রাজনীতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আধিপত্য’ নিয়ে ক্ষোভ: সংবাদ সম্মেলন করবে নতুন সংগঠন

জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর সমন্বয়করা রাজনীতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'আধিপত্য' নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
গতকাল বুধবার বিকেলে নতুন ছাত্র সংগঠন 'বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ' এর আত্মপ্রকাশকে ঘিরে সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও উত্তরার শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করলে এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এদিকে এ পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে জরুরি সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ।
এর আগে বুধবার সকালে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ এ 'গণঅভ্যুত্থান থেকে নতুন রাজনৈতিক দল- সাহসী নারী নেতৃত্ব' শীর্ষক একটি ছবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকার নারী আন্দোলনকারীদের ছবি শেয়ার দেওয়া হয়।
এর প্রতিবাদে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব তৌহিদ মোহাম্মাদ সিয়াম ফেসবুকে লিখেন, "রিসার্চ টিমকে আরেকটু উদারতা ও দক্ষতার সাথে কাজ করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা ঢাকা কেন্দ্রিক নীচু মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এমনি তো সব নিয়েছেন। ছবিতে অন্তত অন্য মানুষদের জায়গা দেন।"
এছাড়াও ছবিটি শেয়ার দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয় সব স্থানের নারীদের প্রতিনিধিত্ব করতে না পারলে এমনি ছবি শেয়ার করা বৈষম্যমূলক।
এছাড়া নতুন দলে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক হওয়া তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম গত ১৩ ফেব্রুয়ারি লিখেন, যেই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত মূল ঢাকার বাইরের কোনো রাজনীতিকে স্বীকার করতে চায় না, মূল্যায়ন করে না সেই নতুন রাজনীতিকে নিয়ে ভিন্নভাবে ভাবতে হবে।
এদিকে বুধবার মধুর ক্যানটিনের ঘটনার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক জাহান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, নতুন রাজনীতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কেন্দ্রিক হওয়া বন্ধ করা উচিত। গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি একই ধরনের কথা ফেসবুকে লিখেছেন রাফি।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার ফেসবুকে লিখেন, "এখানে ক্যাচাল বহুমাত্রিক। ঢাবি, ঢাবি ছাত্রশক্তি, প্রাইভেট ,সাত কলেজ, অন্যান্য পাবলিক, ন্যাশনাল, মাদ্রাসা। সবাই অংশ চায় কিন্তু পদ মাত্র ৪টা (পরবর্তীতে ৬টা করা হয়) সবাই যার যার অংশ চায়।"
সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, "আর একটা চরম বাস্তবতা হলো পাবলিক স্পিয়ার ঢাকায় হওয়ায় সেখানে অবস্থান না করে এই ৬টা মেইন পদ নিয়েও কিছুই করতে পারবো না ঢাকার বাইরে থেকে। শুধু শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এই ৬টা মেইন পদ নিয়ে কামড়াকামড়ি করলাম না কিন্তু জবি, সাত কলেজ, প্রাইভেট সব ঢাকাতে থাকার পরেও একটা অংশ পেলোনা। প্রাইভেটের শিক্ষার্থীদের একাংশ মূলত এসেছিল রিফাত রশিদ ভাইয়ের সদস্য সচিব চাওয়ার জন্য। আমরা প্রাইভেট, সাত কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাবি সকল প্রতিনিধিদের সাথে বসি তখন তারা যে যার যার মতো দরকষাকষি করে। কিন্তু আল্টিমেটলি কেউ কিছুই পায়নি। বরং একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হলো।"
তিনি আরো বলেন, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক আধিপত্যটাই আসলে আমাকে টানছে না।"
এদিকে 'পদ-পদবি' নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে মারামারি হওয়ার পর বুধবার রাতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যালয়ের সামনে বাংলামোটরে ১ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক এম জে এইচ মঞ্জু বলেন, "নতুন বাংলাদেশ অর্জনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ছিল। নতুন বাংলাদেশে কেউ তাদের গায়ে হাত দেবে, এটা তারা মানতে পারেন না। অথচ নতুন ছাত্রসংগঠনের আত্মপ্রকাশের সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হলো। নারী শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছিতও করা হয়েছে।"
তিনি আরো বলেন, "হামলায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আটজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। হামলার বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। তাতেও হামলাকারীদের বিষয়ে কোনো সুরাহা যদি না হয়, তাহলে ২৮ ফেব্রুয়ারি 'ঢাকা ব্লকেড' করা হবে।"
নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতিতে গঠিত নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখমাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, "পুরান রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে আর রাজনৈতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্তর থেকে উত্তরণ সম্ভব হলো না। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক পরাজয়।"