Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Thursday
June 19, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
THURSDAY, JUNE 19, 2025
মৃত্যুর মিছিল

ইজেল

শওকত হোসেন
31 October, 2020, 12:40 am
Last modified: 31 October, 2020, 12:44 am

Related News

  • ‘দ্য ম্যান ফ্রম আংকল’-এর হার্টথ্রব স্পাই ডেভিড ম্যাককালাম মারা গেছেন
  • গুপ্তচর থেকে রুদ্ধশ্বাস থ্রিলার লেখক জন লে কারের বিদায়
  • মৃত্যুর মিছিল
  • মৃত্যুর মিছিল
  • মৃত্যুর মিছিল

মৃত্যুর মিছিল

ধারাবাহিক স্পাই থ্রিলার:  সি-১৩০ বিমান বিদায় নিতেই কাজে নেমে পড়ল তারিক। ব্যাটলপ্যাক থেকে আধ ডজন প্লাস্টিকের গ্লো-স্টিক বের করে ঝাঁকি মেরে জ্বাললো। মরুর বুকে এদিকওদিক ছড়িয়ে দিল ওগুলো। ভৌতিক হলদে-সবুজ আলোয় আলোকিত হয়ে উঠল জায়গাটা। এই সুযোগে দৌড়ে পালানোর প্রয়াস পেল জ্যাক, কিন্তু সে পাঁচ কদম যাওয়ার আগেই পাকড়াও করে ফেলল ও। জমিনে আছড়ে ফেলে ফের ওর কব্জি আর গোড়ালি প্লাস্টিকের যিপ-টাই দিয়ে বেঁধে ফেলল।
শওকত হোসেন
31 October, 2020, 12:40 am
Last modified: 31 October, 2020, 12:44 am

৩১.

সেল ফোনে চড়া গলায় স্প্যানিশে কথা বলছিল ড্রাইভার। কথা শেষ হলে বলল, 'এই যে, মিস্টার ট্রিমেন, ও নিশ্চয়ই সামলে নেবে, ঠিক না?'

ওকে আরও পঞ্চাশ ডলারের একটা নোট গছিয়ে দিল তারিক। 'অবশ্যই।'

'কোথায়, বন্ধু?' জানতে চাইল সে। 

'নিউ জার্সি।'

'সেতো বহুত দূর।'

আরও গোটা দুই ফ্র্যাঙ্কলিন ড্রাইভারের পকেটেরগুলোর সঙ্গে যোগ দিল। শব্দ করে হেসে উঠল সে, বলল, 'কি সমস্যা, টানেলের ভেতর দিয়ে গেছি অনেক দিন হয়।'

ড্রাইভারকে ঠিকানা বাতলে দিল ও। ওখানে পৌঁছাতে ঘণ্টাখানেক লাগবে, ওকে বলে দিয়েছিল আনিকা; কিন্তু সম্ভবত হাতে পাওয়া মুফতে টাকার বদৌলতে অতিউৎসাহে ড্রাইভার ওদের বলতে গেলে পঞ্চাশ মিনিটের মাথায় লিঙ্কন টানেল এবং তারপর আই-৯৫ সাউথ ধরে জায়গামতো পৌঁছে দিল। শেষমেশ উত্তর নিউ জার্সির রুট ২৪-এ উঠে এলো ওরা। চলার পথে জ্যাক বার কয়েক বিড়িবিড় করলেও ওর বাহু মুচড়ে দিয়ে তাকে বোবা বনে থাকতে বাধ্য করেছে তারিক। 

শেষ দশটা মিনিটই ঝামেলা ছিল। হ্যানোভারের বাইরে কয়েকটা ব্যাক রোড এবং কান্ট্রি লেন ধরে আগে বেড়ে একটা চিহ্নহীন রাস্তার শেষ মাথায় ধাতব গেটের গায়ে চড়া আলো ফেলল ওদের ড্রাইভার। 

'ওডোমিটার বলছে আমাদের এখানেই থামতে হবে,' বলল সে। 'ঠিক আছ তো?'

'একদম,' বলে ওর হাতে আরও একটা ফ্র্যাঙ্কলিন ঠেসে দিল তারিক। 'তবে কি জানো, তোমাকে কেউ গত দুই ঘণ্টা কোথায় কি করছিলে জিজ্ঞেস করলে...'

ওর হাত থেকে নোটটা ছোঁ মেরে কেড়ে নিল ড্রাইভার। 'জনা দুই চাইনীজ ট্যুরিস্ট ধীরে সুস্থে ওদের চায়না টাউন ঘুরিয়ে দেখাতে বলেছিল। নগদ টাকা দিয়েছে। খুবই একঘেয়ে কাজ।'

'ভালো।'

দরজা খুলে জ্যাককে টানতে শুরু করল তারিক। ড্রাইভার বলে উঠল: 'আরে, আমার তো মনে হয় লোকটাকে চিনি। সে বিখ্যাত না?'

'মোটেই না,' বলল ও। ওরা বেরিয়ে এলে লেক্সাসটা নিমেষে ইউ-টার্ন নিয়ে বিদায় হয়ে গেল। 

গেট পাশ কাটিয়ে নুড়ি বিছানো পথ ধরে এগোনোর সময় আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছিল জ্যাক। 

'এটা কি...কিডন্যাপিং? তাই কি? বিশ্বাস করো, নেটওয়ার্ক তোমার চাহিদা মতো কিছুই দেবে না।'

'ওহ, আমি জানি না,' বলল ও। জ্যাকের হাত দুটো শক্ত করে ধরে রেখেছে ও। 'ইদানীং তোমার সাথে যেভাবে লেগে আছে, তাতে মনে হয় নেটওয়ার্ক তোমাকে বেশ দাম দেয়।' কিছু গাছপালা আর ঝোপঝাড়ের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তাটা পরিষ্কার। অনতিদূরে চলন্ত এঞ্জিনের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। ঘড়ি দেখল ও। ফোন করে আনিকা ঠিক আছে কিনা খোঁজ নেয়া দরকার। কিন্তু কাজটা কঠিন হবে। লিভারি ক্যাব থেকেও ওকে ফোন করার উপায় ছিল না। কারণ ও চায়নি জ্যাক বা ড্রাইভার ও কি বলছে জেনে ফেলুক।  

স্বীকার করতে খারাপ লাগলেও আনিকার ব্যাপারটা পরের জন্যেই তুলে রাখতে হচ্ছে। কিন্তু জানে নিজেকে রক্ষা করার ক্ষমতা ও রাখে। 

ওদের সামনের পথ খুলে গেল। ঠিকমতো দেখা মুশকিল, তবু নিউ জার্সির রাতের আবছা আলোয় বামে গোটা দুই অব্যবহৃত দালান দেখা যাচ্ছে। ওদের ডানে একটা পুরোনো এয়ারস্ট্রিপ, ওখানে দাঁড়িয়ে আছে একটা চার ইঞ্জিনের লকহীড সি-১৩০ এরকুল ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্র্যাফ্ট, অলস গতিতে চলছে ওটার ইঞ্জিন। অল্প কয়েকটা বাতি জ্বললেও এয়ারক্র্যাফটার কালো রঙ ঠিকইু বোঝা যায়। ওটার শরীরে কোনো মার্কিং নেই। 

ইতস্তত করল জ্যাক। ওকে ঠেলে সামনে বাড়ল তারিক। 'চলো, আমি জানি তোমার মতো একজন অনুসন্ধানী যুদ্ধ সাংবাদিক একটা রেজিস্ট্রিবিহীন, গোপন এয়ারক্র্যাফটে ওঠার সুযোগ লুফে নেবে। আজকাল তোমার মতো দুষ্ট লোকরা বিদায় নেয়ার আগেই তাদের বহন করা রীতিমতো দুর্লভ ব্যাপার।'

জমিনের সাথে সেঁটে গেছে জ্যাকের পা। কয়েকটা সেকেন্ড নষ্ট হলো ওর। ফের ওর ডান হাতের উপর 'কাম-অ্যালং' রুটিন কাজে লাগাতে হলো। ওরা এয়ারক্র্যাফটের শেষ মাথার দিকে এগোনোর সময় পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে হাঁটতে লাগল জ্যাক। এয়ারক্র্যাফটের পেছনের লোডিং র‌্যাম্পটা নামানো হয়েছে। ম্লান লাল আলো জ্বলছে ভেতরে। জায়গাটা ফাঁকা। ধাতব র‌্যাম্প বেয়ে উঠে পড়ল ওরা। ভেতরে দুটো লাল ওয়েব্ড সিটিং, মাথার উপর অগুনতি স্ট্রাট, পাইপ আর ক্যাবল।

এক ধাক্কায় জ্যাককে একটা ওয়েব আসনে বসিয়ে সিট বেল্ট বেঁধে দিল ও। তারপর বিমান চলার সময় লোকটার চুপচাপ বসে থাকা নিশ্চিত করতে তার কব্জি আর গোড়ালি প্লাস্টিকের যিপ টাই দিয়ে বেঁধে দিল।  

অস্পষ্ট গুঞ্জনের শব্দ তুলে র‌্যাম্প উঠে আসতে শুরু করল। ঘড়িতে সময় দেখল তারিক। ঠিক সময়মতোই হচ্ছে সবকিছু। ষাট সেকেন্ড দেরি হলেই তারিক ও জ্যাককে ফেলে টেক অফ করত কালো এয়ারক্র্যাফটা। 

এঞ্জিনের গর্জন চড়ে উঠল। চলতে শুরু করল বিমান। জ্যাকের উল্টোদিকে নিজের লাল ওয়েবড সিটে বসল তারিক। চারপাশে নজর বোলানোর সময় চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল জ্যাকের। আতঙ্ক খেলা করছে সেখানে। কুৎসিত দর্শন মিলিটারি বিমানে  স্যুট, পলিশ করা জুতো আর শাদা টার্টলনেক পরা লোকটার জন্যে খারাপ লাগল ওর, যেন সহানুভূতিশীল হয়ে উঠেছে ও, আসলে মোটেই তেমন কিছু না। দেখে মনে হচ্ছে যেন  রদ্দি মাল তার জীবনের উপর দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। 

দুই হাত চোঙার মতো করে মুখের কাছে ধরে জ্যাকের উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বলল, 'এটা সুন্দরী ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্টঅলা ফার্স্ট ক্লাস নয়, জ্যাক! তবে কাজ চলবে!'

কিছুই বলল না জ্যাক। স্রেফ শূন্য বিমানের উপর নিচে নজর বোলাল। নিউ জার্সির আকাশে উঠতে শুরু করেছে বিমান। 

৩২.

সি-১৩০ ক্রুজিং অল্টিচ্যুডে পৌঁছে গেছে মনে হতেই সামনে বেড়ে যিপ আঁটা কালো বিরাট আকারের ডাফল ব্যাগটা দেখতে পেল ও। ওটা পাওয়া যাবে, নিশ্চিত করেছিল আনিকা। ওকে এসএমএস করার কথা ভাবল ও, কিন্তু সেল ফোনের দিকে নজর যেতেই বুঝল নেটওয়ার্কের বাইরে এসে গেছে। ডাফল ব্যাগটা একটানে খুলে চট করে ভেতরের জিনিসগুলো এক নজর দেখে নিল ও। 

সময় নিয়ে এয়ারক্র্যাফটের ভেতরটা জরিপ করল। অসংখ্য স্মৃতি ভীড় করে আসতে চাইছে ওর মনে, এই ধরনের বিমানে বহুবার উড়তে হয়েছে, কখনও ঝুঁকিপূর্ণ মিশনে, আবার কখনও এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্রেফ রুটিন একঘেয়ে যাত্রায়। আমেরিকান মিলিটারি আর ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিগুলোর সি-১৩০ বিমনাগুলোর গড় পড়তা আয়ুর কথা মাথায় রাখলে এই একই বিমানে আগেও পা রাখার ভালোই সম্ভাবনা আছে বটে! 

অতীতের সেইসব ফ্লাইটের অনেক কটাই স্মৃতিতে তালগোল পাকিয়ে থাকলেও সেগুলোর অন্তত দুটো মাঝের জায়গাটায় সযতেœ আমেরিকান পতাকা গুজে রাখা লাল অ্যালুমিনিয়াম কাস্কেটে ভরা ছিল।  

ওই দুটো ফ্লাইটের কথা জীবনেও ভুলবে না ও। 

আবার জ্যাকের দিকে তাকাল ও। উপেক্ষার দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে আছে সে। জ্যাক মিল্টনের চোখের সামনে প্রাণ হারানো আমেরিকানরা ডেলওয়ারের ডোভারে এয়ারফোর্স বেসে দেশের উদ্দেশ্যে ফিরতি যাত্রায় ঠিক এই রকম কোনো বিমানেই শেষ ঠাঁই পেয়েছে, তাতে ওর মনে সন্দেহ নেই। 

জোর করে বইয়ের প্রচ্ছদের দিকে চোখ ফেরাল ও। তা নাহলে এখুনি হয়তো সি-১৩০-ও ওমাথায় ছুটে গিয়ে জ্যাককে খুন করে বসবে। 

নিথর বসে রইল ও। 
লোকটাকে এখন খুন করলে ওর সব পরিকল্পনা ভণ্ডুল হয়ে যাবে। 

বেশ কয়েক ঘণ্টা পর। চারটে রোলস-রয়েস টার্বোপ্রপ এঞ্জিনের গুঞ্জনে পরিবর্তন শোনা গেল। ফ্লাইট কেবিন থেকে বার দুই অশুভ 'ধুপধাপ' আওয়াজ এলো। বাঁধন সত্ত্বেও নড়ে উঠল জ্যাক। চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। তারিকের উদ্দেশে চিৎকার করে কিছু বলল সে। কিন্তু এঞ্জিনের জোরালো আওয়াজে একটা শব্দও ধরতে পারল না ও। 

সিটবেল্ট খুলে সাবধানে জ্যাকের দিকে এগিয়ে গেল ও। 'আরে, কোনো চিন্তা নেই, জ্যাক,' বলল ও। 'আমরা আসলে মাঝআকাশে তেল ভরছি। আটলান্টিকের মাথার উপর গ্যাস স্টেশন নেই, জানো তো?''

ফিরে এসে আবার বসল ও। পড়তে শুরু করল বইটা। 

শেষপর্যন্ত এঞ্জিনের অবিরাম একঘেয়ে আওয়াজে ঘুমে ঢলে পড়ল। 

মৃদু দুলুনিতে ঘুম থেকে জেগে উঠল ও। যুগপৎ ঘৃণা আর ঔদ্ধত্য নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে জ্যাক।  নিজের নেটওয়ার্কের লোকজন এবং রাজ্যের সুযোগসুবিধা থেকে বহুত দূরে বেচারা বিখ্যাত টিভি সাংবাদিক। 

ঘড়ি দেখল তারিক। 

সময় হয়ে এসেছে। 

আরও একবার সিটবেল্ট খুলে বই হাতে জ্যাকের কাছে এলো ও। 'তোমাকে একটা প্রশ্ন করি?' চিৎকার করে বলল ও। 

মাথা দোলাল সে। ঠোঁট দুটো রোষে চেপে বসেছে। 

ওকে বইটা দেখাল তারিক। 'কথাটা সত্যি নাকি, গোল্ডেন গ্লোবের পরপরই তুমি দুদুজন হলিউডি অভিনেত্রীকে বিছানায় নিয়ে গেছিলে?'

অন্যদিকে মুখ ফেরাল জ্যাক।  

ফিরে নামার প্রস্তুতি নিতে শুরু করল তারিক।

৩৩.

সামনে এসে আবার ডাফল ব্যাগটা খুলল ও। এয়ারক্র্যাফটের হিম শীতল অভ্যন্তরে হিহি করে কাঁপতে কাঁপতে বেসামরিক পোশাক খুলে ফেলল। খোলা ব্যাগ থেকে অসংখ্য জিনিসপত্র বের করে 'ব্যাটল র‌্যাটল' নামে পরিচিত পোশাক গায়ে চাপাল: ক্যামোফ্লাজড বিডিইউ, ভারী বুট, নী অ্যান্ড এলবো প্যাড, বডি আর্মার, হেলমেট, ছুরি, নাইট ভিশন গগলস, নাইট ভিশন বিনোকিউলার, একটা ফ্ল্যাশলাইট, কম্পাস, ছোট পানির বোতল, একটা ব্যাটলপ্যাক, ইমার্জেন্সি রেশন, একটা স্যাট ফোন আর কিছু নতুন ইলেক্ট্রনিক সরঞ্জাম। সমস্ত কিছু পরখ করে বডি আর্মারের জুড়ে নিল।  

সবশেষে, তবে মোটেই ফেলনা নয়, দশ ইঞ্চি ব্যারেল আর একজোড়া বাড়তি ম্যাগাজিনসহ একটা মডিফাইড হেকলার অ্যান্ড কচ এইচকে ৪১৬ রাইফেল। ওসব বের করে বেসামরিক জামাকাপড় আর জুতো ডাফল ব্যাগে রেখে চেইন আটকে দিল ও। 

উর্দি গায়ে চাপানোয় অসংখ্য পুরোনো স্মৃতি আবার ঠেলাঠেলি করে মনে জেগে ওঠার চেষ্টা করতে লাগল। বেশ কয়েক মাস আগে শেষবার এই পোশাক গায়েই সার্বিয়ায় গিয়েছিল, যে মিশনের কথা জানতে চাইছিল অনিকা।  

ফিউজিলাজের একটা জায়গার দিকে নজর স্থির রেখে ওই ব্যর্থ মিশনে প্রাণ হারানো দলীয় সদস্যদের কথা ভাবল ও। শের, খালিদ, ক্লেটন, আলীয়া বোরেযান--বিশেষ করে বোরোযান। ওই মিশন থেকে জীবিত ফিরে আসার কথা ছিল আলীয়ার, ওর নিউ হ্যাম্পশায়ারের বাড়িতে লম্বা ছুটি কাটাবে বলেছিল। 

পুরোনো ভাবনা। 

ঠেলে দূর করে দিল এসব ভাবনা। 

ওয়েবিংয়ে বসে ঘড়ি দেখল। আর বেশিক্ষণ না। 

এখন সত্যিই ওর দিকে তাকিয়ে আছে জ্যাক। চেঁচিয়ে কিছু বলছে। তারিক মাথা নেড়ে ঠোঁটের উপর আঙুল রেখে চুপ থাকতে ইশারা করল তারিক। নিচে নামবে বলে বাঁক নিল সি-১৩০, এঞ্জিনের গুঞ্জনে পরিবর্তন দেখা দিল। নামতে যাচ্ছে, বুঝতে পারল ও।  

বেশিক্ষণ লাগবে না। 

ক্ষীণ একটা দুলুনি, মৃদু আওয়াজ, ব্রেকের তীক্ষ শব্দ, পরক্ষণে আবার বদ লে গেল এঞ্জিনের শব্দ। গতি কমাতে রিভার্স থ্রাস্ট ব্যবহার করছে পাইলট। সামনে গিয়ে পাইলট এবং ক্রুদের ধন্যবাদ জানানোর কথা ভাবল ও, বিশেষ করে এখানে এয়ারস্ট্রিপ না থাকায় সত্যিই দুর্দান্ত ল্যান্ডিং ছিল এটা। 

সি-১৩০ আরও শ্লথ হয়ে আসায় একটা ধাক্কা লাগল। আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল ফিউজিলাজের ভেতরের লাল বাতি। র‌্যাম্প নামানো হচ্ছে। যদিও সামনে বাড়ছে ওরা। শীতল, ধারাল হাওয়া ধেয়ে এলো। উঠে দাঁড়াল ও। ছুরি দিয়ে জ্যাককে যিপ টাইয়ের বাঁধন থেকে মুক্ত করল। ওর পাজোড়া নড়বড় করছে, কিন্তু ওকে দাঁড়াতে সাহায্য করল ও। তারপর ঢালু র‌্যাম্প বেয়ে নেমে এলো। ওরা বাইরে আসতেই জমিনে লুটিয়ে পড়ল জ্যাক।  

সি-১৩০ এগিয়ে চলল। দিশা ঠিক রেখে জ্যাককে জমিন থেকে তুলল ও। 

ভেতরের লাল বাতি নিভে গেল। র‌্যাম্প আবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মরুভূমির বুকের উপর দিয়ে দ্রুতবেগে আগে বেড়ে আকাশে লাফিয়ে উঠল ওটা, জোরালো হলো এঞ্জিনের গর্জন। ভালো করে নজর চালিয়ে একটা কালো অবয়বকে কিছুক্ষণের জন্যে দৃষ্টিকে রুদ্ধ কওে থাকতে দেখল ও। এমনিতে ওটার অস্তিত্ব বোঝার জো নেই। 

ওর পাশে থরথর করে কাঁপছে জ্যাক। 

চারপাশে কেবল ধুধু মরুভূমি, দূরে পাহাড় সারি; আকাশের বুকে হাজারো উজ্জ্বল তারা । 

এখানে ওরা সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ।

৩৪.

সি-১৩০ বিমান বিদায় নিতেই কাজে নেমে পড়ল তারিক। ব্যাটলপ্যাক থেকে আধ ডজন প্লাস্টিকের গ্লো-স্টিক বের করে ঝাঁকি মেরে জ্বাললো। মরুর বুকে এদিকওদিক ছড়িয়ে দিল ওগুলো। ভৌতিক হলদে-সবুজ আলোয় আলোকিত হয়ে উঠল জায়গাটা। এই সুযোগে দৌড়ে পালানোর প্রয়াস পেল জ্যাক, কিন্তু সে পাঁচ কদম যাওয়ার আগেই পাকড়াও করে ফেলল ও। জমিনে আছড়ে ফেলে ফের ওর কব্জি আর গোড়ালি প্লাস্টিকের যিপ-টাই দিয়ে বেঁধে ফেলল।  

'খুবই করুণ,' বলল ও। 'কপাল ভালো, ভক্তদের কেউ তোমার এভাবে বেইজ্জতি হওয়া দেখছে না।'

অনেক কসরত করে কোনোমতে বসার মতো একটা ভঙ্গিতে এলো জ্যাক। হাসতে শুরু করল সে। ওর কাণ্ড দেখে অবাক হলো তারিক।  

'আচ্ছা, আচ্ছা, মানছি,' বলল সে। 'তোমার কথা বুঝতে পেরেছি।'

ব্যাটলপ্যাক থেকে আরও কিছু জিনিস বের করল তারিক: একটা দীর্ঘ ধাতব পিস্টন, ওটার একপ্রান্তে ফুটো, ছয় ফুট লম্বা একটা শেকল, আর হাতুড়ি। 

'তা কি বুঝতে পেরেছ, জ্যাক?' জানতে চাইল ও। হাতুড়ির বাড়িতে পিটনটা জমিনে গাঁথতে শুরু করল ও। সহজে ঢুকতে চইছে না; তাতে অবশ্য পরোয়া নেই। বরং ভালোই বলতে হবে, সারা সপ্তাহ টানাটানি করে মরলেও পিটন উপড়ে তুলতে পারবে না জ্যাক। 

'আমি খারাপ, ঠিকাছে? স্বীকার যাচ্ছি। কিন্তু তুমি...তুমি কি এসব করছ বলে তোমার ধারণা?'

হাতুড়ির বাড়ি অব্যাহত রাখল ও। 'ন্যায়বিচার। যেটা করতেই হবে।'

আবার হাসি। 'ন্যায়বিচার?' এই দুনিয়ায়? দেখ...একটা ঝামেলার দুনিয়ায় আছো তুমি, বন্ধু। জাঁ-পল-এ চাক্ষুষ সাক্ষী আছে, তুমি আমাকে অপহরণ করছ, ওরা দেখেছে। আমাকে স্টেট লাইন পার করে আনতে তোমাকে সাহায্য করেছে যে ড্রাইভার, সে আছে...তুমি এবং তোমার মিলিটারি বন্ধুদের কথা বুঝতে পেরেছি আমি। কিন্তু এখন পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।'

হাতুড়ির কাজ শেষ হলো তারিকের। পিটনটা সর্বশক্তিতে টেনেটুনে পরখ করল। নাহ, একটুও নড়ছে না। 

'মানলাম,' বলল ও। 'পরিস্থতি নাগালের বাইরে চলে যেতে দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।'

'ঠিকাছে,' বলল সে। 'তাহলে আমার পরামর্শ শোনো, বন্ধু। এসো, আমরা বন্ধু বনে যাই। ফোন করে আমাদের তুলে নিয়ে যেতে একটা ফ্লাইটের ব্যবস্থা কর। তাহলে আমার সঙ্গে এতক্ষণ যা যা করেছ, সব ভুলে যাব। ম্যানহাটানে ফিরে দুনিয়ার সেরা খাবার খাওয়াব তোমাকে। এমনকি তোমাকে আমার নেটওয়ার্কের কনসালটেন্টও করে নিতে পারি। টনকে টন টাকা বানানোর লাইন পেয়ে যাবে। স্রেফ...তোমার বন্ধুদের খবর দাও।'

শেকলের একটা প্রান্ত পিটনের সাথে জুড়ল তারিক। 'ওরা আমার বন্ধু নয়, জ্যাক। তুমিও আমার বন্ধু নও।'

'ঠিকাছে, ঠিকাছে, যেমন বললাম, বুঝতে পেরেছি,' বলল জ্যাক। 'তোমার তরফে চমৎকার কাজ হয়েছে। আমি মন্দ লোক। তাতে কি? এমনি হাজারো বাজে লোক আছে দুনিয়ায়। একজন কম-বেশিতে কি আসে যায়?' 

শেকলের আরেক মাথা ধরে জ্যাকের কাছে নিয়ে এলো ও। সরে পড়ার চেষ্টা করল জ্যাক, বলাবাহুল্য সেটা সম্ভব হলো না। 

'ঠিক,' বলল তারিক। 'দুনিয়ায় মন্দ লোকের অভাব নেই। কিন্তু একটা বিশেষ জায়গা আছে তোমার, একেবারে তোমার নিজস্ব জায়গা। তুমি স্রেফ খবর তৈরি করার জন্যে আমেরিকান সৈন্যদের মৃত্যুর আয়োজন করেছ। অথছ তুমি নিজেই আমেরিকান। কিভাবে এমন কিছু করতে পারলে?'

শেকলটা ওর গোড়ালিতে বাঁধার সময় আবার হাসল জ্যাক। 'তুমি খবর পাওনি, বন্ধু? জাতি-টাতি এসব পুরোনো হয়ে গেছে হে। ডানেবামে সব সীমানা মুছে যাচ্ছে। আমি এখন বিশ্ব নাগরিক, অতীতের ওসব বস্তাপচা ধ্যানধারণা থেকে বহুদূর এগিয়ে গেছি, কোনো জাতির গুটি বা প্রজা হওয়ার মতো অবস্থায় আর নেই। মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেট কর্মী আমি, আপাদমস্তক। খবরটা তৈরি ছিল, আমি স্রেফ নিজের জন্যে তুলে নিয়েছি। সরি।'

শেকল ধরে জোরসে টান লাগাল তারিক। কিছুই নড়ছে না। ভালো। 'তোমার কথাবার্তায় কিন্তু তেমন মনে হচ্ছে না।'

লোকটার মনের উপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করা গেছে বলে মনে হলো তারিকের। এখন সে যাচ্ছেতাই বলে খিস্তিখেউড়ের পথে নেমেছে। অশ্রাব্য গালিগালাজ স্রোতের মতো বেরিয়ে অসছে তার মুখ থেকে। মামলামোকদ্দমার ভয় দেখাচ্ছে, সবকিছু চুকে যাওয়ার পর তারিকের বারোটা বাজানোর কথা বলছে। আরো নানা কথা।  

হাজার হোক, মনটা নরম ওর, তাই বাধা দিল না তারিক, তাকে ইচ্ছামতো গালিগালাজ করার সুযোগ দিল।  

কিছুক্ষণ মুখখিস্তি করে হাঁপিয়ে গেল সে, থেমে দম নিল। 'যথেষ্ট তামাশা হয়েছে, শালা। এবার আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো। যেতে দাও আমাকে, নইলে আমার নেটওয়ার্ক, আমার উকিল এবং আমি নিজে তোমার বারোটা বাজিয়ে ছাড়ব বলে দিচ্ছি।'

হাতুড়িটা আবার ব্যাটলপ্যাকে রাখল তারিক। ব্যাগটা তুলে কাঁধের উপর ফেলল। 

ওইযে, দিগন্তে আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে। 

ঠিক সময়মতো। 

ও কোনদিকে তাকিয়ে আছে খেয়াল করে জ্যাকের উদ্ধত আর বেপরোয়া ভাব উধাও হলো। 

'কি ওটা?' জানতে চাইল সে।  

'তোমার বিশ্ব নাগরিক বন্ধুরা শুভেচ্ছা জানাতে আসছে বোধহয়।'

'কি বলছ?' 

আরও একদফা গিয়ার গুছিয়ে নিল তারিক। যাতে কোনো বিভ্রান্তি অবকাশ না থাকে, তাই সরাসরি জ্যাকের দিকে তাকাল। 

'এখন আফগানিস্তানের তালিবান নিয়ন্ত্রিত হেলমান্দ প্রদেশে আছি আমরা, তোমার সর্বশেষ সাংবাদিকতার সাফল্যেও এলাকা,' বলল ও। 'আনন্দ করো।'

  • (চলবে)

Related Topics

স্পাই থ্রিলার

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • জার্মানিতে ৩৩ মিলিয়ন ইউরো ঋণ খেলাপি বেক্সিমকো; চেক প্রজাতন্ত্রে দেশবন্ধুকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত
  • ইসরায়েলের প্রতি কোনো দয়া দেখাব না, 'যুদ্ধ শুরু হলো': ট্রাম্পের হুমকির পর খামেনির বার্তা
  • সিআইএ-এর গোপন ঘাঁটি ছিল এ রানওয়ে; পরিচিত ছিল বিশ্বের ‘সবচেয়ে গোপন স্থান’ হিসেবে
  • টানা ব্যবহারে ফুরিয়ে আসছে ইসরায়েলের প্রতিরোধকারী ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার
  • কেন অধিকাংশ ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট লাল লিপস্টিক পরেন?
  • খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে ১৭ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ১.৭৭ লাখ কোটি টাকা

Related News

  • ‘দ্য ম্যান ফ্রম আংকল’-এর হার্টথ্রব স্পাই ডেভিড ম্যাককালাম মারা গেছেন
  • গুপ্তচর থেকে রুদ্ধশ্বাস থ্রিলার লেখক জন লে কারের বিদায়
  • মৃত্যুর মিছিল
  • মৃত্যুর মিছিল
  • মৃত্যুর মিছিল

Most Read

1
অর্থনীতি

জার্মানিতে ৩৩ মিলিয়ন ইউরো ঋণ খেলাপি বেক্সিমকো; চেক প্রজাতন্ত্রে দেশবন্ধুকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত

2
আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলের প্রতি কোনো দয়া দেখাব না, 'যুদ্ধ শুরু হলো': ট্রাম্পের হুমকির পর খামেনির বার্তা

3
আন্তর্জাতিক

সিআইএ-এর গোপন ঘাঁটি ছিল এ রানওয়ে; পরিচিত ছিল বিশ্বের ‘সবচেয়ে গোপন স্থান’ হিসেবে

4
আন্তর্জাতিক

টানা ব্যবহারে ফুরিয়ে আসছে ইসরায়েলের প্রতিরোধকারী ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার

5
আন্তর্জাতিক

কেন অধিকাংশ ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট লাল লিপস্টিক পরেন?

6
অর্থনীতি

খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে ১৭ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ১.৭৭ লাখ কোটি টাকা

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net