বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে শ্রমিকদের জন্য কম খরচে আবাসনের পরিকল্পনা বেজা’র

শিল্পায়নের প্রসারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শ্রমিকদের আবাসন সংকট দূর করতে দেশের বৃহত্তম শিল্পাঞ্চল 'ন্যাশনাল স্পেশাল ইকোনমিক জোনে' (এনএসইজেড) স্বল্পমূল্যের আবাসন প্রকল্প হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।
এ লক্ষ্যে এনএসইজেড এলাকার মধ্যেই শ্রমিকদের জন্য আবাসন নির্মাণে বিনিয়োগকারীদের জমি বরাদ্দ দেওয়ার পাশাপাশি কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করবে বেজা। বুধবার (১৬ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বেজার বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, শ্রমিকদের আবাসন নির্মাণের জন্য প্রায় এক হাজার কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এনএসইজেডে যেসব বিনিয়োগকারীর জমি রয়েছে, তারা ৫ শতাংশ সরল সুদে আবাসন নির্মাণের জন্য এই ঋণ সুবিধা পাবেন।
তবে বেজার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই প্রকল্প প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং বাস্তবায়নের আগে আরও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
এ বিষয়ে এনএসইজেড উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ফারুক বলেন, "শ্রমিকদের সাশ্রয়ী আবাসনের জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। বিনিয়োগকারীদের জমি দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় কম সুদে অর্থায়নের ব্যবস্থা করা হবে।"
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় ৩৩ হাজার ৮০৫ একর জমিতে গড়ে উঠছে ন্যাশনাল স্পেশাল ইকোনমিক জোন। বর্তমানে সেখানে ১১টি কারখানা উৎপাদনে রয়েছে, আরও কয়েকটি নির্মাণাধীন।
আবাসন ও যাতায়াত সংকট
বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, শিল্প কার্যক্রম বৃদ্ধি পেলেও শ্রমিকদের জন্য আবাসনের অভাব একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে উঠেছে। ফলে অনেক কারখানাই পুরোদমে উৎপাদনে যেতে পারছে না। পাশাপাশি পরিবহন সুবিধার অভাবে দূরবর্তী অঞ্চল থেকে শ্রমিক আনা-নেওয়ায় ব্যয় ও সময়—দুটিই বাড়ছে।
আবাসনের অভাবে স্থানীয়রা সড়কের পাশে অপরিকল্পিতভাবে অস্থায়ী ঘর তৈরি করে শ্রমিকদের কাছে ভাড়া দিচ্ছেন। এ ধরনের অপরিকল্পিত গৃহায়ন ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যার কারণ হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বেজার মাস্টারপ্ল্যানে ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চলে নির্ধারিত আবাসিক এলাকা থাকলেও, এখনও সেই জমি অধিগ্রহণ শেষ হয়নি।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল বিনিয়োগকারী সমিতি (বেজিয়া)-এর প্রতিনিধিরা বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের সঙ্গে বৈঠক করে অবকাঠামো ও আবাসন সমস্যার দ্রুত সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।
বেজিয়া'র প্রধান নির্বাহী অপরূপ চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা বেজাকে শ্রমিকদের জন্য আবাসন ও যাতায়াতসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছি।"
এর আগে গত ১৩ অক্টোবর, বেজার অষ্টম গভর্নিং বোর্ড সভায় বোর্ড সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বেও আবাসন সংকট নিয়ে আলোচনা হয়। ওই সভায় মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী জমি অধিগ্রহণ দ্রুত সম্পন্ন করার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অংশগ্রহণে কম সুদে ঋণ বিতরণের প্রস্তাব ওঠে।
এছাড়া, বিনিয়োগকারীদের আবাসনের ঋণ সহজ করতে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের একটি শাখা বা বুথ মিরসরাইতে চালুর সুপারিশও করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত ন্যাশনাল স্পেশাল ইকোনমিক জোনে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে প্রায় ১৯ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে।
বেজার তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে এখানে সক্রিয় বিনিয়োগকারী রয়েছেন ১৫৫ জন। আগামী কয়েক বছরে এখানে অন্তত ৫০০টি শিল্প-কারখানা স্থাপিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।