নগদের প্রশাসক বদিউজ্জামানের ওপর হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিক্ষোভ

বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ-এর প্রশাসক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক বদিউজ্জামান দিদারের ওপর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সবুজ দলের নেতৃত্বে সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদ এই প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক জনাব মোহাম্মদ রোকনুজ্জামানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক আনিসুর রহমান, সবুজ দলের সভাপতি মিজানুর রহমান আকন, ভুক্তভোগী কর্মকর্তা বদিউজ্জামান দীদার, অতিরিক্ত পরিচালক অমিতাভ চক্রবর্তী, জিয়া পরিষদের প্রেসিডেন্ট আব্দুল কুদ্দুস ও যুগ্ম-পরিচালক সাহেদুল ইসলাম।
বক্তারা বদিউজ্জামান দিদারের ওপর হামলাকে পরিকল্পিত সন্ত্রাসী আক্রমণ বলে আখ্যায়িত করেন এবং হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
তারা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বক্তারা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের হামলার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগের পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, "গত ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট সরকারের ছত্রছায়ায় নগদে দুর্নীতি ও লুটপাট চলেছে। যারা এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, তারা ব্যাংকের ভেতরে বা বাইরে যেই হোক, তাদের বিচার চাই। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিযুক্ত প্রশাসক কঠোর পরিশ্রম করে সেই দুর্নীতির মূল হোতাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। আর এ কারণেই তার ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে।"
সবুজ দলের সভাপতি মিজানুর রহমান আকন বলেন, "নগদের দুর্নীতি তদন্তে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের কাজে বাধা দিতেই এই হামলা চালানো হয়েছে। এ ঘটনা কোনো ব্যক্তিবিশেষের ওপর হামলা নয়, বরং এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ।"
জিয়া পরিষদের প্রেসিডেন্ট আব্দুল কুদ্দুস বাংলাদেশ ব্যাংকের স্পেশাল অ্যাসাইনমেন্টে কর্মরত কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার দাবি জানান। তিনি বলেন, "যেসব কর্মকর্তা ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের জন্য ঝুঁকিভাতা চালু করতে হবে এবং দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।"
ভুক্তভোগী বদিউজ্জামান দিদার জানান, "আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নানা ধরনের হুমকির সম্মুখীন হচ্ছিলাম। বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও, শুধু সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগকে জানালেও তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। যার ফলে আমি হামলার শিকার হয়েছি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।"
উল্লেখ্য, বদিউজ্জামান দিদারের ওপর গতকাল (১২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বনানী-১২ নম্বর সড়কে নগদের প্রধান কার্যালয় থেকে বাসায় ফেরার পথে হামলা হয়। দুর্বৃত্তরা হাতুড়ি দিয়ে তার গাড়ির সামনের কাঁচ ভেঙে পালিয়ে যায়।
এর আগে, গতকাল সকালে নগদের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযানে এ সময় নগদ প্ল্যাটফর্মের প্রায় ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার দুর্নীতি ও পাচারের প্রাথমিক সত্যতা মেলে।