গত বছর ৩৫,০০০ এর বেশি অসচ্ছল জনগণ সরকারি আইনি সহায়তা পেয়েছেন

দরিদ্র, নির্যাতিত ও অসচ্ছল মানুষদের জন্য বিনামূল্যে সরকারি আইনি সহায়তার পরিমাণ গত বছর উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এই সময়ে সরকারি আইনি সহায়তা গ্রহণকারী দরিদ্র ও অসচ্ছল নাগরিকের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা (এনএলএএসও)।
এই সংস্থার (লিগ্যাল এইড) উদ্যোগে সারাদেশে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩২ হাজার ১৬৬টি বিরোধ। ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৫২৬টি।
গত এক দশকে সংস্থার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ১২১টি বিরোধ। শুধু তাই নয়, সংস্থাটি প্রতিষ্ঠার পর ২০২৪ সালেই সর্বাধিক সংখ্যক মানুষকে আইনি সহায়তা দিয়েছে, যার সংখ্যা ৩৫ হাজার ২৩৪ জন।
আজ সোমবার (২৮ এপ্রিল) পালিত হচ্ছে 'জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস'। এবারের প্রতিপাদ্য, 'দ্বন্দ্বে কোনো আনন্দ নাই, আপস করো ভাই। লিগ্যাল এইড আছে পাশে, কোনো চিন্তা নাই।'
দিবসটি উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে র্যালি, আলোচনা সভা, মাইকিং, লিগ্যাল এইড মেলা, স্বাস্থ্য ক্যাম্প এবং ডকুমেন্টারি প্রদর্শনীসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীর ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে সকাল ১১টায় আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
২০০০ সালের ২৮ এপ্রিল জাতীয় সংসদে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন পাস হয় এবং ২০০১ সালে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে জনবল ও বিধির অভাবে প্রায় আট বছর সংস্থাটি কার্যকরভাবে কাজ করতে পারেনি।
২০০৯ সালে পুনর্গঠনের পর বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলায় সংস্থার কার্যালয় ও স্থানীয় কমিটি রয়েছে।
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক (জেলা জজ) সৈয়দ আজাদ সুবহানী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "গত বছর লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে সর্বাধিক মানুষ আইনি সহায়তা পেয়েছেন। আমরা আদালতের বাইরে আপোষের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতেও গুরুত্ব দিচ্ছি। এতে সময়, শ্রম ও অর্থের সাশ্রয় হয় এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।"
জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালের পর থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত সরকারি আইনি সহায়তা নিয়েছেন ৪ লাখ ১৩ হাজার ৬৮৭ জন। এর মধ্যে ২ লাখ ৫ হাজার ৯০৩ জন পুরুষ, ২ লাখ ৫ হাজার ৮২৩ জন নারী এবং ১ হাজার ৯৫৯ জন শিশু।
একই সময়ে সংস্থার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ১৫১টি মামলা—এর মধ্যে ২৬ হাজার ৯২৫টি দেওয়ানি, ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৬৮টি ফৌজদারি, ৪৫ হাজার ৫২৪টি পারিবারিক এবং ১ হাজার ৪৩৪টি অন্যান্য মামলা।
পরিসংখ্যান বলছে, শুরুতে পুরুষদের মধ্যে আইনি সহায়তা নেওয়ার প্রবণতা বেশি থাকলেও ২০১৬ সালের পর নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বর্তমানে নারী ও পুরুষের সেবা গ্রহণের হার প্রায় সমান।
২০১৩ সাল থেকে শ্রমিকদের জন্য আলাদা 'শ্রমিক আইন সহায়তা সেল' চালু হয়। তখন থেকে গত মার্চ পর্যন্ত এই সেল থেকে আইনি সহায়তা নিয়েছেন ২১ হাজার ৪২৬ জন শ্রমিক।
এছাড়া, বিরোধ মীমাংসা ও মামলা নিষ্পত্তির মাধ্যমে আদায় করা ৬৩ কোটি ২৬ লাখ ২৬ হাজার ২১৫ টাকা ক্ষতিপূরণ শ্রমিকদের প্রদান করা হয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার ৪৬৫টি।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির কার্যক্রম শুরু হয়। তারপর থেকে গত মার্চ পর্যন্ত জেল আপিলসহ দেওয়ানি ও ফৌজদারি মিলিয়ে ২ হাজার ২৮৬টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বর্তমানে হাইকোর্টের একাধিক বেঞ্চ বিনা বিচারে আটক আসামিদের আইনি সহায়তা দিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
আইনি সহায়তার জন্য যেকেউ সংস্থার টোল-ফ্রি হটলাইন ১৬৪৩০-এ কল করে সেবা নিতে পারেন।
কারা পাবেন বিনামূল্যে আইনি সহায়তা
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, কারও বার্ষিক আয় যদি আয়করযোগ্য সীমার নিচে হয়, তাহলে সেই ব্যক্তি আইনি সহায়তার জন্য যোগ্য। এছাড়া— কর্মক্ষম নন, আংশিক কর্মক্ষম বা কর্মহীন ব্যক্তি; ভিজিডি কার্ডধারী দুস্থ নারী; পাচার বা অ্যাসিড হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত নারী ও শিশু; উপার্জনে অক্ষম ও সহায়-সম্বলহীন প্রতিবন্ধী; মুক্তিযোদ্ধা (যাদের বার্ষিক আয় দেড় লাখ টাকার বেশি নয়); শ্রমিক (যাদের বার্ষিক আয় এক লাখ টাকার বেশি নয়); ভাতা পাওয়া বয়স্ক ব্যক্তি, গৃহ বা ভূমি বরাদ্দপ্রাপ্ত দরিদ্র ব্যক্তি; বিনা বিচারে আটক এবং আর্থিকভাবে অসচ্ছল আসামি।
লিগ্যাল এইডের কাঠামো
প্রতিটি জেলা জজ আদালতে লিগ্যাল এইড অফিস রয়েছে। একজন সহকারী বা সিনিয়র সহকারী জজ পদমর্যাদার বিচারক লিগ্যাল এইড অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রতিটি জেলা অফিসে আইনজীবী প্যানেল রয়েছে এবং সরকার মামলা পরিচালনার ব্যয় বহন করে।
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি (এডিআর) অনুসরণ করে সরাসরি বিরোধ নিষ্পত্তিরও সুযোগ রয়েছে।