ফ্যাসিস্টের দোসররা গণ-অভ্যুত্থানের অর্জন নস্যাৎ করতে গভীর চক্রান্তে লিপ্ত: খালেদা জিয়া

পতিত সরকার গণঅভ্যুত্থানের অর্জনকে নস্যাৎ করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
আজ বৃহস্পতিবার বিএনপির বর্ধিত সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। বেলা ১১টার দিকে সভা শুরু হয়, যেখানে সভাপতিত্ব করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বক্তব্য রাখেন খালেদা জিয়া। সাত বছর পর দলের কোনো বড় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিলেন তিনি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে খালেদা জিয়া তার বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, 'আজ দীর্ঘ ছয় বছর পর আপনারা আবার একসাথে ফ্যাসিস্ট মুক্ত বাংলাদেশে একত্রিত হতে পেরেছেন। সেজন্য আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া আদায় করছি। দীর্ঘ ফ্যাসিবাদীবিরোধী সংগ্রাম যারা শহীদ হয়েছেন এবং সম্প্রতি জুলাই আগস্টের ফ্যাসিবাদী শাসকদের নির্মম ভয়াবহ দমননীতির কারণে গণহত্যায় যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। যারা আহত হয়েছেন তাদের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক সমবেদনা। আমি চিকিৎসার কারণে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করলেও আমি সবসময় আপনাদের পাশেই আছি'।
তিনি বলেন, 'দীর্ঘ ১৫ বছর গণতন্ত্রের জন্য, আমার মুক্তির জন্য আপনারা যে নিরন্তন সংগ্রাম করেছেন এবং আমাদের অসংখ্য সহকর্মী প্রাণ দিয়েছেন, জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং প্রায় সোয়া লক্ষ মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়েছে। এখনো আদালতের বারান্দায় ন্যায়বিচারের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আপনাদের এ ত্যাগ শুধু দল নয়, জাতি চিরকাল স্মরণ রাখবে'।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনি বলেন, দেশ আজ এক সংকটময় সময় অতিক্রম করছে। আপনাদের এবং ছাত্রদের সমন্বিত আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিস্ট শাসকেরা বিদায় নিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা রাষ্ট্র মেরামতের ন্যূনতম সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন সম্পন্ন করা।
খালেদা জিয়া বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি আপনারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে আরও উজ্জীবিত হয়ে আগামী নির্বাচনে সাফল্যের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। এমন কোনো কাজ করবেন না যাতে আপনাদের এতদিনকার সংগ্রাম আত্মত্যাগ বিফলে যায়।'
তিনি বলেন, 'আমাদের সবসময় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সেই উক্তি মনে রাখা দরকার। ব্যক্তির চেয়ে দল বড় দলের চেয়ে দেশ। বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ বিশেষ করে তরুণ সমাজ আজ এক ইতিবাচক গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।'
পতিত সরকার গণঅভ্যুত্থানের অর্জনকে নস্যাৎ করার গভীর ষড়যন্তে লিপ্ত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংকীর্ণতা ভুলে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের কাজ করতে হবে। এখনও ফ্যাসিস্টের দোসররা এবং বাংলাদেশের শত্রুরা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্জনকে নস্যাৎ করার জন্য গভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে'।
'ইস্পাত কঠিন ঐক্যের মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দিতে হবে। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে', যোগ করেন তিনি।
'সুদৃঢ় ঐক্যই রুখে দিতে পারে সকল ষড়যন্ত্র' স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে এবারের বর্ধিত সভা করছে বিএনপি। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত ৬ স্তরের সাড়ে ৩ হাজার নেতারা এই বর্ধিত সভায় অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সকাল ১০টায় সভা শুরুর কথা থাকলেও বেলা ১১টার দিকে এটি শুরু হয়। সকাল সাড়ে নয়টা থেকেই আমন্ত্রিত নেতারা এলডি হল সংলগ্ন মাঠে আসতে শুরু করেন।

পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সভা শুরু হয়। এরপর এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালনের জন্য শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এরপর সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
কেন্দ্রীয় দপ্তর জানায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সকল কর্মকর্তা ও সদস্যরা, সকল মহানগর, জেলা, থানা-উপজেলা-পৌর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবরা রয়েছেন। এছাড়া বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবররা রয়েছেন। এছাড়াও ২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী এবং মনোনয়ন ইচ্ছুক যেসব প্রার্থী প্রাথমিক পত্র পেয়েছিলেন তারাও এই সভায় রয়েছেন।