Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Friday
May 30, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
FRIDAY, MAY 30, 2025
মৃত্যুর মিছিল

ইজেল

শওকত হোসেন
02 October, 2020, 11:30 pm
Last modified: 02 October, 2020, 11:36 pm

Related News

  • ‘দ্য ম্যান ফ্রম আংকল’-এর হার্টথ্রব স্পাই ডেভিড ম্যাককালাম মারা গেছেন
  • গুপ্তচর থেকে রুদ্ধশ্বাস থ্রিলার লেখক জন লে কারের বিদায়
  • মৃত্যুর মিছিল
  • মৃত্যুর মিছিল
  • মৃত্যুর মিছিল

মৃত্যুর মিছিল

ধারাবাহিক স্পাই থ্রিলার: মনে মনে সিগ সওয়ারের নলের ঝলক পাথরের আড়ালে চাপা পড়বে আশা করে আড়াল থেকে পরপর দুবার গুলি ছুঁড়ল ও। তারপর আগে বাড়ল আবার। ক্রমেই সীমানার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সীমানা বেড়া দেখা যাচ্ছে এখন। অন্তত ওটা টপকানো গেলেই তুর্কী সীমান্তে পৌঁছে যাবে ও। তাতে যে নিরাপদ হয়ে যাবে তা নয়, তবে ওখানে অন্তত একজন বন্ধু থাকার কথা জানা আছে। 
শওকত হোসেন
02 October, 2020, 11:30 pm
Last modified: 02 October, 2020, 11:36 pm

১৪.

প্রায় গোটা একটা দিন চলার পর অবশেষে গাযিয়ানতেপ থেকে বাসে করে রিফিউজি ক্যাম্পে পৌঁছাল ও। মোটামুটি আরবি আর ইংরেজিতে সাইনঅলা চার লেনের একটা রাস্তা এটা। উষর পাহাড়, নিচু ঝোপঝাড় এবং গাছপালা ভর্তি একটা ল্যান্ডস্কেপের ভেতর দিয়ে এগোচ্ছে ওরা।

লম্বা একটা দিন গেছে। পরিকল্পনার পেছনেই দিনটা কাটিয়েছে ও, কারণ আনিকার তৎপরতার কল্যাণে কার্কামিস রিফিউজি ক্যাম্পের ওর একজন কন্ট্যাক্ট অপেক্ষায় থাকার কথা জানতে পেরেছে। গত জীবনে পরিচিত এক লোক।

কার্কামিস থেকে আনুমানিক তিরিশ মিনিটের মতো দূরে থাকতেই দক্ষিণে পড়শীদের দিকে সতর্ক নজর রাখার ব্যাপারটা খেয়াল করেছে ও, কারণ সাধারণত ওরা পরস্পরকে ছিঁড়ে কুটিকুটি করতেই পছন্দ করে। হাইওয়ে থেকে বেরুনোর মুখে সৈন্যদের ছোট ছোট বাহিনী দেখা গেল। বেশ কয়েকটা তুর্কী এভিসি-১৫ আর্মার্ড কম্ব্যাট ভেহিকলও রয়েছে।  

বাসের ভেতর অল্প কয়েকজন ট্যুরিস্ট, জাপান আর অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা ক্যামেরার লোকজন, জনা কয়েক ইউএন ত্রাণ কর্মকর্তা, আর বেঢপ আকারের বেসামরিক পোশাক আর ছোট করে ছাঁট চুলের দুজন রুশভাষী লোক। বাসে ওঠার সময়ই তারিককে খেয়াল করে রেখেছে ওরা। তারিকও বাদ দেয়নি। সংক্ষিপ্ত মাথা দুলিয়ে পরস্পরের অতীতকে স্বীকৃতি দিয়েছে ওরা। নিঃশব্দে বলেছে: 'আমার পথ থেকে দূরে থাকো, আমিও তোমাদের পথ থেকে দূরে থাকব।' এটাই যুক্তিযুক্ত। 

কার্কামিসের কাছাকাছি হতেই রাস্তার গাড়ি চলাচল কমে আসতে শুরু করল। যতদূর চোখ যায়, চারপাশে কেবল তাঁবুর ছড়াছড়ি। দিগন্ত পর্যন্ত বিছিয়ে আছে। কংক্রীটের ব্লক আর ধাতব ছাদের একটা অস্থায়ী শেল্টারে থামল ওদের বাস। ডিসেম্বরের মৃদু তাপমাত্রায় বাইরে পা রাখল ওরা। চারধারে কেবল এঞ্জিন আর হর্নের তীব্র আওয়াজ, লোকজন কথা বলছে, চিৎকার করছে। সবকিছুতেই ডিজেল, সিগারেট আর কটু গন্ধ লেপ্টে আছে; প্রান্ত এলাকাবাসী হাজারো মানুষ হতাশা বিলোচ্ছে। 

আনিকার বাৎলে দেয়া পথ ধরে আরেক সারি শাদা তাঁবু পাশ কাটাল ও। প্রত্যেকটার গায়ে স্টেনসিল করে নীল রংয়ে ইউএন আর ইউএনএইচসিআর লেখা রয়েছে। এগিয়ে চলল ও। লম্বা দড়িতে কাপড় শুকোতে দেয়া হয়েছে। ক্লান্ত চেহারার মহিলারা বাইরে চুলোয় রান্না করছে। বাচ্চারা ফুটবল খেলছে। পুরুষরা ডোমিনো খেলছে, সিগারেট টানছে, মদ গলায় ঢালছে। এমন গোলমেলে অবস্থা আর দেখেনি ও। 

ওর হাতে একটা ওভারনাইট ব্যাগ, সিগ সওয়ারটা রয়েছে কোমরের হোলস্টারে। ওর পরিচয়পত্র ওকে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্যুরো অভ সিকিউরিটির সদস্য বলে ঘোষণা করছে। অবস্থা বেগতিক হয়ে উঠলে ওর ভুয়া পরিচয়ই হবে প্রথম প্রতিরক্ষা ব্যূহ, সিগ সওয়ারটা দ্বিতীয় ও শেষ অবলম্বন।  

তাঁবুগুলোর সারির কাছাকাছি একটা সংকীর্ণ গলির শেষমাথায় শাদা একটা ট্রেইলার দাঁড়িয়ে আছে। ওটার পাশে আরবি ও ইংরেজিতে লেখা: 'হ্যান্ডস অ্যান্ড হার্টস ফর সিরিয়া।' ট্রেইলারের পেছনে একটা শাদা ক্যানভাস তার্পুলিন ঝুলছে খাকি প্যান্ট আর শাদা টি-শার্ট পরা কাহিল দর্শন এক লোক একটা কল থেকে টিপটিপ করে ঝরা পানিতে হাত ধুচ্ছে ওখানে। লোকটার চোখে অয়্যাররিমড চশমা, নগ্ন মাথার চারপাশে অল্প কয়েক গোছা চুলের কথা বাদ দিলে মাথাভর্তি চকচকে টাক। 

তার্পুলিনের নিচে মাথা গলিয়ে দিল ও। 'অভাগাকে একটু দয়া করবে, পাদ্রি?' বলল। 

চমকে মুখ তুলে তাকাল লোকটা। পিটার 'পাদ্রে' পিকার্ড, সাবেক মার্কিন আর্মি রেঞ্জার। গোলাগুলি কি খালিহাতে মারপিট, যাই হোক, ওর মতো লোককে দলে পাওয়া যেকারো জন্যে ভাগ্যের ব্যাপার, জানে তারিক। ওর দিকে তাকিয়ে সে বলল, 'তোমাকে দয়া করার কথা ভাববার দিন তোমার মাথায় বজ্রপাত হবে, মিস্টার তারিক।'

চোখ থেকে চশমা খুলে টি-শার্টে কাঁচ মুছল সে। তারপর আবার চোখে লাগাল্ ওটা। এবার বলল, 'নরকের এই নতুন বলয়ে কি কারণে তোমার আগমন, দোস্ত?'

'কাজ আছে।'

'আচ্ছা। ড্রিঙ্ক চলবে?'

'কি আছে তোমার কাছে?'

'ঠিক এই মুহূর্তে ঠাণ্ডা পানির বোতল আর গরম পানির বোতল।'

'শুনতে বেশ লাগছে।'

ট্রেইলারে ঢুকে একটু বাদেই আবার বেরিয়ে এলো সে, তারিকের হাতে একটা প্লাস্টিকের বোতল তুলে দিল। তারপর দুজনই পিকনিক টেবিলে বসে বোতলের মুখে লম্বা একটা চুমুক দিল। 'এখানে এসেছ কদ্দিন হলো?' জানতে চাইল তারিক। 

'এসেছি তো মাস ছয়েক, কিন্তু মনে হচ্ছে ছয় বছর হয়ে গেছে,' বলল পিটার পিকার্ড।  

'লাভ হচ্ছে কোনো?'

'অনেক,' বলল সে। 'তবে সত্যি বলতে গেলে স্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতার কাটছি বলে মনে হচ্ছে। মূর্খামি, অসংখ্য গোত্র, অসুখবিসুখ আর ল্যান্ড মাইন থেকে শুরু করে একে ৪৭ পর্যন্ত রাশিয়ার বানানো রাজ্যের অস্ত্রশস্ত্রের স্রোত।'

'তাহলে পড়ে আছ কেন?'

কাঁধ ঝাঁকিয়ে প্লাস্টিকের বোতলে ফের চুমুক দিল সে।  'বেশ কয়েকটা কারণ আছে। আমার এবং আমার ছোট দলটা, আমরা অবস্থা পাল্টে দিই। পেছনে তাকিয়ে বলতে পারি, একটা বাচ্চাকে কলেরা থেকে সারিয়ে তুলেছি, একটা পরিবারকে উপোস মরার হাত থেকে বাঁচিয়েছি। ছোট ছোট বিজয়। তবে কি, তোমাকে সত্যি করে বলছি, এখানে এসেছি পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে।'

'পাদ্রি...'

'আমাকে শেষ করতে দাও,' ক্লান্ত হেসে সে। 'দুনিয়ার বুকে কি করেছি সেসব ভাবতে গেলে কেবল লাশ দেখতে পাই। ব্যস।'

'তার তো একটা উদ্দেশ্য ছিল। একটা মিশন ছিল সেটা।'

চোখ সরু করে তারিকের দিকে তাকাল সে, বলল, 'দোস্ত, এখানেই আমাদের তফাৎ। তোমার কাছে সব শাদা আর কালো। আমি দেখি ধূসর দিকটা। এতে অবশ্য কোনো দোষ নেই। আমরা এমনই। কিন্তু সেকারণেই কিন্তু আজ আমি এখানে এসেছি, অনুতাপ করতে।' 

আরও পানি গলায় ঢালল তারিক।

খেই ধরল পিটার পিকার্ড। 'আমার দুঃখের কাহিনী তো শুনলে। এখন বলো এখানে কি কাজ তোমার?'

'জ্যাক মিল্টনকে খুঁজছি,' বলল তারিক। 'শুনেছি এই ক্যাম্পেই নাকি আছে।'

জোরে হেসে উঠল পিকার্ড। 'হ্যাঁ। ছিল। তিন দিন। কিন্তু এখন নেই।'

ধুশ শালা! মনে মনে গাল বকল তারিক।

'স্টেটসে ফিরে গেছে?'

'বলতে পারব না,' বলল পিকার্ড।  

শালা! 

গাড়ির হর্নের আওয়াজ কানে এলো তারিকের। অগুনতি ভীত কণ্ঠস্বর, আগুন আর আবর্জনার কটু গন্ধ লাগছে নাকে। এমনকি চারপাশে সমস্ত শাদা তাঁবু থাকায় এমনকি আকাশও চোখে পড়ছে না। 

'হয়তো ভালোই করেছে সে,' বলল তারিক। 'এখানে এসে তোমার ক্যাম্প নিয়ে খবর করেছে। দুনিয়াকে আসল ঘটনা দেখাবে।'

একথা শুনে হাসিতে ফেটে পড়ল পাদ্রি, চোখে পানি এসে গেল তার। চশমা খুলে চোখের পানি মুছল শেষে। শেষে  হাসি থামলে বলল, 'বুড়ো জ্যাক এখানে একটা খবর বানিয়েছে বটে, হা!...একদল ইউরোপিয় লিঙারি মডেল নিয়ে এসেছিল সে, দাতব্য অনুষ্ঠান করেছে ওরা। ওরা নানান অঙ্গভঙ্গি করে বুকের ভাঁজ আর পাছা দেখিয়ে খাবার টাবার বিলি করার সময় প্রচুর ফুটেজ যোগাড় করেছে। জ্যাকের কাছে কোন জিনিসটা সবচেয়ে বেশি মনোযোগ পেয়েছিল আন্দাজ করতে পারো?'

১৫.

কিছুক্ষণ পর একে একে হাজির হতে লাগল পাদ্রির লোকজন। তুর্কী, ইংরেজি আর ফরাসি ভাষায় কথা বলছে ওরা। দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। ভাত, আটারুটি, মসলাদার কাবাব আর হাম্মাস দিয়ে রাতের খাবার সারা হলো। খাবার শেষে পাদ্রির সাঙ্গে পিকনিক টেবিলে বসল তারিক। গল্প করছে, হাসাহাসি করছে ওরা। কিন্তু অতীতের কথা তুলল না কেউ। এখানে বেমানান হবে সেটা: যেখানে উদ্ধার আর চিকিৎসার কাজ চলে। 

ক্লান্ত বোধ করছে তারিক। জেট লেগের ক্লান্তি; তবে খাবারের এঁটো বাসনকোসন আর থাতব গামলা ধোয়াধুয়িতে সাহায্য করতে যেতেই অবস্থা বদলে গেল। 

'এই যে, তুমি,' কথা বলে উঠল এক তরুণ। আনুমানিক বছর বিশেক হবে তার বয়স, পরনে ধূসর সুইট প্যান্ট, নোংরা স্নিকার আর নিউ ইয়র্ক ইয়াঙ্কি টি-শার্ট। তারিকের পাশে দাঁড়িয়ে একটা ময়লা সুতি তোয়ালে দিয়ে জোরসে থালাবসান মুছছিল সে। 

'হ্যাঁ, কি ব্যাপার?' জানতে চাইল তারিক। কালো চোখ, চাপ দাড়ি আর কালো চুলের মালিক ছেলেটা। 

'আমার নাম ইউসুফ,' বলল সে। 'তুমি আমেরিকা থেকে আসা ক্যামেরা রিপোর্টার জ্যাকের কথা বলছিলে,  শুনছিলাম।'

ধোয়াধুয়ি  রেখে একটা বাড়তি তোয়ালে দিয়ে হাত মুছল তারিক। 'বলে যাও।'

'সে কোথায় আছে আমি জানি,' বলে হাসল তরুণ। 'আমাকে টাকা দিলে ওর কাছে নিয়ে যেতে পারি তোমাকে। বুঝতেই পারছ, সীমান্তের ওপারে চলে গেছে জ্যাক। এখন সিরিয়ায় আছে সে। একটা জমান্তিস খবরের শুটিং করছে।' নিজের বুকে চাপড় কষল সে। 'আমাকে টাকা দাও, তোমাকে ওর কাছে নিয়ে যাব।'

'জ্যাককে তুমি চেন, ও কোথায় আছে জানার প্রমাণ দিতে পারবে?' জানতে চাইল তারিক। 

সুইট প্যান্টের ব্যাগি পকেটে হাত চালান করল সে। একটা ছবি বের করল। এক ও অদ্বিতীয় জ্যাক মিল্টনের ছবি। 

ভেজা হাতেই একটা লেখার দিকে ইশারা করল ইউসুফ। আগুনের আলোয় কোনোমতে পড়তে পারল তারিক:

বন্ধু ইউসুফকে, শুভ কামনা, জ্যাক মিল্টন। 

ছবিটা ফিরিয়ে দিল তারিক। 

'ঠিক আছে, তাই সই,' বলল ও। 

দুই ঘণ্টা পর। ইউসুফ এবং একটু বয়স্ক এক লোকের সঙ্গে রয়েছে তারিক। লোকটাকে ওর চাচাত ভাই নিজাম হিসাবে পরিচয় দিয়েছে ইউসুফ। একটা পাথুরে ট্রেইল ধরে রিফিউজি ক্যাম্পের দক্ষিণে এগোচ্ছে ওরা। ইউসুফ আর নাজিম দুজনের হাতেই একে-৪৭ আর ওয়েব বেল্টিং। সিগ সওয়ার আর কেভলার ভেস্টই তারিকের সম্বল । 

ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আরো সশস্ত্র লোকও আছে। ওদের অগ্রাহ্য করছে ওরা, একই কাজ করছে ওরাও। পুরো এলাকা শাদা আবর্জনার বস্তা আর দোমড়ানো শিপিং কন্টেইনারে ভরা। একটা চেইন লিঙ্ক সীমানার দিকে এগিয়ে গেল ওরা। এক জায়গায় বড়সড় একটা অংশ কেটে নেওয়া হয়েছে। এক এক করে ফোকর গলে উল্টোদিকে চলে এলো ওরা। তারিকের কানে ফিসফিস করে কথা বলল ইউসুফ, 'সিরিয়ায় স্বাগতম।'

'ধন্যবাদ,' বলল তারিক। 

'জ্যাক মিল্টন,' আবার বলল ইউসুফ, 'এখান থেকে বেশি দূরে না। লোকটা...কথাটা কিভাবে বলা যায়? দুর্বত্তদেও সঙ্গে সিরিয়ার বেশ ভেতরে থাকার ভান করছে...কিন্তু আসলে একটা তাঁবু এলাকায় আছে...আরাম করছে...অল্প দূরেই।'

'শুনে তো ভালোই ঠেকছে,' বলল তারিক। 

পুরু গোঁফ আর ফাঁকা চোখ নাজিমের, চোখ দেখে কিছুই বোঝার উপায় নেই। 'আমাদের সঙ্গেই থাকো তুমি,' বলল সে। 'ট্রেইলে থাকবে। ট্রেইল থেকে সরলেই...বুম! ল্যান্ড মাইন। খুব খতরনাক।'

'ঠিকাছে,' অতীতের ল্যান্ডমাইনের কথা ভেবে বলল তারিক। 'সত্যিই খতরনাক।'

বলতে গেলে পুরো রাস্তাই নুড়িপাথর, ঘাস আর ছোট ছোট ঝোপে ভরা। শিবিরের আলো উজ্জ্বল, বেপরোয়া। এগোনোর সময় ছোট ছোট ল্যান্ডমার্কগুলো খেয়াল করছে তারিক: ভাঙা বোতলের ঢিবি, ফেলে দেওয়া আরপিজি লঞ্চার, ঝোপের গায়ে সেঁটে থাকা শাদা প্লাস্টিকের ব্যাগের জটলা। ডানে-বামে আরো অনেক ট্র্রেইল চলে গেছে। স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গর্জন কানে আসছে। দীর্ঘ ঝিলিক তোলা কমলা ট্রেসারের নাচন চোখে পড়ছে। চেনা দৃশ্য, তবে চেনা জায়গা নয়। তারিক সম্পূর্ণ একা, পেছনে মাল্টি মিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা এজেন্সি নিয়ে কাজ করছে না ও। মনে মনে কেবল বিধ্বস্ত বন্ধুর কথা ভাবছে,  বেঈমানি করা হয়েছে ওর সঙ্গে, জর্জিয়ায় বিছানায় পড়ে ককাচ্ছে ও। 

গতকালও ম্যানহাটানে ছিল ও, অথচ এখন এক বন্ধ্যা জমিনে এসে হাজির হয়েছে। গ্রিক, রোমান, আরব, তুর্কী, কুর্দদের হাতে রক্তাক্ত হয়েছে এই দেশটা। এবং এখন-

হঠাৎ তীক্ষ্ণ কণ্ঠে ইউসুফের সঙ্গে কথা বলে উঠল নাজিম। পাঁই করে তারিকের দিকে ঘুরল ওরা দুজন। ওর পেট আর পাথরের একটা ঢিবিতে চিহ্নিত মোড় বরাবর তাক করে রেখেছে একে ৪৭।

ইউসুফ বলে উঠল, 'সরি মিস্টার। একদম নড়বে না।'

১৬.

কিন্তু নিমেষে নড়ে উঠল ও। ঝুপ করে বসেই গড়ান দিল। যেন সহসা আগুন ধরে গেছে শরীরে। হতবাক হয়ে গেছে ইউসুফ আর নাজিম। স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের ট্রিগারে চাপ দিয়ে বসল ওরা। বাতাসে শিস কেটে ওর মাথার উপর চলে যাচ্ছে বুলেটগুলো। ৭.৬২ এমএম কার্তুজের পরিচিত শব্দ কানে আসছে। 

ওদের কি হয়েছে জানে না তারিক, তবে এখন সেটা নিয়ে ভাববার সময় নয়। লম্বা দম নিয়ে অপেক্ষা করল ও। ফের গুলি শুরু করল ওরা। নাজিমকেই বড় ঝামেলা ধরে নিল ও। তো আবার যখন একে ৪৭-এর ঝলকে আলোকিত হয়ে উঠল সে, সিগ সওয়ার থেকে পটাপট দুটো গুলি ছুড়ল ও। দড়াম করে জমিনে আছড়ে পড়ল লোকটা। 

ফের গড়ান খেল ও, মাথা আর শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো জমিনের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। বিলাপ করছে ইউসুফ। আরও একদফা গুলি বর্ষণ করল সে। 

তারিকের সামনে এখন দুটো যৌক্তিক বিকল্প রয়েছে: তরুণের তরফ থেকে আরেক পশলা গুলির অপেক্ষায় থেকে ওকেও ওর চাচাত ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া যায়, কিংবা গুড়ি মেরে ল্যান্ডমার্ক অনুসরণ করে সীমানা পেরিয়ে আবার তুরস্কে ফিরে যেতে পারে। 

অবশ্য কোনকালেই বা যুক্তি মেনে কাজ করেছে ও?

নিঃশব্দে ইউসুফের উল্টোদিকে চলে এলো ও। আরবিতে অকথ্য ভাষায় গাল বকছে সে, আবারও এক পশলা গুলি ছুড়ল -- বোঝা যাচ্ছে, নিয়ম মেনে গুলি চালানো ওর ধাতে নেই, ভাবল তারিক। ম্যাগাজিন শেষ হতেই বদলানোর কসরত করার সময়ই চট করে উঠে ইউসুফের দিকে তেড়ে গেল তারিক। মাঠের ক্ষিপ্ত এনএফএল খেলোয়াড়ের মতো এক ধাক্কায় জমিনে আছড়ে ফেলল তাকে। 

হাওয়ায় উড়াল দিল ওর একে-৪৭। সশব্দে ধূলিশয্যা নেল সে। এক মুহূর্ত ওকে ঠেসে ধরে থাকল ও, তারপর আঠাল চুলের গোছা শক্ত করে চেপে ধরে পাথুরে জমিনে মাথা ঠুকতে শুরু করল।   

ওর মনোযোগ পেয়েছে বুঝতে পেরে ফিসফিস করে জানতে চাইল,'এসবের মানে কি?'

তারস্বরে চেঁচাচ্ছে সে, আরবিতে খিস্তি ঝাড়ছে। পরপর দুটো চড় কষাল ও, তারপর আবার জানতে চাইল, 'ইংরেজিত বল। কি হলো এটা?'

'তুমি...তুমি...আমার চাচাত ভাইকে খুন করেছ!' চিৎকার করে উঠল সে। 

'হতচ্ছাড়া গলা নামিয়ে কথা বলো!'

'নাজিম...' বলল সে, 'আমার চাচাত ভাইকে তুমি মেরে ফেলেছ...'

'হ্যাঁ, বেশ, তোমরাই আগে গুলি করেছ আমাকে। এটা রাহাজানি? নাকি অপহরণ?'

'তোমাকে বলতে পারব না, মিস্টার...'

খুব একটা বাহাদুরির সময় বলা যাবে না একে, জানে তারিক, কিন্তু চালিয়ে যেতে হবে। ওকে মেরে নিরাপদেই ফিরে যেতে পারত ও, কিন্তু তাহলে যা চাইছে পাবে না: খবর। এরা দুজন স্রেফ ডাকাতি করতে চেয়েছিল নাকি মুক্তিপণ আদায়ের মতলবে বন্দী করতে চেয়েছে ওকে?

নাকি ভিন্ন কিছু?

ফের ইউসুফের গলা চেপে ধরল ও, জ্ঞান হারানোর দশা হলো তার। আবার মাথা ঠুকতে লাগল। অবশেষে কথা  বলে উঠল সে, 'দয়া করে থামো...'

'কি পরিকল্পনা ছিল শুনি?'

'নাজিম...আহা, বেচারা নাজিম...'

'দশ সেকেন্ডের মধ্যে মুখ না খুললে বেচারা ইউসুফ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি।'

চট করে চারপাশে নজর বোলাল ও। নড়াচড়া চোখে পড়ছে, গোলাগুলির জায়গার দিকে এগিয়ে আসছে ছায়ারা। 

'আমি...আমাদের...তোমাকে নির্দিষ্ট জায়গায়...ওই মোড়ে...নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল...তারপর অন্যরা এসে তোমাকে কায়দা করা পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা ছিল...'

'এই অন্যরা কারা?'

'নাজিম...ও চিনত...'

'কেন? মুক্তিপণের জন্যে? অন্যকিছু?'

'আমি...তোমার সঙ্গে আলাপ জমাতে বলা হয়েছিল আমাকে...জ্যাক মিল্টনের খোঁজে আসা লোকটা...'

ট্রেইলের পাথরের চিহ্নঅলা মোড়ে লোকজনের জটলা দেখতে পাচ্ছে ও। এবার সটকে পড়ার সময় হয়েছে বলে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল ও। ইউসুফের হাত শক্ত করে ধরে বলল, 'এগোও...মাথা নিচু করে রাখো।'

প্রায় টেনেহিচড়ে ইউসুফকে সীমান্ত বেড়ার দিকে নিয়ে চলল ও। 'আমার ব্যাপারে তোমার সঙ্গে কে কথা বলেছে? কে সে?'

'এক...আমেরিকান...'

'কি নাম? কোথায় ওর সঙ্গে দেখা করেছ?'

'লোকটা বিশালদেহী, চওড়া আর--'

স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গর্জন শোনা গেল। ধপ করে বসে পড়ল ও। নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মাথার উপর হাত তুলে খিঁচে দৌড় লাগাল। আরও এক দফা বন্দুকের গর্জন, ট্রেইল থেকে দৌড়ে সরে গেল ইউসুফ। একটা ল্যান্ডমাইনের সঙ্গে হোঁচট খেল সে, আকস্মিক বিস্ফোরণের বুম আওয়াজ, পর মুহূর্তে হাজারো টুকরো হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল সে। 

১৭.

বিস্ফোরণের আকস্মিক আওয়াজে পিছু ধাওয়াকারীরা কয়েক সেকেন্ডের জন্যে হলেও থতমত খেয়ে যাবে বলে আশা করল ও। যেটুকু বাড়তি সময় মেলে সেটাই লাভ। 
যদ্দূর সম্ভব মাথা নিচু করে পাথুরে ট্রেইল ধরে জোর কদমে ছুটল ও। সীমানার কাছাকাছি আসতেই তীক্ষন চোখে ল্যান্ডমার্কগুলোর দিকে খেয়াল রাখছে।  

পেছন থেকে ক্ষণে ক্ষণে গুলির শব্দ এলেও মাযলের ঝলক দেখা যাচ্ছে না। 

বেশ ভালো, ভাবল ও। এর মানে অসহায়ভাবে পটল তোলা দুই চাচাত ভাইয়ের তুলনায় কিছুটা উন্নত পর্যায়ের পেশাদার ওরা। মাথা উঁচানো ছাড়াই ল্যান্ডস্কেপে অবিরাম গুলি ছোড়ার বদলে সযত্নে গুলি ছোড়ার সুবিধার জন্যে অবস্থান গোপন রাখতে এখন ফ্ল্যাশ সাপ্রেসর ব্যবহার করছে ওরা।  

একটু থামল তারিক, গড়ান দিয়ে মানুষের মাথার আকৃতির কতগুলো পাথরের একটা ঢিবির আড়ালে আশ্রংয় নিল। 

এটাও মন্দ মনে হচ্ছে না। ওদিকটায় কেবল ক্ষণে ক্ষণে ঝিলিক দিয়ে ওঠা ছায়া দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সীমানার দিকে এগোতেই টের পেল রিফিউজি ক্যাম্পের আলোয় পেছনটা আলোকিত হয়ে থাকায় এখন রীতিমতো সহজ টার্গেটে পরিণত হয়েছে ও। 

নিশানা ফস্কাবে না, এত সহজ চলমান লক্ষবস্তুতে পরিণত হয়েছে।  

মনে মনে সিগ সওয়ারের নলের ঝলক পাথরের আড়ালে চাপা পড়বে আশা করে আড়াল থেকে পরপর দুবার গুলি ছুঁড়ল ও। তারপর আগে বাড়ল আবার। ক্রমেই সীমানার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। 

সীমানা বেড়া দেখা যাচ্ছে এখন। অন্তত ওটা টপকানো গেলেই তুর্কী সীমান্তে পৌঁছে যাবে ও। তাতে যে নিরাপদ হয়ে যাবে তা নয়, তবে ওখানে অন্তত একজন বন্ধু থাকার কথা জানা আছে। 

আরও একবার থেমে দাঁড়াল ও। মাথার উপর দিয়ে বাতাসে শিস কেটে ধেয়ে যাচ্ছে গুলির অবিরাম ধারা। কাছের একটা পাথরের বুকে লেগে ঠিকরে গেল একটা। 

ভালোই হাতের টিপ দেখা যাচ্ছে, ভাবল তারিক। 

খুব ভালো না হলেও, ভালো।  

এগিয়ে চলল ও। 

সামনেই সীমানা বেড়া। এখানেই তার কেটে একটা ফোকর তৈরি করা হয়েছিল।  

কিন্তু এখন অবরুদ্ধ। 

অন্তত তিন থেকে চারটে অবয়ব-ওদের হাতে উদ্যত একে ৪৭। 

ওদিকে কোথাও ল্যান্ডমাইন আছে।

শুষ্ক জমিনে আছড়ে পড়ল ও, পেছনে চোখ ফেরাল। 

ওর দিকে এগোতে শুরু করল ছায়াগুলো। যত কাছে আসছে ততই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।  

এবার একটা কণ্ঠস্বর কানে এলো ওর, চোস্ত ইংরেজিতে কথা বললেও টানটা বোঝা যাচ্ছে: 'এবার ক্ষান্ত দাও হে। কোথাও যেতে পারবে না।'

মুখ বুজে থাকল ও। 

আরও এগিয়ে এলো অস্ত্রধারী পিছু ধাওয়াকারীরা। 

সীমানা বেড়ার ছায়াগুলো আরও স্পষ্ট হলো। 

তিনজন পথ আগলে আছে ওর।  

বিশ রাউন্ড গুলির একটা ম্যাগাজিন আছে ওর সিগ সওয়রারে। এখনও চৌদ্দটা কার্তুজ অবশিষ্ট আছে ওটায়। 

বেশি না লাগলেই হয়। 

কারণ বন্দী হয়ে এখানে থেকে যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই ওর। ওদের নতুন জিম্মি হতে চায় না, তাহলে বহু বছর আটকে রেখে শেষে হয় কল্লা কেটে নেবে কিংবা জ্যান্ত পুড়িয়ে মারবে। 

হঠাৎ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যতদূর সম্ভব দ্রুত গুলি ছুঁড়তে ছুড়তে তুর্কী সীমানার দিকে ছুট দিল ও।

  • [চলবে]

Related Topics

স্পাই থ্রিলার

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • সুপ্রিম কোর্টে আপিল খারিজ: মহাখালীর প্রধান কার্যালয় ও কারখানা ছাড়তে হবে বিএটি বাংলাদেশকে
  • ‘আনু ভাইকে শ্রদ্ধা করি, কিন্তু তার প্রতিক্রিয়ায় আমি বিস্মিত’: আনু মুহাম্মদের স্ট্যাটাসে আসিফ নজরুলের বিস্ময় প্রকাশ
  • ৫ হাজারের বেশি মোবাইল টাওয়ার বন্ধ, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে ব্যাহত নেটওয়ার্ক সেবা
  • যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল ও তুলা কিনতে পারে বাংলাদেশ: ড. ইউনূস
  • চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসেই ৩৫০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ বাংলাদেশের
  • বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব থেকে ‘সরিয়ে দেওয়া হলো’ ফারুক আহমেদকে

Related News

  • ‘দ্য ম্যান ফ্রম আংকল’-এর হার্টথ্রব স্পাই ডেভিড ম্যাককালাম মারা গেছেন
  • গুপ্তচর থেকে রুদ্ধশ্বাস থ্রিলার লেখক জন লে কারের বিদায়
  • মৃত্যুর মিছিল
  • মৃত্যুর মিছিল
  • মৃত্যুর মিছিল

Most Read

1
বাংলাদেশ

সুপ্রিম কোর্টে আপিল খারিজ: মহাখালীর প্রধান কার্যালয় ও কারখানা ছাড়তে হবে বিএটি বাংলাদেশকে

2
বাংলাদেশ

‘আনু ভাইকে শ্রদ্ধা করি, কিন্তু তার প্রতিক্রিয়ায় আমি বিস্মিত’: আনু মুহাম্মদের স্ট্যাটাসে আসিফ নজরুলের বিস্ময় প্রকাশ

3
বাংলাদেশ

৫ হাজারের বেশি মোবাইল টাওয়ার বন্ধ, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে ব্যাহত নেটওয়ার্ক সেবা

4
বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল ও তুলা কিনতে পারে বাংলাদেশ: ড. ইউনূস

5
অর্থনীতি

চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসেই ৩৫০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ বাংলাদেশের

6
খেলা

বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব থেকে ‘সরিয়ে দেওয়া হলো’ ফারুক আহমেদকে

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net