মব ও রাজনৈতিক দলগুলোর চাপে পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে: ড. ইউনূসকে পুলিশ

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ ও মব বৃদ্ধির কারণে পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
আজ সোমবার (১৭ মার্চ) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তারা এ কথা জানান।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের হওয়া আলাপের বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'প্রধান উপদেষ্টা নিবার্চনের জন্য পুলিশকে প্রস্তুত হতে বলেছেন। কিন্তু আমরা বলেছি, মাঠপর্যায়ে পুলিশ যেভাবে মার খাচ্ছে, তাতে খুব দ্রুত পুলিশের ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর নানামুখী চাপে পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মবের উপদ্রব। পুলিশকে বাঁচাতে হলে, মব বন্ধ করতে হবে।'
আরও পড়ুন: ডিসেম্বরে নির্বাচন—আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে জোরালো চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে: পুলিশকে ইউনূস
তিনি আরও বলেন, 'জুলাই অভ্যুত্থানে কেবল দোষী পুলিশ সদস্যদের বিচারেরর মুখোমুখি করে বাকি পুলিশ সদস্যদের নির্বিঘ্নে কাজ করা সুযোগ দিতে হবে। তবেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।'
বৈঠকে এক রেঞ্জ উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পুলিশকে কীভাবে পুনরায় সক্রিয় করা যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
এছাড়া পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বেশ কিছু বিষয়ে অস্পষ্টতা ও কিছু দরকারি সুপারিশ না থাকার কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার কাছে পুলিশ সদস্যরা তাদের আক্ষেপগুলো জানিয়েছেন। স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের উদ্যোগ না নেওয়ার বিষয় নিয়েও কথা বলেছেন অনেকেই।
বৈঠকে উপস্থিত বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য জানান, পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রেখে পেশাদারত্বের সঙ্গে পরিচালনার জন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু থেকেই আলোচনা ছিল। কিন্তু সংস্কার কমিশন এ বিষয়ে কোনো রূপরেখা দেয়নি।
এ বিষয়ে অবশ্য সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত এবং 'পরীক্ষা-নিরীক্ষা' ও 'বিচার-বিশ্লেষণ' করা প্রয়োজন।
পুলিশ সদস্যরা আরও জানিয়েছেন, পুলিশ সদস্যদের অপরাধ তদন্তে স্বতন্ত্র অভিযোগ কমিশন গঠনের সুপারিশ না থাকা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে পুলিশ সংস্কারের বিষয়টি না রাখাসহ কিছু বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এর বাইরে জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত পুলিশ সদসদ্যের মামলার বিচার না করা গেলে, পুলিশের মনোবল ফেরানো সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
বৈঠকে রাজশাহীর পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম কেরানীগঞ্জে পুলিশের জন্য স্থায়ী আবাসস্থল নির্মাণে অন্তবর্তী সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
আরেক পুলিশ সুপার টহল ডিউটিতে পুলিশের গাড়ি বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য দাবি জানিয়ে বলেন, অনেক সময় ভাঙাচোরা গাড়ি নিয়ে ডিউটি করতে হয়। আসামি ধরা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে ব্যবহৃত গাড়ির সংখ্যা কম।
যানবাহন সমস্যার সমাধান না করা গেলে জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী জন-আকাঙ্ক্ষার পুলিশ তৈরি করা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।