বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তহবিল বন্ধের হুমকি দিলেন ট্রাম্প

পুরো বিশ্বের মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ মারা গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। গতকাল মঙ্গলবার এই সংখ্যা ছিল এক হাজার ৭৩৬ জন।
এই অবস্থায় দেশটিতে ট্রাম্পের প্রতি সময় থাকতে প্রস্তুতি না নেওয়ার অভিযোগ উঠছে। পূর্ব প্রস্তুতির তোয়াক্কা না করে তিনি মার্কিন জনতার জীবন বিপন্ন করার জন্য দায়ি, এমন সমালোচনা চলছে।
এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯ ভাইরাসকে পুরো বিশ্বের জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হিসাবে উল্লেখ করে।
এর একমাস পড়েই অবশ্য এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার হুমকি যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে বলে জানান। একইসঙ্গে জাদুর মতোই এই ভাইরাস উধাও হয়ে যাবে বলেও দাবি করেন তিনি।
অবশ্য এরপর পরিস্থিতির চাপে পড়েই গত ১৩ মার্চ তিনি দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণায় বাধ্য হন।
ট্রাম্পের আলোচিত দাবি সত্য হয়নি। এরপরও নিজের দোষ ঢাকার চেষ্টায় বরাবরের মতো কোনো কমতি রাখছেন না তিনি।
গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজের সংবাদ সম্মেলনে তিনি জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে 'চীনের স্বার্থ রক্ষাকারী' একটি 'ভুল পূর্বাভাস' দেওয়া সংস্থা বলে এর তীব্র সমালোচনা করেন। খবর দ্য গার্ডিয়ানের
এসময় মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় (ডব্লিউএইচও) যুক্তরাষ্ট্র সরকার চাঁদা দেওয়া বন্ধ করবে বলেও জানান। অবশ্য এরপরেই এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি সঙ্গে সঙ্গে নিজের বক্তব্যের সুর পরিবর্তন করেন।
ট্রাম্প বলেন, 'ডব্লিউএইচও অনেক কিছু নিয়ে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। সংস্থাটির কাছে অনেক তথ্য ছিল, যা তারা কাউকে দিতে চায়নি। এই সংস্থা চীনের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেছে' এই কথার মধ্য দিয়ে ট্রাম্প শুরুতে চীনের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ডব্লিউএইচও যে আশ্বাস দিয়েছিল সেদিকে ইঙ্গিত করেন।
এই অভিযোগ করেই নিজের মাথা উত্তেজিত ভঙ্গিতে দুপাশে দুলিয়ে ট্রাম্প বলেন, তারা এটি ভুল বলেছে, একদম ভুল বলেছে। সময় মতো আমাদের সতর্ক করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। চাইলে তারা দুই মাস আগেই সতর্ক করতে পারতো।
ট্রাম্প আরও বলেন, তারা অবশ্যই (যুক্তরাষ্ট্রে) ভাইরাস ছড়াবে এমনটা জানতো কিন্তু তা গোপন করেছে, আমরা এটার অনুসন্ধান করব। এই অনুসন্ধান চলাকালে সংস্থাটিকে মার্কিন সরকার আর কোনও অর্থ সহায়তা দেবে না।
ট্রাম্পের বক্তব্যের চলাকালেই একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বিশ্ব মহামারি চলমান থাকা অবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তহবিল বন্ধ করা উচিত কাজ হবে কিনা?
এর জবাবে সঙ্গে সঙ্গেই নিজের অবস্থান পাল্টে ট্রাম্প বলেন, হয়তো সেটা ঠিক হবে না। আসলে আমি বলছিনা আমরা এটা করব, আমি বলতে চেয়েছি আমরা বিষয়টি নিয়ে ভাবছি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন জানায়, গত জানুয়ারি মাসেই ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো তাকে করোনাভাইরাসের ক্রমবর্ধমান হুমকির বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন।
ওই উপদেষ্টা ট্রাম্পকে সতর্ক করে বলেছেন, ভাইরাসে লাখ লাখ মার্কিন জনতার জীবন বিপন্ন হবে এবং ক্ষতির পরিমাণ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইস অপর প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টকে জানান, ট্রাম্পের ভুল পদক্ষেপের কারণেই এখন হাজারে হাজারে মার্কিন জনতা প্রাণ হারাচ্ছেন।
এসব আলোচনা ট্রাম্পের উপর রাজনৈতিক চাপ ও সমালোচনার মাত্রা বাড়াচ্ছে। আগামী নভেম্বরের প্রসিডেন্ট নির্বাচনে যা তার জন্য বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে।