২০২৫' নামে একটি খসড়া প্রণয়ন করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
রোববার (৪ মে) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত আন্তমন্ত্রণালয় কমিটিতে এই খসড়া পর্যালোচনা হয়েছে। শিগগিরই এটি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান শাখার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের আর্থিক সহায়তা, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের বিষয়গুলোকে আইনি কাঠামোর আওতায় আনতেই নতুন এই অধ্যাদেশ আনা হচ্ছে।
আর্থিক সহায়তা
খসড়া অনুযায়ী, অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবার এবং আহতদের আহতের ধরন অনুযায়ী আর্থিক সুবিধা দেওয়া হবে। প্রয়োজনে আহতদের দেশে ও বিদেশে চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া নিহতদের পরিবার ও আহতদের জন্য সঞ্চয়পত্র কিনে দেওয়া, এবং আহতদের মাসিক ভাতা প্রদানের বিষয়টিও এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, "শুরুতে নীতিমালার ভিত্তিতে এসব সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও পরে সিদ্ধান্ত হয় আইন প্রণয়নের মাধ্যমে এর স্থায়িত্ব দেওয়া হবে। এজন্য নতুন খসড়া তৈরি করা হয়েছে।"
"অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিংবা ভবিষ্যতে যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন, এই সুবিধাগুলো যাতে বন্ধ করতে না পারে, সে জন্যই আইনি কাঠামোর মধ্যে এনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে," যোগ করেন তিনি।
আহতদের পুনর্বাসন কীভাবে করা হবে—এমন প্রশ্নে একজন কর্মকর্তা জানান, "যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তর ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসন করা সম্ভব। বর্তমানে নিহতদের পরিবার ও আহতদের জন্য সঞ্চয়পত্র কেনা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া শেষ হলে আগামী জুলাই থেকে ভাতা দেওয়া শুরু হবে।"
তবে চাকরিতে অগ্রাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে খসড়া অধ্যাদেশে কিছু বলা হয়নি উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, "পুনর্বাসনের বিষয়টি আইনে উল্লেখ আছে, এখন কীভাবে তা বাস্তবায়ন করা হবে—সেই সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। এ বিষয়ে গাইডলাইনও প্রণয়ন করা হতে পারে।"
স্বীকৃতি ও পুনর্বাসন
২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের তালিকা সরকার গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে। ১৫ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ওই গেজেট অনুযায়ী, আন্দোলনে শহীদের সংখ্যা ৮৩৪ জন। যদিও 'জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন' দাবি করেছে, গেজেটে আরও ২৫ জন শহীদের নাম বাদ পড়েছে।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয় আহতদের তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করে তালিকা করেছে। এর মধ্যে 'ক' শ্রেণিতে গুরুতর আহত ৪৯৩ জন, 'খ' শ্রেণিতে ৯০৮ জন এবং 'গ' শ্রেণিতে ৯,৯২৫ জন রয়েছেন। এই আহতদের চিকিৎসা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা সরকার প্রদান করছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস সংরক্ষণ, নিহতদের পরিবার ও আহতদের পুনর্বাসন এবং গণ-অভ্যুত্থানের আদর্শকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে 'জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর' গঠন করা হয়েছে। এই অধিদপ্তরের মাধ্যমেই হতাহতদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। অধিদপ্তর গঠনের গেজেট গত ১২ এপ্রিল প্রকাশ করে সরকার।