ফোনালাপের আগেই ‘অনেক বিষয়ে’ একমত হয়েছেন পুতিন: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন, ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় চুক্তির বেশ কয়েকটি বিষয়েই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একমত হয়েছেন। খবর বিবিসির।
ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ এক পোস্টে জানান, তিনি মঙ্গলবার সকালে পুতিনের সঙ্গে কথা বলবেন।
ট্রাম্প বলেন, অনেক বিষয়ে একমত হলেও এখনও অনেক কিছু বাকি রয়েছে।
ট্রাম্প পোস্টে আরও বলেন, "প্রতি সপ্তাহে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রায় আড়াইশো সেনা সদস্য মারা যাচ্ছে। এটি এখনই বন্ধ হওয়া উচিত। আমি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছি।"
এর আগে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, "আমরা দেখব, শান্তি চুক্তি, যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা সম্ভব কি না। আমি মনে করি, আমরা তা করতে সক্ষম হব।"
সোমবার রাতে এক ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পুতিনকে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার জন্য দায়ী করেন।
তিনি বলেন, "এই প্রস্তাব অনেক আগেই বাস্তবায়ন করা যেত।"
যুদ্ধবিরতি আলোচনা কতদূর অগ্রসর হয়েছে, সে বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতরেই মতবিরোধ রয়েছে।
ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে জেদ্দায় বৈঠকের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, "আলোচনার বেশিরভাগ অংশ ছিল আলোচনার প্রক্রিয়া কেমন হবে সে বিষয়ে। সেখানে কোনো নির্দিষ্ট শর্ত নিয়ে কথা হয়নি।"
গত বৃহস্পতিবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফ মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি এ বিষয়ে বলেন, "পুতিন তুলনামূলক সংযত সুরে মন্তব্য করেছেন।"
এদিকে, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স পুতিনকে ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে আসার আহ্বান জানিয়েছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখো জেলেনস্কির যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়ার 'সাহস'কে স্বাগত জানিয়েছেন এবং রাশিয়াকেও একই পথে এগোনোর চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এক্স-এ করা এক পোস্টে ম্যাঁখো বলেন, "যথেষ্ট মৃত্যু হয়েছে। যথেষ্ট জীবন ধ্বংস হয়েছে। যথেষ্ট ধ্বংস হয়েছে। এখন বন্দুকগুলোকে অবশ্যই নীরব হতে হবে।"
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামি বলেছেন, পুতিনের এখনই পূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়া উচিত। এমপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পুতিন সত্যিই শান্তি চুক্তি নিয়ে আগ্রহী এমন কোনো ইঙ্গিত তিনি দেননি।
তিনি সতর্ক করে দেন যে যুক্তরাজ্য ও তার মিত্রদের হাতে আরও সুযোগ রয়েছে। এসব সুযোগ রাশিয়াকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করতে পারে।
এদিকে, হোয়াইট হাউস ট্রাম্প-পুতিন আলোচনার আগে ইতিবাচক সুরে বলেছে, যা ফোনে অনুষ্ঠিত হবে, যে ইউক্রেনে শান্তি 'কখনোই এত কাছাকাছি ছিল না'।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাম্প শান্তি চুক্তি নিশ্চিত করতে 'সংকল্পবদ্ধ'।
আলোচনায় কী বিষয় উঠে আসতে পারে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'রাশিয়া ও ইউক্রেনের সীমান্তে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। আগামীকাল পুতিনের সঙ্গে ফোন কলে ট্রাম্প এ বিষয়টি উত্থাপন করবেন।'
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ইউরোপের বৃহত্তম জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটি ২০২২ সালের মার্চ থেকে রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অঞ্চলটিতে চলমান সংঘাতের কারণে সেখানে পারমাণবিক দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়ে গেছে।
রবিবার যুদ্ধবিরতি আলোচনায় কী ধরনের ছাড় দেওয়া হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, 'আমরা ভূমি নিয়ে আলোচনা করব। আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিষয়ে কথা বলব। আর কিছু সম্পদের ভাগাভাগি নিয়েও আলোচনা চলছে।"
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ নেতাদের আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, "আমরা কখনোই তা করি না।"
পুতিন আগে যুদ্ধবিরতির পক্ষে সমর্থন জানালেও তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বেশ কিছু শর্তের তালিকা তুলে ধরেছেন।
বিতর্কের অন্যতম বিষয় হলো রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় কুরস্ক অঞ্চল, যেখানে গত আগস্টে ইউক্রেন সামরিক অভিযান চালিয়ে কিছু এলাকা দখল করে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাশিয়া অঞ্চলটি পুনরুদ্ধারের জন্য আক্রমণ চালায় এবং পুতিন এখন দাবি করছেন, কুরস্ক পুরোপুরি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে ফিরে এসেছে।
তিনি যুদ্ধবিরতি কীভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং ফ্রন্টলাইনের বিভিন্ন অঞ্চলে নিরাপত্তা কেমন থাকবে, এসব বিষয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন। পাশাপাশি তিনি স্পষ্ট করেছেন যে এই অঞ্চলে ন্যাটো সেনাদের উপস্থিতি তিনি মেনে নেবেন না।
গত সপ্তাহে সৌদি আরবে ইউক্রেনীয় ও মার্কিন প্রতিনিধিরা শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় বসেন।
দীর্ঘ সময় আলোচনার পর তারা ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ঘোষণা করে, যা ইউক্রেন গ্রহণ করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ কানাডার নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি মঙ্গলবার সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তারা, জোর দিয়ে বলেছেন তারা ইউক্রেনের প্রতি 'অটল' সমর্থন বজায় রাখবে এবং রাশিয়ার কাছ থেকে 'স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি' দাবি করবে।