স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকার জনজীবন

মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে আর কোনো গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। ফলে অনেকটাই স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার জনজীবন।
টানা এক সপ্তাহ ধরে দেশটিতে চলা অভ্যন্তরীণ সংঘাতের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতেও। মিয়ানমারের ছোড়া মর্টার শেলে বাংলাদেশে দুজন নিহত ও ১০ জন আহতের ঘটনাও ঘটেছে। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে ঘরবাড়ি ছাড়েন স্থানীয়রা।
রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঘুমধুম ইউনিয়নের ঘুমধুম বাজার, বেতবুনিয়া বাজার, তুমব্রু বাজার, পশ্চিমকুল, নয়াপাড়া, কোনারপাড়া, হিন্দু পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয়রা বাজারের দোকানপাট খুলেছেন। বাজারে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়েছে। সীমান্তবর্তী ফসলের মাঠগুলোতেও কৃষকদের কাজ করতে দেখা গেছে।
ইউনিয়নের কোনারপাড়ার বাসিন্দা হামিদ উল্লাহ কাজ করেন গরুর খামারে। শনিবার ২০টিরও বেশির গরু নিয়ে ফিরেছেন তিনি। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'গোলাগুলি শব্দ নেই বললেই চলে। মর্টার শেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটছে না। রাতে দূরে দূরে অল্প কিছু গোলাগুলি হয়। এখন পরিস্থিতি ভালো।'
তুমব্রু বাজারের মুদি দোকানি দিল মোহাম্মদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বেশিরভাগ মানুষ চলে এসেছে। তিন দিন ধরে পরিস্থিতি ভালো। অনেকে উখিয়াসহ দূরে গিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সবাই চলে আসছেন।'
ঘুমধুম এলাকার টমটম চালক হাশেম শাহ টিবিএসকে বলেন, 'ঘুমধুমের পশ্চিমকুলের দুটি মর্টার শেল পড়ে আছে। লাল পতাকা দিয়ে রাস্তা বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া পরিস্থিতি ভালো। সবাই বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন।'
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, 'মানুষ তার জন্মস্থান বা বাপ-দাদার ভিটামাটি কখনোই ছেড়ে যেতে চায় না। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় তারা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় মানুষজন আস্তে ধীরে তিন দিন আগে থেকেই আসতে শুরু করেছেন। প্রথমে পুরুষরা এসেছিলেন। এরপর পরিবারের নারী-পুরুষ সদস্যদের নিয়ে এসেছেন। সীমান্তের মানুষ আমরা। এসব নিয়ে বাঁচতে হবে।'
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন ছাড়াও কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন এবং টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী স্থানগুলোতেও গোলাগুলির শব্দ শোনা গিয়েছিল। এসব এলাকার সীমান্তবর্তী ঘরবাড়ি ও দোকানপাটেও মর্টার শেল এসে পড়েছিল।
সর্বশেষ শনিবার ভোর ৫টা থেকে তিন ঘণ্টা টানা ও মুহুর্মুহু গোলাগুলি শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উত্তরপাড়া ও মাঝেরপাড়ার বাসিন্দারা। এসব এলাকার সীমান্তবর্তী মাঠ, মাঠের ঘের, কয়েকটি বাড়ি ও দোকানপাটে গুলি এসে পড়েছিল। তবে এরপর থেকে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, 'গোলাগুলি বন্ধ রয়েছে। মানুষ কাজে ফিরেছেন।'
এদিকে রবিবার সকালে উখিয়া উপজেলার বালুখালী ব্রিজের নিচ থেকে অজ্ঞাত পরিচয় একটি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। লাশের মাথায় হেলমেট ও হাতে গ্লোভস ছিল। তবে স্থানীয়রা বলছেন, লাশটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আবু কালামের।
এর আগে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের দায় ২৩ রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে শনিবার বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি মামলা করে।
জাতিগত সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে চলমান সংঘাতে কোণঠাসা হয়ে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের সদস্য, কাস্টমস, সামরিক কর্মকর্তা ও বেসামরিক নাগরিকসহ ৩৩০ জন বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।