আরও ২০ দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা; সিরিয়া, ফিলিস্তিনসহ তালিকায় যারা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিনসহ আরও সাত দেশের নাগরিকদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে পূর্ণ এবং আরও ১৫ দেশের ওপর আংশিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এতে পূর্ণ ও আংশিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা দেশের সংখ্যা ১৯ থেকে বেড়ে ৩৯ হয়েছে। হোয়াইট হাউসের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে।
তালিকায় পূর্ণ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা পাওয়া নতুন পাঁচটি দেশ হলো—বুরকিনা ফাসো, মালি, নাইজার, দক্ষিণ সুদান ও সিরিয়া। পাশাপাশি লাওস ও সিয়েরা লিওনকেও এবার যুক্ত করা হয়েছে যাদের ওপর আগে আংশিক নিষেধাজ্ঞা ছিল।
ফিলিস্তিনের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে এখনো স্বীকৃতি দেয়নি ওয়াশিংটন। তাই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় সরাসরি 'ফিলিস্তিন রাষ্ট্র' বলা হয়নি। এমনকি 'অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড' বলতে নারাজ ট্রাম্প প্রশাসন। নথিতে ফিলিস্তিনিদের 'পিএ বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত ভ্রমণ নথি নিয়ে ভ্রমণের চেষ্টাকারী ব্যক্তি' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ছাড়া আংশিক নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নতুন করে ১৫টি দেশ যুক্ত হয়েছে। এগুলো হলো—অ্যাঙ্গোলা, অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, বেনিন, আইভরি কোস্ট , ডমিনিকা, গ্যাবন, গাম্বিয়া, মালাউই, মৌরিতানিয়া, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, তানজানিয়া, টঙ্গা, জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে।
এর আগে সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম ট্রাম্প প্রশাসনকে এই তালিকা ৩০ থেকে ৩২টি দেশে উন্নীত করার সুপারিশ করেছিলেন।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তালিকাভুক্ত দেশগুলোতে 'যাচাই-বাছাই, তল্লাশি এবং তথ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে মারাত্মক ঘাটতি' রয়েছে। এ কারণেই এই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবারের এই ঘোষণায় তুর্কমেনিস্তানের নাগরিকদের জন্য নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলেও, তুর্কমেন নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে স্থগিতাদেশ বহাল রাখা হয়েছে।
তবে বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা, বিদ্যমান ভিসাধারী, নির্দিষ্ট কিছু ভিসা ক্যাটাগরি এবং যাদের প্রবেশ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞায় ছাড় দেওয়া হয়েছে।
ওয়াশিংটন ডিসিতে সম্প্রতি গুলিবর্ষণের ঘটনার জেরে অভিবাসনবিরোধী অভিযান জোরদার করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ওই হামলায় ন্যাশনাল গার্ডের এক সদস্য নিহত ও আরেকজন গুরুতর আহত হন। হামলার সন্দেহভাজন রহমানুল্লাহ লাকানওয়াল একজন আফগান নাগরিক, যিনি আগে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে কাজ করেছিলেন। তিনি বাইডেন প্রশাসনের সময় ওয়াশিংটনে পুনর্বাসিত হন এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সময় অভিবাসী আশ্রয় [অ্যাসাইলাম] পান।
এই ঘটনার পর থেকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশিদের প্রবেশের বৈধ ও অবৈধ সব পথ বন্ধ বা কঠোর করেছেন। পাশাপাশি তার চলমান গণহারে ফেরত পাঠানো কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে। অন্যান্য নীতি পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে আশ্রয় বা অ্যাসাইলাম সিদ্ধান্তের ওপর স্থগিতাদেশ, বাইডেন প্রশাসনের সময়কার মামলাগুলোর পর্যালোচনা এবং নির্দিষ্ট গ্রিন কার্ডধারীদের 'পুনঃপরীক্ষা'।
নিজের প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প সাতটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন, যা নিয়ে আদালতে চ্যালেঞ্জও হয়েছিল। ২০১৭ সালে ট্রাম্পের জারি করা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তৃতীয় সংস্করণটি সুপ্রিম কোর্ট বহাল রেখেছিল। এতে ইরান, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন, সোমালিয়া ও ভেনিজুয়েলার নাগরিকদের প্রবেশে বিভিন্ন মাত্রায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল। তবে ২০২১ সালে জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পর সেই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করেন।
ট্রাম্পের মঙ্গলবারের ঘোষণার পর পূর্ণ বা আংশিক নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ৩৯টি দেশ হলো—আফগানিস্তান, মিয়ানমার (বার্মা), শাদ, রিপাবলিক অব কঙ্গো, ইকুয়েটরিয়াল গিনি, এরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, ইয়েমেন, বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান, ভেনিজুয়েলা, বুরকিনা ফাসো, মালি, নাইজার, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, বেনিন, আইভরি কোস্ট, ডমিনিকা, গ্যাবন, গাম্বিয়া, মালাউই, মৌরিতানিয়া, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, তানজানিয়া, টঙ্গা, জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে।
