যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণকারীদের জন্য ২৫০ ডলারের নতুন ‘ভিসা ইন্টেগ্রিটি ফি’ চালু, নেই মওকুফের সুযোগ

যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে গেলে এখন থেকে নতুন একটি ফি দিতে হবে—এর নাম 'ভিসা ইন্টেগ্রিটি ফি'। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সদ্য পাশ হওয়া 'ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট' অনুযায়ী এই ফি চালু হয়েছে।
এই ফি দিতে হবে সকল নন-ইমিগ্রান্ট ভিসাধারীদের অর্থাৎ যারা স্থায়ীভাবে নয় বরং সাময়িকভাবে (যেমন ঘুরতে, পড়তে বা কাজ করতে) যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন।
এই ফি মওকুফের কোনো সুযোগ নেই। তবে নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করলে এই অর্থ ফেরতও পাওয়া যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (১ অক্টোবর ২০২৪ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত) এই ফি হবে অন্তত ২৫০ ডলার। তবে সেক্রেটারি অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি চাইলে এই ফি আরও বাড়াতে পারবেন। ভবিষ্যতে এটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মিলিয়ে বাড়ানো হবে।
সব নন-ইমিগ্রান্ট ভিসাধারীদের এই 'ভিসা ইন্টেগ্রিটি ফি' দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছেন: পর্যটক, ব্যবসায়িক ভ্রমণকারী ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী।
এই ফি দিতে হবে ভিসা ইস্যু হওয়ার সময়। অর্থাৎ যাদের ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান হবে, তাদের এই ফি দিতে হবে না। এটির ফি অ্যাডিশনাল (অতিরিক্ত)। তাই আগের যেসব ভিসা ফি ছিল, তার সঙ্গে এই ফিও যুক্ত হবে।
হিউস্টনভিত্তিক ইমিগ্রেশন আইন ফার্ম রেডি নিউম্যান ব্রাউন পিসির অংশীদার স্টিভেন এ. ব্রাউন তাঁর প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক লেখায় বলেন, 'উদাহরণস্বরূপ, এইচ-ওয়ানবি কাজের ভিসার জন্য আগে ২০৫ ডলার দিতে হতো। এখন এই ফি চালু হলে মোট দিতে হতে পারে ৪৫৫ ডলার। '
এছাড়াও, 'আই-৯৪ ফর্ম ফি' ৬ ডলার থেকে বাড়িয়ে ২৪ ডলার করা হয়েছে। যারা যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার ও বের হওয়ার তথ্য রেকর্ডের জন্য এই ফর্ম দেন, তাদেরও এই অতিরিক্ত ফি দিতে হবে।
এদিকে, ফি ফেরত পেতে হলে ভিসার সব কন্ডিশন মেনে চলতে হবে। যেমন: অবৈধভাবে কোনো কাজ করা যাবে না, আর ভিসার মেয়াদ শেষে ৫ দিনের বেশি যুক্তরাষ্ট্রে থাকা যাবে না।
ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এই ফি ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে আইনে উল্লেখ আছে।
স্টিভেন এ. ব্রাউন জানান, এই ফি এখনো কার্যকর হয়নি। এটি কবে থেকে চালু হবে, তাও স্পষ্ট নয়।
তিনি বলেন, 'আমি মনে করি, এটি কার্যকর করতে হলে নিয়ম প্রণয়ন বা অন্তত ফেডারেল রেজিস্টার-এ (যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সরকারি গেজেট) একটি নোটিশ দিতে হবে।'
এই ফি কীভাবে আদায় করা হবে, তা-ও এখনো পরিষ্কার নয় বলে ইউএস ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন সিএনবিসিকে জানিয়েছে।
সংস্থাটির এক মুখপাত্র বলেন, 'আইন অনুযায়ী এই ফি আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সচিবকে। কিন্তু ভিসা আবেদন, ইস্যু বা নবায়নের দায়িত্ব তো তাদের না। তাহলে ফি কোথায় ও কখন আদায় করা হবে?'
সিএনবিসির প্রশ্নের জবাবে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস)-এর একজন মুখপাত্র বলেন, 'এই ফি কার্যকর করতে হলে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয় দরকার।'
ফি ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া কবে থেকে এবং কীভাবে শুরু হবে, সেটাও এখনো স্পষ্ট নয়।
কারণ, অনেক ভিসার মেয়াদ কয়েক বছরের হয়। এ কারণে ইউএস কংগ্রেশনাল বাজেট অফিস (সিবিও) ধারণা করছে, খুব কম মানুষই এই ফি ফেরত চাইবে।
তারা আরও বলেছে, ভিসা ফি ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া চালু করতে ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট-এর কয়েক বছর সময় লাগবে। তাই ২০২৫ থেকে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত এই বিধান কার্যকর হলে সরকারের আয় বাড়বে এবং বাজেট ঘাটতি কমবে ২৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার।
আইনজীবী স্টিভেন এ. ব্রাউন জানিয়েছেন, তিনি তার ক্লায়েন্টদের এই ফি 'অফেরতযোগ্য' হিসেবে ধরে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, 'যদি ফেরত পান, তাহলে ভালো। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে টাকা ফেরত পাওয়া সাধারণত কঠিন। তাই আমি বলব, ফেরত পেলে সেটাকে বোনাস হিসেবে ধরুন।'
অবৈধ ভিসা নিয়ন্ত্রণ করতে নতুন 'ভিসা ইন্টেগ্রিটি ফি'
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরাতেই 'ভিসা ইন্টেগ্রিটি ফি' চালু করা হয়েছে বলে সিএনবিসিকে জানিয়েছে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস)। তারা জানায়, 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট' যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় নীতি ও সম্পদ সরবরাহ করে।'
তথ্য অনুযায়ী, বেশিরভাগ ভিসাধারীই ভিসার শর্ত মেনে চলেন। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত অর্থবছরে মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ নন-ইমিগ্রান্ট (অস্থায়ী) ভিসাধারী যুক্তরাষ্ট্রে নির্ধারিত সময়ের বেশি ছিলেন।
তবে অনুমান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রায় ১ কোটি অবৈধ অভিবাসীর মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশই বৈধভাবে প্রবেশ করলেও ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দেশে ফেরেননি।
ভ্রমণকারীদের ওপর প্রভাব
আইনজীবী স্টিভেন এ. ব্রাউন মনে করেন, নতুন এই ফি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে বি ভিসাধারীদের ওপর—যারা ঘুরতে বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে যান—এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর।
তিনি বলেন, 'বি ভিসার যাত্রীরা তাদের ভ্রমণ খরচের সঙ্গে যদি প্রতি ব্যক্তির জন্য অতিরিক্ত ২৫০ ডলার যোগ করতে না চান, তাহলে এতে তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।'
এই নতুন ফি এবং আই-৯৪ ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এমন সময়ে এসেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ২০২৬ সালে বেশ কয়েকটি বড় আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজন করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে 'আমেরিকা ২৫০'—যুক্তরাষ্ট্রের ২৫০তম স্বাধীনতা বার্ষিকীর উদযাপন, এবং ফিফা বিশ্বকাপের কিছু অংশ।