বেনিনে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা, নস্যাৎ করার দাবি প্রেসিডেন্টের
বেনিনের প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিস ট্যালন বলেছেন, সরকার ও সশস্ত্র বাহিনী পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটিতে একটি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা নস্যাৎ করেছে এবং এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দেওয়া হবে।
রোববার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক ঘোষণায় ট্যালন এ কথা বলেন। এর প্রায় ১২ ঘণ্টা আগে দেশের বৃহত্তম শহর কোটোনুতে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায় এবং কয়েকজন সেনা সদস্য রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে গিয়ে দাবি করে যে তারা ট্যালনকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করেছে।
ট্যালন বলেন, সরকারের প্রতি অনুগত বাহিনীর দ্রুত সমবেত হওয়া 'আমাদেরকে এসব দুঃসাহসীদের দমন করতে সাহায্য করেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এই বিশ্বাসঘাতকরা শাস্তি পাবে।'
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেনিনের প্রতিবেশী নাইজার ও বুরকিনা ফাসোসহ মালি, গিনি এবং গত মাসে গিনি-বিসাউতে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করায়, অঞ্চলে গণতান্ত্রিক শাসনের প্রতি যে হুমকি তৈরি হয়েছে—এ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা তার সর্বশেষ উদাহরণ।
রোববার সন্ধ্যায় প্রায় ডজনখানেক সেনা সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে সামরিক ও নিরাপত্তা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএফপি।
এক সূত্র এএফপিকে জানায়, মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য এক সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার হওয়াদের সবাই সক্রিয় দায়িত্বে থাকা সেনা। তবে একজন সাবেক সামরিক সদস্যও রয়েছেন।
এই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাটি এমন সময়ে ঘটল, যখন বেনিন আসন্ন এপ্রিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ওই নির্বাচনেই ২০১৬ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট ট্যালনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।
টেলিভিশনে দেওয়া বিবৃতিতে অভ্যুত্থানকারীরা বলেন, বেনিনের উত্তরাঞ্চলের অবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং 'আমাদের শহিদ সহযোদ্ধাদের প্রতি অবহেলা ও উদাসীনতা' তাদেরকে এ পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে।
ট্যালন দেশের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করার কৃতিত্ব পেয়েছেন। তবে বেনিনে সাম্প্রতিক সময়ে হামলা বেড়েছে, বিশেষ করে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর—যারা মালি ও বুরকিনা ফাসোতেও হামলা চালিয়ে আসছে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে উপস্থিত হওয়া সেনারা নিজেদেরকে 'মিলিটারি কমিটি ফর রিফাউন্ডেশন' (সিএমআর) নামে একটি গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে পরিচয় দেন।
টেলিভিশনে এক সেনা সদস্য এক বিবৃতিতে বলেন, 'সেনাবাহিনী বেনিনের জনগণকে একটি সত্যিকারের নতুন যুগের আশা দেওয়ার জন্য দৃঢ় অঙ্গীকার করছে, যেখানে ভ্রাতৃত্ব, ন্যায়বিচার এবং কাজই প্রধান হবে।'
পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর আঞ্চলিক জোট ইকোওয়াস (ইসিওডব্লিউএএস) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা বেনিনে এই সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার কঠোর নিন্দা করছে এবং দেশে শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় সরকারকে সহায়তা করবে।
আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ)–ও অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার নিন্দা জানায়। সংস্থার চেয়ারম্যান মাহমুদ আলী ইউসুফ বলেন, এইউ এই ঘটনাকে 'কঠোর এবং স্পষ্টভাবে নিন্দা' জানাচ্ছে।
তার বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আফ্রিকান ইউনিয়ন ট্যালনের প্রতি তাদের সমর্থনও পুনর্ব্যক্ত করছে।
'আফ্রিকান ইউনিয়ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয় করে বেনিনের সরকার ও জনগণকে সংবিধানসম্মত স্বাভাবিকতা সম্পূর্ণভাবে পুনঃস্থাপন এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী করার পথে সহায়তা করতে প্রস্তুত।'
ইকোওয়াসের সাবেক যোগাযোগ পরিচালক আদামা গায়ে আল জাজিরাকে বলেন, এই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা 'কাউকে অবাক করার মতো নয়'।
তিনি বলেন, দেশে দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে এবং বিরোধী দলের অনেক নেতাকর্মীকে কারাগারে রাখা হয়েছে।
গায়ে আরও বলেন, ট্যালন বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের—যার মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট বনি ইয়ায়িও আছেন—প্রায় সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়া আগামী নির্বাচনের পর ক্ষমতা গ্রহণের জন্য ট্যালন তার অর্থমন্ত্রীকে মনোনীত করে রেখেছিলেন।
গত কয়েক বছরে আফ্রিকাতে, বিশেষ করে পশ্চিম আফ্রিকায়, অনেক অভ্যুত্থান ঘটেছে। আল জাজিরার আহমেদ ইদ্রিস বলেন, বেনিনে সাম্প্রতিক এই ঘটনা অঞ্চলের 'অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ও সামরিক ক্ষমতায় দখলের খ্যাতি' ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার করছে।
গত মাসেই গিনি-বিসাউতে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে একটি সামরিক অভ্যুত্থান চালায়, যেখানে জেনারেল হোর্তা ইন্টা-এ এক বছরের অস্থায়ী সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৭৪ সালে পর্তুগাল থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে দেশটি নয়টি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার মুখোমুখি হয়েছে।
২০২৩ সালে সেনা নেতা ব্রাইস ওলিগুই এনগুয়েমা গাবনের তখনকার প্রেসিডেন্ট আলি বংগো ওন্ডিম্বাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন, যার পরিবার প্রায় ৫৬ বছর ধরে দেশে ক্ষমতায় ছিল।
সেই একই বছর, নাইজারে একটি অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন মোহামেদ বাজুম, যিনি কেবল দুই বছর ধরে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা হিসেবে শাসন করছিলেন। এরপর সেনা সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন প্রেসিডেন্ট আবদুরাহমানে চিয়ানি।
২০২২ সালে বুরকিনা ফাসোর সেনা নেতা প্রেসিডেন্ট পল-হেনরি ডামিবা দেশের সেই বছরের দ্বিতীয় অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন, এবং সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ত্রাওরে নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।
