নিরাপত্তা উদ্বেগে ১২ দেশের নাগরিকের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে ১২টি দেশের নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার (৪ জুন) তিনি এ সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশে সই করেন।
ট্রাম্প বলেছেন, 'বিদেশি সন্ত্রাসী ও অন্যান্য নিরাপত্তা হুমকি থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।'
নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা দেশগুলো হলো—আফগানিস্তান, মিয়ানমার, চাদ, কঙ্গো, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন।
এছাড়া, আরও সাতটি দেশের ওপর আংশিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন ট্রাম্প। দেশগুলো হলো—বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান ও ভেনেজুয়েলা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'যারা আমাদের ক্ষতি করতে চায়, তাদের আমাদের দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।' তিনি জানান, এই তালিকায় পরিবর্তন আনা হতে পারে এবং ভবিষ্যতে আরও দেশ যুক্ত হতে পারে।
ঘোষণাপত্র অনুযায়ী, এই নিষেধাজ্ঞা আগামী ৯ জুন থেকে কার্যকর হবে। ঘোষণায় আরও বলা হয়েছে, ওই তারিখের আগে ইস্যু করা ভিসাগুলোর বৈধতা থাকবে; সেগুলো বাতিল করা হবে না।
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে সাতটি মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। বিভিন্ন সংস্করণ প্রণয়নের পর ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট তা অনুমোদন করে।
পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন ২০২১ সালে ক্ষমতায় এসে নিষেধাজ্ঞাটি বাতিল করেন। তিনি একে 'আমাদের জাতীয় বিবেকের জন্য একটি কলঙ্ক' বলে মন্তব্য করেন।
ট্রাম্প বলেন, যেসব দেশের ওপর সবচেয়ে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল, সেগুলোতে 'সন্ত্রাসীদের ব্যাপক উপস্থিতি' রয়েছে। তারা ভিসা নিরাপত্তা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করে না, আগত ভ্রমণকারীদের পরিচয় যাচাইয়ের সক্ষমতা নেই, অপরাধীদের ইতিহাস সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা নেই এবং এসব দেশের নাগরিকদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ভিসার মেয়াদ শেষে দেশে না ফেরার হারও অনেক বেশি।
ট্রাম্প বলেন, 'যে দেশগুলো থেকে আসা ব্যক্তিদের নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্যভাবে যাচাই-বাছাই করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়, সেসব দেশ থেকে উন্মুক্ত অভিবাসন আমরা মেনে নিতে পারি না।'
তিনি রোববার যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর বোল্ডারে সংঘটিত একটি ঘটনার উদাহরণ টেনে বলেন, নতুন এই বিধিনিষেধ কেন জরুরি, তা সে ঘটনাই প্রমাণ করে। ওই দিন এক ব্যক্তি প্রো-ইসরায়েল সমর্থকদের জমায়েতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করেছিলেন।
এই হামলার ঘটনায় মিশরের নাগরিক মোহামেদ সাবরি সোলাইমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোলাইমান পর্যটন ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন এবং তার কর্মসংস্থানের অনুমতিপত্রও ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ। যদিও মিশরের নাম ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত দেশগুলোর তালিকায় নেই।
যুক্তরাষ্ট্রে থাকা 'বড় ঝুঁকি'
যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের প্রেক্ষিতে তা মোকাবিলায় একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে সোমালিয়া।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সোমালি রাষ্ট্রদূত দাহির হাসান আবদি এক বিবৃতিতে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সোমালিয়ার দীর্ঘদিনের সম্পর্ককে আমরা গুরুত্ব দিই এবং যেসব উদ্বেগ তোলা হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনায় বসতে আমরা প্রস্তুত।'
বুধবার সন্ধ্যায় ভেনেজুয়েলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিয়োসদাদো কাবেয়ো যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে 'ফ্যাসিস্ট' বলে আখ্যায়িত করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান নিয়ে ভেনেজুয়েলাবাসীদের সতর্ক করেন।
তিনি বলেন, 'সত্যি কথা বলতে, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা যেকোনো মানুষের জন্যই বড় ঝুঁকি—শুধু ভেনেজুয়েলাবাসীদের জন্য নয়… তারা আমাদের দেশের মানুষদের কোনো কারণ ছাড়াই হয়রানি করে।'
মিয়ানমারের সামরিক সরকারের মুখপাত্রকে বৃহস্পতিবার সকালে ফোন করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। লাওসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর পর থেকেই অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ অভিযানের অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে এক ভাষণে তিনি গাজা উপত্যকা, লিবিয়া, সোমালিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ যেসব স্থান যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি—সেখান থেকে মানুষ আসা সীমিত করার প্রতিশ্রুতি দেন।
চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আগ্রহী বিদেশিদের ওপর কঠোর নিরাপত্তা যাচাইয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়, যাতে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির আশঙ্কা চিহ্নিত করা যায়। সেই আদেশে কয়েকজন মন্ত্রীর প্রতি নির্দেশনা ছিল, তারা যেন এমন দেশগুলোর তালিকা দেন, যাদের ভিসা যাচাই ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা এত দুর্বল যে সেখান থেকে আগমন আংশিক বা পুরোপুরি স্থগিত করা উচিত।
চলতি বছরের মার্চে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ট্রাম্প প্রশাসন কয়েক ডজন দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তা করছে।