বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ: এক দিনের মাথায় দুজনের পদত্যাগ, পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি ঘোষণা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের নতুন ছাত্র সংগঠন 'বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ' ২০৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছে।
তবে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশের একদিনের মধ্যেই এটির শীর্ষপদের দুজন পদত্যাগ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন এটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব রিফাত রশিদ।
এরপর রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এক পোস্টে সংগঠন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন এটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী সজীব।
এর একদিন আগে বুধবার মধুর ক্যান্টিনের সামনে নতুন এই ছাত্র সংগঠনের ঘোষণা দেন আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার।
তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই সংগঠনটির পদ-পদবি নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল শুরু হয়, যা একপর্যায়ে হাতাহাতিতে রূপ নেয়।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার সংবাদ সম্মেলনে জানান, এ 'বিশৃঙ্খলার' ঘটনায় তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী সজীব তার ফেসবকু পোস্টে বলেন, 'নতুন বন্দোবস্তের নামে ঢাকা ও ঢাবিকেন্দ্রিক নয়া ফ্যাসিবাদী মনোভাবের যে উত্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তার প্রতিবাদেই আমি এই প্লাটফর্মে থাকতে রাজি না।'
'রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য স্টেইকদেরকে [আন্দোলনের অংশীজন] বিপ্লব-পরবর্তী সময় থেকে যেভাবে বিভাজন করা হয়েছে, সেই বিভাজনের রাজনীতিতে আমার পক্ষে থাকা সম্ভব নয়,' তিনি আরও বলেন।
'আমার স্পষ্ট বার্তা হলো–ঢাকা ও ঢাবিকেন্দ্রিক ফ্যাসিবাদী মনোভাব থেকে যতদিন না এই দলের অংশীজনরা বেরিয়ে আসতে পারবে, বিকেন্দ্রীকরণের দিকে মনোনিবেশ করবে, ততদিন অবধি আমি তাদের সাথে কোনো ধরনের রাজনৈতিক বোঝাপড়ায় যাবো না। আর তাই আমি উক্ত পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।'
বুধবার সংগঠনের নাম ঘোষণার আগে মধুর ক্যান্টিনের ভেতরে ও বাইরে দুটি গ্রুপকে মুখোমুখি স্লোগান দিতে দেখা যায়। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন, মল চত্বর ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে দফায় দফায় হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, নতুন সংগঠনে তাদের যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি, পদবঞ্চিত করা হয়েছে।
সংগঠনের আত্মপ্রকাশের পর জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর সমন্বয়কেরা রাজনীতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'আধিপত্য' নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বুধবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যালয়ের সামনে বাংলামোটরে এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এসব ঘটনার পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলের এ সংবাদ সম্মেলন ডাকে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ-এর মূলনীতি নির্ধারণ করা হয়েছে 'শিক্ষা, ঐক্য, মুক্তি'। সংগঠনের স্লোগান—'স্টুডেন্ট ফার্স্ট, বাংলাদেশ ফার্স্ট'।
কেন্দ্রীয় কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন আবু বাকের মজুমদার। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম, সদস্য সচিব জাহিদ আহসান, মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরী এবং মুখপাত্র আশরেফা খাতুন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক দপ্তর সেল সম্পাদক জাহিদ আহসান জানান, সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন আব্দুল কাদের।
এছাড়া সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন লিমন মাহমুদ হাসান, সদস্য সচিব মহির আলম, সিনিয়র সদস্য সচিব আল আমিন সরকার, মুখ্য সংগঠক হাসিব আল ইসলাম এবং মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন রাফিয়া রেহনুমা হৃদি।