গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ থেকে আরও ২ জনের পদত্যাগ

নতুন ছাত্রসংগঠন 'গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ' থেকে রিফাত রশীদ ও মেহেদী সজীবের পর পদত্যাগ করেছেন ১ নম্বর যুগ্ম সদস্যসচিব সালাহউদ্দিন আম্মার ও সংগঠক শ্যামলী সুলতানা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিপত্যের অভিযোগ তুলে আম্মার ও সজীব পদত্যাগ করেন। আর শ্যামলী সুলতানা ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছেন।
অন্যদিকে রিফাত রশীদ তাকে 'মাইনাসের' অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন।
এ নিয়ে আত্মপ্রকাশের দুই দিনের মধ্যে মোট ৪ জন কেন্দ্রীয় নেতা সংগঠনটি থেকে পদত্যাগ করলেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার পদত্যাগের কারণ জানিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, 'ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলটা সর্বজনীন হতে পারত, কিন্তু তাদের বর্তমান অবস্থানের কারণে দলটার প্রতি শিক্ষার্থীরা বিশ্বাস রাখতে পারছে না। আমাদের জুলাই অভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল শিক্ষার্থীরা। সেই শিক্ষার্থীদের পালশের বাইরে গিয়ে আমার রাজনীতি করা সম্ভব নয়।'
তিনি আরও লেখেন, 'আমাদের কাছে শিক্ষার্থীদের পালসটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রাবি শিক্ষার্থীরা চাচ্ছে না এই ঢাবি আধিপত্যের পক্ষে থাকতে, তাই আমরাও চাচ্ছি না। শিক্ষার্থীরা না চাইলে আমরা কিছুই না।'
ইউনিভার্সিটি অভ লিবারেল আর্টসের (ইউল্যাব) শিক্ষার্থী শ্যামলী সুলতানা ফেসবুকে লিখেছেন, 'জুলাই/অগাস্টের পর আর সবার মতো আমার মনেও নানা আশা-আকাঙ্ক্ষার উদয় হয়েছে যার পুরোটা জুড়ে ছিলো দেশের মানুষের জন্য কিছু করা এবং গতানুগতিক রাজনৈতিক ধারার পরিবর্তন। কাজেই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করে এর ভিতকে মজবুত করার জন্য দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছি। যখন মনে হয়েছে, হাতে সময় কম তবে কাজ অনেক; ঠিক তখনই সেমিস্টার ড্রপ দিয়ে এই জায়গাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। চলমান সেমিস্টারেও বেশিরভাগ ক্লাস করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। তবে বিশেষ কারণে সবকিছু থেকে আজ ইস্তফা দিতে হচ্ছে।'
৬ নম্বর যুগ্ম আহবায়ক মেহেদী সজীব লেখেন, 'আজ ''বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ''-এর কেন্দ্রীয় কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে আমার নাম বলা হয়েছে। গতকাল রাতেও এ নিয়ে আমি আমার স্ট্যান্ড ক্লিয়ার করেছি। এখনও বলছি। নতুন বন্দোবস্তের নামে ঢাকা ও ঢাবিকেন্দ্রিক নয়া ফ্যাসিবাদী মনোভাবের যে উত্থান লক্ষ করা যাচ্ছে তার প্রতিবাদেই আমি এই প্লাটফর্মে থাকতে রাজি না।'
সজীব আরও লেখেন, 'আমার ইচ্ছা ব্যতীত এই দলে আমাকে সম্পৃক্ত করার জন্য নিন্দা জানাচ্ছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যই আমি আজ মেহেদী সজীব হিসেবে গড়ে উঠতে পেরেছি। আমার স্পষ্ট বার্তা হলো, ঢাকা ও ঢাবিকেন্দ্রিক ফ্যাসিবাদী মনোভাব থেকে যতদিন না এই দলের অংশীজনরা বেরিয়ে আসতে পারবে, বিকেন্দ্রীকরণের দিকে মনোনিবেশ করবে, ততদিন অবধি আমি তাদের সাথে কোনো ধরনের রাজনৈতিক বোঝাপড়ায় যাব না। আর তাই আমি উক্ত পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।'
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের নতুন ছাত্র সংগঠন 'বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ' ২০৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার।
সংবাদ সম্মেলনের পর ফেসবুকে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাসে রিফাত রশিদ তার পদত্যাগের কারণ জানান। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, 'নতুন ছাত্র সংগঠনে প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিল আমি সদস্য সচিব হবো। এরপর আমাকে সেখান থেকে সরিয়ে মুখ্য সংগঠক, পরবর্তীতে সেখান থেকেও সরিয়ে মুখপাত্র করার প্রস্তাবনা করে। সবশেষে সেখান থেকেও মাইনাস করে আমাকে সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব পদে আসার প্রস্তাব করে। মুখপাত্র পোস্ট পর্যন্ত প্রতিটা ক্ষেত্রেই আমি কালেক্টিভ স্বার্থের কথা ভেবে মেনে নিয়েছি। যখন যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবে নাম প্রস্তাব করা হয় তখন আমি স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দেই, এই ছাত্র সংগঠনে আমি থাকব না।'