Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Monday
May 26, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
MONDAY, MAY 26, 2025
জলে, জঙ্গলে পশুপাখিদের সন্ধানে তিন কন্যার নানান অভিযান...

ফিচার

প্রত্যাশা প্রমিতি সিদ্দিক
28 February, 2023, 07:10 pm
Last modified: 01 March, 2023, 11:00 pm

Related News

  • কোরিয়ান ইপিজেডে হাতিদের সুরক্ষায় বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের
  • হাকালুকি হাওরে পরিযায়ী পাখি কমেছে অর্ধেক
  • সাতছড়ি উদ্যানের পাখিদের জন্য করোনা এক আশীর্বাদ
  • ১,৪০০ কি.মি. পাড়ি দিয়ে লকডাউনে আটকে পড়া ছেলেকে উদ্ধার করলেন মা

জলে, জঙ্গলে পশুপাখিদের সন্ধানে তিন কন্যার নানান অভিযান...

প্রকৃতির এতোটা মুখোমুখি, বিপদের ভয় নেই যে তা নয়। শুমারি ও ক্যাম্পিংয়ের একদম প্রথমদিকের এক অভিজ্ঞতার কথা জানালেন জেনিফার।
প্রত্যাশা প্রমিতি সিদ্দিক
28 February, 2023, 07:10 pm
Last modified: 01 March, 2023, 11:00 pm
উপকূলীয় জলচর পাখিশুমারিতে সহকর্মীদের সাথে জেনিফার আজমেরী ও জোহরা মিলা। ছবি: সৌজন্যে

'২০১৭ সালের ঘটনা। মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়ার গভীরে জরিপের কাজ করছিলাম। হঠাৎ সঙ্গীদের ইশারা। এই ইশারার মানে যারা জলে-জঙ্গলে কাজ করি- তাদের কাছে স্পষ্ট। একদম নিঃশ্বাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে গেলাম। কতক্ষণ যে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তা বলা মুশকিল। পায়ের ওপর দিয়ে যাচ্ছিল 'ক্রেইট'। যা কিনা কেউটে সাপ হিসেবে পরিচিত। নড়লে আর সেবার রক্ষা ছিল না।' কথাগুলো বলছিলেন জোহরা মিলা। পেশায় বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন। প্রায় এক দশক ধরে বন্য প্রাণী সংরক্ষণসহ বিভিন্ন শুমারিতে অংশ নিচ্ছেন। বন্য প্রাণী নিয়ে কাজের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা হচ্ছিল মিলার সঙ্গে। 

তার মুখ থেকেই শুনছিলাম, এখন পাখি দেখা, গণনা যেন একটা নেশায় দাঁড়িয়েছে। কখনও বন অধিদপ্তরের হয়ে, কখনও 'বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব'- এর হয়ে, ছুটি জমিয়ে নিজের ব্যক্তিগত খোড়াক মেটাতে বেরিয়ে পড়েন বাড়ি ছেড়ে। আজ হাওড়, তো কাল অন্য এক চর, এই নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয় সারাবছর। বর্তমানে বাংলাদেশে পাখিদের সবচেয়ে বড় এ ক্লাবটিতে বর্তমানে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন তিনি। জানালেন, মোটামুটি দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার জন্য শিক্ষকদের অধীনে বিভিন্ন জরিপে অংশ নিতে হয়েছে। "শহুরে ইট-কাঠের ভেতর বড় হওয়া, বন-জঙ্গল-পাখি ভালো লাগত, কিন্তু এগুলো দেখার, উপভোগ করার সুযোগ ছিল না। এখন সেই সুযোগ সদ্ব্যবহারের সুযোগ পাই।"

হাকালুকি হাওরে জরিপের কাজে জোহরা মিলা। ছবি: সৌজন্যে

'চাকরির পাশাপাশি সারাবছরই পাখির খোঁজে বনে বনে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসি, তাই অবসর পেলেই বেরিয়ে পড়ি'। এপর্যন্ত কতগুলো পাখিশুমারিতে অংশ নিয়েছেন সেই হিসাব আর করতে পারেন না। খালি পাখি দেখা বা শুমারি? বনের গহিনে রয়েছে কত ঝুঁকি বা বিপদের ভয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বললেন, একবার নাকি লাউয়াছড়াতে শুমারির সময় এতোটাই কাজে মনোযোগী ছিলেন যে, আরেকটু হলেই ট্রেনের নিচে কাটা পড়তে যাচ্ছিলেন। "কোনোভাবে সেবার বন্ধুদের সহায়তায় আবারও বেঁচে যাই। এমনকি জরিপের কাজে ঘুরতে গিয়ে বুনোহাতিদের ধাওয়া খাওয়ার অভিজ্ঞতাও রয়েছে বেশ কয়েকবার", বলেই হাসলেন মিলা।

কথা প্রসঙ্গে জানলাম, এ বছর ১২ জানুয়ারি শুরু হওয়া উপকূলীয় জলচর পাখিশুমারিতেও অংশ নেন তিনি। উপকূলীয় জলচর পাখিশুমারিতে এরআগেও একবার অংশ নিয়েছিলেন তিনি।তবে এবারের ঘটনাটি ছিল তারজন্যে ব্যতিক্রম, এমনটি দাবি মিলার। কারণ শুমারি ভোলাতে। লঞ্চে ঢাকা থেকে ভোলায় যেতে অংশ নিতে সদরঘাট যান। প্রচুর যানজটের কারণে লঞ্চঘাটে পৌঁছেই দেখতে পান, তাকে রেখে তার দলের বাদবাকি সদস্যদের নিয়ে নির্ধারিত লঞ্চটি ছেড়ে দিয়েছে! 

একে তো সন্ধ্যা, এরপর দলের বাকি সদস্যরা সবাই আগের লঞ্চে, ভয় লাগছিল না? স্বাভাবিকভাবে অন্য যে কেউ হলে হয়তো ফিরে যেতেন। ঢাকা থেকে ভোলা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু অন্য সবার চেয়ে আলাদা বলেই ঠিক আধঘণ্টা পরের লঞ্চে রওনা দিলেন ভোলার উদ্দেশ্যে জোহরা মিলা। "মিলার সোজাসাপ্টা উত্তর, "না। সেই ২০০৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ভর্তির পর বিভিন্ন জরিপের কাজে শিক্ষকদের সঙ্গে অংশ নিয়েছি। এতগুলো বছর ধরে এ কাজের সঙ্গে রয়েছি। এজন্যই বোধহয় একবারের জন্য মনে হয়নি হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো কিছু হয়েছে।" জানালেন, লঞ্চটা না পেয়ে তার মনের ভেতর একরকম জেদ কাজ করছিল। 

"এছাড়া দলের অন্য সদস্যরা বরং সেইসময় আমার ওপর ভরসা করতে পেরেছিল। একবারও কেউ ফিরে যাওয়ার কথা বলেনি। কেউ জিজ্ঞেস করেনি, তুমি সাহস করতে পারবে তো? বরং বারবার বলছিল, যাতে পরের লঞ্চে চলে আসি। ভালো লাগছিল এই ভেবে যে, দলের অন্যান্য সদস্যদের এই ভরসা বা আস্থার জায়গাটা আমি তৈরি করে নিতে পেরেছি।"

পাখি ধরার কাজে জেনিফার আজমেরী। ছবি: সৌজন্যে

তবে একদিনে তৈরি হয়নি এ জায়গা, এমনটি জানাচ্ছিলেন মিলা। "পাখিশুমারির কাজে গেলে, স্বাভাবিকভাবেই টানা ১০ দিনও ঘরের বাইরে থাকতে হয়। ছেলেরা কোনোভাবে গোসলের কাজগুলো হয়তো করে নিতে পারে, কিন্তু মেয়েদের পক্ষে তো সেভাবে সম্ভব নয়। কিন্তু এসব বিষয় নিয়ে ফিল্ডে গেলে একেবারেই ভাবি না। প্রথমদিকে যে অসুবিধা হতো না, তা নয়, তবে প্রত্যেকবারই নতুন করে কিছু না কিছু শিখি। প্রত্যেকবারের অভিজ্ঞতাই পরেরবার কাজে লাগে। কারণ আমরা যদি পিছিয়ে আসি, কারণ আমরা যদি পিছিয়ে আসি তাহলে পরবর্তীতে নতুনরা কাজে আসতে পারবে না" এমনটি মনে করেন মিলা।

একজন পাখি দেখিয়ে বা বার্ড ওয়াচারের কাজ শুধু পাখি দেখা নয় বা নতুন প্রজাতির সন্ধান করা নয় বরং পাখির মাইগ্রেশন প্যাটার্ন লক্ষ্য করা, তার আবাসস্থল শনাক্ত করা, এমনকি পাখির নতুন জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও প্রজনন অভ্যাসের নোট নেওয়াও। এমনটি জানাচ্ছিলেন মিলা। তার কথার সঙ্গে মিলে গেল বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ জেনিফার আজমেরির কথাও। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘে (আইসিইউএন) কাজ করেন তিনি। পাখি আর বন্যপ্রাণী তার ভালো লাগার জায়গা। 

জানাচ্ছিলেন, তিনি আর জোহরা মিলা দুজনই বন্ধু। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগ ও ব্যাচের শিক্ষার্থী, আবার বার্ড ক্লাবে যোগ দেওয়া একসঙ্গেই! ২০১২ সালে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিলেন মিলা আর জেনিফার নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি আয়োজিত 'পাখিমেলায়'। সেখানে অনেকটা বন্ধুদের পাল্লায় পড়েই পাখি-সংক্রান্ত একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেন তারা; তেমন কোনো প্রস্তুতি না থাকার পরও দ্বিতীয় হন উভয়ে। নজরে পড়েন, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা পাখি দেখার পথিকৃৎ ইনাম আল হকের সঙ্গে। "তাঁর উৎসাহেই বার্ড ক্লাবের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া, এরপর থেকে পাখি দেখাটা নেশায় পরিণত হয়।"

তার সঙ্গে কথা বলতে জানা গেল, ২০১২ সালের দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স চলাকালীন পাখির প্রতি ভালোবাসা থেকে সেই যে শুরু করেছিলেন বার্ড ওয়াচিং, তারপরের প্রায় এক দশকে ঘুরে ফেলেছেন পুরো দেশের হাওড়-বাওড়সহ উপকূলীয় এলাকা। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত  খুব বেশি হলে হয়তো ১০-১২ দিন বাসায় থাকেন এখন। এর ফাঁকেই জানালেন, উপকূলীয় জলচর পাখিশুমারি শেষে এ বাসায় ফিরেছেন মাত্র একদিন আগে। 

ছবি: সৌজন্যে

প্রকৃতির এতোটা মুখোমুখি, বিপদের ভয় নেই যে তা নয়। শুমারি ও ক্যাম্পিংয়ের একদম প্রথমদিকের এক অভিজ্ঞতার কথা জানালেন জেনিফার। "পাখিদের পায়ে ফিতা বেঁধে (রিঙ্গিং প্রজেক্ট) দেওয়ার জন্য বাইক্কা বিলে যাই সেবার। শুমারিতে বা রিঙ্গিং ক্যাম্পে অংশ নিলে তাঁবুতে বা নৌকাতেই থাকি। সারাদিন কাজ শেষে খোলা আকাশে তাঁবুর নিচে থাকতে গিয়ে- ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হয়েছিল; ঘুমাতে গিয়ে বুঝতে পারছিলাম আমাদের তাঁবুর চারপাশে বেশ কয়েকটা শেয়াল ঘিরে রয়েছে। শেয়াল আর আমাদের মধ্যে ব্যবধান একমাত্র তাঁবু! এমনকি শেয়ালের শ্বাস নেওয়ার শব্দও শুনতে পারছিলাম! কতক্ষণ যে দম আটকে শুয়েছিলাম, শেষমেশ পাশের তাঁবুতে যারা ছিল, তারা বেরিয়ে শেয়ালগুলো তাড়ানোর পর মনে হয় হালে পানি ফিরে পেলাম।" সেবারে তার সঙ্গী ছিলেন মিলাও।  

তবে একলা চলো রে..

পাখি বা অন্য কোনো বন্যপ্রাণি শুমারি যাইহোক, প্রতিমাসে কম করে হলেও অন্তত দুবার করে কোনো না কোনো ট্রিপে যান বলে জানালেন জেনিফার! "তবে প্রথমদিকে বিষয়গুলো খুব একটা সহজ ছিল না। বিশেষ করে এ ফিল্ডে মেয়েদের সংখ্যা খুব কম। এজন্য বিভিন্ন জরিপ বা অন্য কাজে প্রায়ই একা যেতে হয়েছে তাকে।" 

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় দেখতেন যে, থিসিস বা যেকোনও গবেষণা কাজে প্রায়ই সাধারণত ক্যাম্পাস এলাকার ভেতরের কোনো টপিকই বেছে নিতো মেয়েরা। আর ছেলে শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগ বাইরে ফিল্ড ওয়ার্ক করতো। এই বিষয়টা একেবারেই ভালো লাগতো না তার। তবে তাদের কাজ শুরুর এক দশক কেটে গেলেও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়েনি নারীদের অংশগ্রহণ, এ নিয়ে আফসোস করলেন জেনিফার।

"তখন মাস্টার্সের জন্য ইন্টার্ন করছিলাম। বিভিন্ন প্রজেক্টে প্রায়ই বিভিন্ন জেলায় যেতাম। এমনকি প্রজেক্ট না থাকলেও যেচে পড়েই হাজির যেতাম বিভিন্ন ট্রিপে। এরকম করে একবার সুন্দরবনেও চলে যাই গোঁ ধরে। ১০-১২ জন ছেলের মধ্যে কেবল আমিই একমাত্র মেয়ে ছিলাম সেবার।" তবে দলের অন্য সদস্যদের সহযোগিতার কারণে খুব একটা সমস্যা পড়তে হয়নি, এমনটিও জানিয়ে বললেন, বার্ড ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় আমার জন্য ফিল্ডে যাওয়ার বিষয়টা অনেকটাই সহজ হয়ে গিয়েছিল। 

ছবি: সৌজন্যে

এবারে তার কাছ থেকে জানলাম বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের বিষয়ে। পাখি দেখা ও রক্ষণাবেক্ষণে উৎসাহী একদল মানুষ সংশ্লিষ্ট রয়েছে এ ক্লাবের সঙ্গে। এর প্রতিষ্ঠাতা প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক। বাংলাদেশে পাখি শুমারির নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন তিনি। তার ও তার ক্লাবের তত্ত্বাবধানে প্রতি বছর উপকূলীয় অঞ্চলের জলচর, কাদাচর, হাওরের বিল, সুন্দরবনে জলচর পাখিশুমারি অনুষ্ঠিত হয়। 

সারাবিশ্বে 'ওয়েটল্যান্ডস ইন্টারন্যাশনাল' নামে একটি সংগঠন শুমারির সমন্বয় করে। সংগঠনটির বাংলাদেশের সমন্বয়ক ইনাম আল হক। ১৯৯৪ সাল থেকে যিনি পাখি শুমারির সঙ্গে সম্পৃক্ত। পাখির পাখায় স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসানো, পায়ে রিং পড়ানো, শুমারির কাজগুলো তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জেনিফারের কথা বেরিয়ে এল- পাখি শুমারি ও স্যাটেলাইট ট্যাগিং বা রিঙ্গিং প্রজেক্ট নিয়ে আরেকটি তথ্য। তিনি জানালেন, এই প্রজেক্টগুলোর মধ্য দিয়ে জানা যায় ওয়েটল্যান্ড বা জলাভূমির অবস্থা। এছাড়া রিং পরানোর মধ্য দিয়েও একটি পাখি কতবছর বাঁচে তাও জানা যায়। 

জরিপের অভিযানে জেনিফার। ছবি: সৌজন্যে

পাখি ও বন্য প্রাণী দেখে বেড়ান, বাংলাদেশে এমন যে কয়জন নারী আছেন, তাদের মধ্যে ফাতেমা তুজ জোহরা অন্যতম। জরিপের কাজে যিনি সুন্দরবনে গেছেন ৫ বার। বাঘও দেখেছেন! পাখি দেখে বেড়ানো ছাড়াও শুশুক বা যেকোনো প্রাণী টানে তাকে। "প্রকৃতি ভালো লাগত আগের থেকেই তবে এর সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগ পাই ২০১৩ সালে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত পাখিমেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে। সেবারই বার্ড ক্লাবের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। পরবর্তীতে একের পর এক ক্লাবের হয়ে বিভিন্ন জরিপে অংশ নেই। ওয়াইল্ড টিম (ইউএইড বাঘ এক্টিভিটি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডিয়ান স্কিমার ট্যাগিং প্রজেক্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হেকেপের মতো (হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহান্সমেন্ট প্রজেক্টে) অংশ নিয়েছি।" 

সুন্দরবনের অভিযানে তিন নারী বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ। ছবি: সৌজন্যে

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবটির আরও এক সদস্য তিনি। জানলাম, বর্তমানে মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজে পড়ান প্রাণিবিদ্যায়। জানালেন, ' ২০১৩ সালের পর থেকে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন শুমারিতে অংশ নিতাম। এখন পড়ানোর কারণে জরিপের কাজগুলোতে আপাতত খুব একটা অংশ নিতে পারি না। তবে নিজের শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করি পাখি দেখার বিষয়ে।' 

সুন্দরবনের গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবন সংগ্রাম, মধু, গোলপাতা সংগ্রহ করতে যেয়ে জীবন হারানোর বেদনার বিষয়গুলো খুব টানে এ তাকে। জরিপের কাজ করতে গিয়ে টুরিস্টদের যত্রতত্র ময়লা ফেলে রাখার বিষয়টি খুব বেদনা তৈরি করে বলেও জানালেন তিনি। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করতে চান। ফাতেমার মতে এক্ষেত্রে ফান্ডিং খুব জরুরি, সেজন্য সৎ পথে উপার্জন করে এরপর বিভিন্ন জরিপ ও শুমারির কাজে অংশ নিতে চান তিনি।

সুন্দরবনে ফাতেমা তুজ জোহরা। ছবি: সৌজন্যে

'নারীরাও পারি'

সকাল-সন্ধ্যা ভারী-ভারী যন্ত্র নিয়ে পাখি দেখা, পায়ে রিং বা আংটির মতো পরানো এগুলো নিয়মিত করে থাকেন মিলা, জেনিফাররা। জেনিফারের কাছ থেকেই জানলাম, বার্ড রিংগিং বিষয়েও। তিনি জানালেন, প্রথমে বেশি সংখ্যক পাখিদের বিচরণ রয়েছে এমন একটি স্থান নির্বাচন করতে হয়। এরপর দিনের যে সময়টাতে পাখি সবচেয়ে বেশি যাতায়াত করে, সে সময় অতি সূক্ষ্ম ধরনের জাল বসানো হয়। পরে পাখিগুলোকে ধরে তাদের পায়ে রিং পরিয়ে দিতে হয়। আর প্রথমদিকে এ কাজগুলোতে তাদের দলের অন্যান্য পুরুষ সদস্যরা সাহায্য করতে চাইতেন। তবে এক্ষেত্রে নিজেদের কাজটা নিজেরাই করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বলে জানালেন জেনিফার। তারমতে, "ভারী যন্ত্রপাতিগুলো আমরা নিজেরাই টানি। আমাদের কারণে যেন, পরবর্তীতে এই পেশায় আসবেন যেসব নারীরা, যেন তাদের কোনো সমস্যায় না পড়তে হয়।"

অভিযানের সময় যা জোটে আহার তাতেই সারতে হয়, নাস্তায় সহকর্মীদের সঙ্গে বসে গুড়, মুড়ি খাচ্ছেন মিলা ও জেনিফার। ছবি: সৌজন্যে

এই তিন বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞই মনে করেন, এখন যদি তারা বেশি বেশি কষ্ট ও পরিশ্রম করেন– তাহলে ভবিষ্যতে মেয়েদের জন্য একে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে তা সহায়ক হবে। হাজারো সমস্যায় পিছপা না হওয়া জোহরা মিলা জানাচ্ছিলেন, "কাজ শুরু করার পর প্রথমদিকে বাসায় থেকে বেশ বিপত্তির মুখে পড়তে হয়েছিল। তবে এখন আর তেমন নেই। বরং মনে হয়, এখন পরিবারই সবচেয়ে বেশি সহায়তা করে। এক সময় পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনরা নানান (নেতিবাচক) কথাবার্তা শোনাতেন । তবে এখন পরিস্থিতি অনেকখানিই পাল্টে গেছে। যেইসব আত্মীয়স্বজন আগে কটু কথা বলতো, তারাই এখন আমাদের কাজের জন্য মা-বাবাকে প্রশংসা করেন। ওইসময়গুলো খুব ভালো লাগে।"

উপকূলীয় জলচর পাখিশুমারিতে সহকর্মীদের সাথে জেনিফার আজমেরী ও জোহরা মিলা। ছবি: সৌজন্যে

জরিপের কাজে যেহেতু স্থানীয়দের কাছে যেতে হয়, তাই অনেকসময়ই বেশ অসুবিধায় পড়তে হয়েছে বলে জানালেন পাখি পর্যবেক্ষক মিলা। 

"আর চিন্তা? সত্যি বলতে প্রথমদিকে পরিবারের সদস্যরা অনেক চিন্তা করত, হয়ত শিক্ষক-বন্ধুদের ফোন নম্বর দিয়ে যেতে হতো। তবে এখন আর চিন্তুা করতে হয় না, বরং তারা গ্রুপের অন্য সদস্যদের ওপর ভরসাও করেন।" 

সুন্দরবনে বাঘ জরিপে ফাতেমা তুজ জোহরা। ছবি: সৌজন্যে

তার মতে, জরিপ বা কাজের উপযোগী পোশাকের কারণে অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে, তবে এসব বিষয় আঁকড়ে ধরে রাখার কিছু নেই, বরং পুরো বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখলেই সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়। একই কথা জেনিফারের কণ্ঠেও। তারমতে, এখন পরিবার বা কাজ করেন এমন এলাকার স্থানীয়দের কাছ থেকে তেমন কোনো বাধার মুখে পড়তে হয় না। বরং পরিবার বা স্থানীয়রা যথেষ্ট আন্তরিকভাবেই তাদের কাজে সহায়তা করে বলেও জানালেন জেনিফার।

দিনশেষে ফাতেমা তুজ জোহরার মতো মিলা বা জেনিফার সবাই মনে করেন, "নিজের কাজের প্রতি আন্তরিক থাকা যায়, চেষ্টা থাকে – তাহলে এ পেশায়ও এগিয়ে যাওয়া কঠিন নয়। বাধা থাকলেও চাই সাহস আর প্যাশন। তবে পেশাদারিত্ব থাকাটাও খুব জরুরি।"

Related Topics

টপ নিউজ

বন্য প্রাণী সংরক্ষণ / প্রাণিশুমারি / পাখি শুমারি / বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব / অদম্য নারী

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে কর্মচারীদের বিক্ষোভ
  • আগস্টের মধ্যে ই-স্কুটার ও ই-বাইক বাজারে আনছে রাষ্ট্রায়ত্ত অ্যাটলাস বাংলাদেশ
  • বনানীতে ট্রাকচাপায় ২ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
  • অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার পর অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি প্রত্যাহার এনবিআর কর্মকর্তাদের
  • দেশের প্রথম ভ্যাকসিন প্ল্যান্ট গোপালগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জে স্থানান্তরের পরিকল্পনা সরকারের

Related News

  • কোরিয়ান ইপিজেডে হাতিদের সুরক্ষায় বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের
  • হাকালুকি হাওরে পরিযায়ী পাখি কমেছে অর্ধেক
  • সাতছড়ি উদ্যানের পাখিদের জন্য করোনা এক আশীর্বাদ
  • ১,৪০০ কি.মি. পাড়ি দিয়ে লকডাউনে আটকে পড়া ছেলেকে উদ্ধার করলেন মা

Most Read

1
বাংলাদেশ

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে কর্মচারীদের বিক্ষোভ

2
বাংলাদেশ

আগস্টের মধ্যে ই-স্কুটার ও ই-বাইক বাজারে আনছে রাষ্ট্রায়ত্ত অ্যাটলাস বাংলাদেশ

3
বাংলাদেশ

বনানীতে ট্রাকচাপায় ২ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

4
অর্থনীতি

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার পর অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি প্রত্যাহার এনবিআর কর্মকর্তাদের

5
বাংলাদেশ

দেশের প্রথম ভ্যাকসিন প্ল্যান্ট গোপালগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জে স্থানান্তরের পরিকল্পনা সরকারের

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net