ভারতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা সেজে ৮ লাখ ডলার লুট
ভারতের কর্ণাটকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা সেজে এক অভিনব ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সশস্ত্র ডাকাতরা একটি টাকা বহনকারী গাড়ি থামিয়ে ৭০ মিলিয়ন বা ৭ কোটি রুপি (প্রায় ৮ লাখ ডলার) লুট করে নিয়ে গেছে।
বেঙ্গালুরু শহরের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে দিনের আলোতে এই দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতদের ধরতে পুলিশ বিশাল অভিযান শুরু করেছে।
ঘটনার বিবরণ
বেঙ্গালুরু পুলিশ কমিশনার সীমান্ট কুমার সিং বিবিসিকে জানান, ঘটনাটি ঘটে গত বুধবার বিকেলে। শহরের একটি ব্যস্ত রাস্তায় একটি এসইউভি গাড়িতে আসা ছয়জন লোক টাকা বহনকারী ভ্যানটির গতিরোধ করে। ভ্যানটি এক ব্যাংকের শাখা থেকে অন্য শাখায় টাকা নিয়ে যাচ্ছিল।
ভ্যানটিতে একজন চালক, একজন টাকার রক্ষক (ক্যাশ কাস্টোডিয়ান) এবং দুজন সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন।
পুলিশ কমিশনার জানান, ডাকাতরা নিজেদের রিজার্ভ ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেয়। তারা ভ্যানের লোকদের বলে, এত বিপুল পরিমাণ টাকা পরিবহনের জন্য তাদের কাছে সঠিক কাগজপত্র আছে কি না, তা যাচাই করতে হবে।
পুলিশ জানায়, ডাকাত দল কৌশলে টাকার রক্ষক ও নিরাপত্তারক্ষীদের অস্ত্র ভ্যানে রেখে তাদের এসইউভি গাড়িতে উঠতে বাধ্য করে। আর চালককে নির্দেশ দেয় টাকাভর্তি ভ্যানটি চালিয়ে সামনে যেতে।
ডাকাতদের এসইউভি গাড়িটি কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত টাকার ভ্যানটিকে অনুসরণ করে। এরপর তারা চালককে ভ্যান থেকে জোর করে নামিয়ে দেয়। একই সঙ্গে এসইউভিতে থাকা টাকার রক্ষক ও নিরাপত্তারক্ষীদেরও নামিয়ে দেওয়া হয়। এরপর অস্ত্রের মুখে ভ্যান থেকে টাকাগুলো নিজেদের গাড়িতে তুলে নিয়ে ডাকাতরা চম্পট দেয়।
তদন্তে যা জানা গেল
যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা খুব একটা ছিল না। পুলিশ খতিয়ে দেখছে, ডাকাতরা এই অপারেশনে একাধিক গাড়ি ব্যবহার করেছে কি না। টাকা পরিবহনকারী সংস্থাটি এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত এসইউভি গাড়িটিতে ভুয়া নম্বর প্লেট এবং 'গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া' লেখা স্টিকার লাগানো ছিল। তিনি আরও জানান, কোম্পানিটির কোনো কর্মী এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কি না, পুলিশ তাও তদন্ত করে দেখছে।
সরকারের বক্তব্য
কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পুলিশ ইতিমধ্যে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত এসইউভি গাড়িটি উদ্ধার করেছে।
তবে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বর বলেছেন, সন্দেহভাজনরা কোন গাড়ি দিয়ে শেষ পর্যন্ত পালিয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে তারা গাড়ি পরিবর্তন করে টাকা নিয়ে পালিয়েছে।'
তিনি আশা প্রকাশ করেন, পুলিশ শিগগিরই এই রহস্য উদঘাটন করবে। যেমনটা তারা কর্ণাটকের সাম্প্রতিক অন্যান্য বড় ব্যাংক ডাকাতির ক্ষেত্রে করেছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত মে মাসে বিজয়পুরা জেলার একটি ব্যাংক থেকে ডুপ্লিকেট চাবি ব্যবহার করে ৫৯ কেজি সোনা চুরি হয়েছিল, যার মূল্য প্রায় ৫৩ কোটি রুপি। পুলিশ পরবর্তীতে ৩৯ কেজি সোনা ও কিছু নগদ টাকা উদ্ধার করে এবং ওই ঘটনায় দুই প্রাক্তন ব্যাংক কর্মীসহ ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করে।
