২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি গুমের তথ্য পাওয়া গেছে: তদন্ত কমিশন

২০১৬ সালে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গুম হওয়ার তথ্য পাওয়ার গেছে। গতকাল (শনিবার) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে ।
কমিশন জানায়, তারা মোট ১,৬৭৬টি গুমের অভিযোগ পেয়েছেন। হাসিনা সরকারের পতনের ২২ দিন পর ২৭ আগস্ট কমিশনটি গঠন করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার।
অনুমান করা হয় যে, আওয়ামী সরকারের শাসনামলে দেশে গুমের সংখ্যা ৩,৫০০ ছাড়িয়েছিল। তবে কমিশনের জমা দেওয়া রিপোর্টে ৭৫৮ জনকে গুমের বিষয়টি যাচাই করা সম্ভব হয়েছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ৭৫৮ জনের মধ্যে ১৩০ জনকেই ২০১৬ সালে গুম করা হয়েছে। আর প্রায় ২৭ ভাগ ভুক্তভোগীর এখনো পর্যন্ত কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে ২০১৬ সালেই কেন সবচেয়ে বেশি গুম হয়েছে, সে সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ দেখাতে পারেনি কমিশন।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গুমের তথ্য পাওয়া গেছে ২০১৮ সালে; ৮৯টি। আর ২০১৭ সালে ৮৪টি, ২০১৫ সালে ৭৮টি আর ২০১৩ সালে ৭৩টি গুমের তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে ২০১৬ বার্ষিক রিপোর্টে আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানিয়েছিল, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ১৫২টি গুমের তথ্য পাওয়া গেছে। ঐ রিপোর্ট অনুযায়ী, ৯২ জন ভুক্তভোগীর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি এবং তারা মৃত বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। আর ১৯ জনের লাশ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ৩৩ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং মাত্র ৮ জন পরিবারের কাছে ফিরে আসতে পেরেছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের রিপোর্টে বলা হয়, ২০১৬ সালে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। হলি আর্টিজান বেকারিতে বিদেশি নাগরিক হত্যা এবং জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের সবচেয়ে বড় জামাতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা যার মধ্যে অন্যতম।
এদিকে বাংলাদেশের ফৌজদারি আইনে জোরপূর্বক গুমের অপরাধের জন্য নির্দিষ্ট কোনো বিধান নেই বলে জানানো হয়েছে গুম বিষয়ক তদন্ত কমিশনের অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে। তবে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধিতে এই সম্পর্কিত কিছু অপরাধের বিধান রয়েছে, যেমন বেআইনি বাধা (ধারা ৩৩৯, ৩৪১), বেআইনি আটক (ধারা ৩৪০, ৩৪২-৩৪৮), অপহরণ, দাসত্ব এবং জোরপূর্বক শ্রম (ধারা ৩৫৯-৩৭৪)।
গত ২৯ আগস্ট ২০২৪ তারিখে গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে এখন জোরপূর্বক গুমের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, অপরাধীদের দায়মুক্তি প্রতিরোধ এবং জাতীয় আইনে জোরপূর্বক গুমকে অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সনদের ৪ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এটি অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য বাধ্যতামূলক।