কলকাতায় বাড়ছে বাংলাদেশি রোগী, তবে হাসিনার মৃত্যুদণ্ডে উদ্বিগ্ন হাসপাতালগুলো
গত বছর জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর চিকিৎসা নিতে ভারতের কলকাতায় বাংলাদেশি রোগীদের সংখ্যা প্রায় শূন্যে নেমে এসেছিল। তবে সেই পরিস্থিতি থেকে এখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে কলকাতার চিকিৎসা খাত। গত অক্টোবর মাস থেকে ভারতে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশি রোগীদের আনাগোনা আবারও বেড়েছে।
তবে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়ার পর থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কলকাতার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষরা।
কলকাতার হাসপাতালগুলোর আয়ের একটি বড় অংশ আসে বাংলাদেশি রোগীদের কাছ থেকে। তাই তাদের বর্তমান ইতিবাচক পরিস্থিতি কতটুক ধরে রাখা সম্ভব হবে, তা নিয়ে তারা শঙ্কিত।
বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত মাস থেকে বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগের সময়ের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে বা তার কিছুটা বেশি।
হাসপাতাল কর্মকর্তারা বলছেন, মেডিকেল ভিসা দ্রুত ইস্যু হওয়ার কারণে গত এক বছরের মধ্যে এটিই সবচেয়ে দ্রুতগতির বৃদ্ধি।
আর এন ঠাকুর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সেস-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২ হাজার ২০০ বহির্বিভাগের এবং ২০০ জন অভ্যন্তরীণ রোগী আসত।
গত অক্টোবর মাসে সেই সংখ্যা অর্ধেকে নেমে যায় এবং চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত তা বজায় ছিল। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, 'রোগীর সংখ্যা আবারও বাড়তে শুরু করেছে এবং গত সেপ্টেম্বরের রেকর্ডও ছুঁয়েছে।'
নারায়ণ হাসপাতালের চিফ অপারেটিং অফিসার আর ভেনকাতেশ জানান, 'গত দুই মাসে রোগীর আগমন ৩০ শতাংশ বেড়েছে। এই বৃদ্ধি ইতিবাচক হলেও, সংখ্যার দিক থেকে এটি এখনও ২০২৪ সালের শুরুর দিকের তুলনায় ৫০ শতাংশ কম।'
রুবি জেনারেল হাসপাতালে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের মধ্যে বাংলাদেশি রোগীর আগমন ২০-২৫ শতাংশ বেড়েছে।
হাসপাতালটির জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশনস) শুভাশীষ দত্ত বলেন, 'বর্তমানে আমাদের এখানে ২০২৪ সালের আগস্টের তুলনায় অর্ধেক রোগী আসছেন। প্রতিদিন বহির্বিভাগে এখন ২০-২৫ জন রোগী দেখাচ্ছেন, গত বছর তা ৪৫-এর মতো ছিল। ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা আগের মতোই বহির্বিভাগের মোট রোগীর প্রায় ২০ শতাংশ।'
ডিসান হাসপাতালেও বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও এমডি সজল দত্ত বলেন, 'বর্তমানে আমরা প্রতি মাসে প্রায় ১ হাজার ৫০০ জন রোগী পাচ্ছি, যা গত বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত আমরা যা পেতাম তার কাছাকাছি।'
তিনি আরও জানান, চিকিৎসার জন্য ভারতে আসতে ইচ্ছুক রোগীদের জন্য হাসপাতাল অনুমোদিত 'ভিসা ইনভাইটেশন লেটার' (ভিআইএল) প্রয়োজন হয়। দিসান হাসপাতাল প্রতি মাসে প্রায় ২ হাজার ২০০ ভিআইএলের জন্য অনুরোধ পাচ্ছে।
পিয়ারলেস হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীদের মাসিক বহির্বিভাগ ভিজিট প্রায় ৩৫-এ পৌঁছেছে। গত বছর আগস্টে এই সংখ্যা ছিল ১২০-এর কাছাকাছি।
পিয়ারলেস হাসপাতালের সিইও সুদীপ্ত মিত্র জানান, 'আমাদের বর্তমানে পাঁচজন বাংলাদেশি ইনপেশেন্ট আছেন। মাত্র এক বছর আগেও এই সংখ্যা শূন্য ছিল। এর আগে, যেকোনো সময়ে প্রায় ৩৫ জন বাংলাদেশি ইনপেশেন্ট থাকত।'
তিনি যোগ করেন, হাসপাতালটির আয়ের প্রায় ১৫ শতাংশ আসে বাংলাদেশ থেকে আসা রোগীদের কাছ থেকে।
ডিসেম্বরে বহির্বিভাগের অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য প্রচুর আবেদন আসায় বেশ কয়েকটি হাসপাতাল আরও রোগীদের আগমন আশা করছে।
তবে, ডিসান হাসপাতালের সজল দত্ত বলেন, 'এই বৃদ্ধির পেছনের কারণ বোঝা কঠিন। গত পনেরো দিনে আমরা যত অ্যাপয়েন্টমেন্টের অনুরোধ পেয়েছি, তার বেশিরভাগই হৃদরোগ ও ক্যান্সারের রোগীদের জন্য, যাদের জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। আগে আমরা সাধারণ সার্জারি এবং পরিকল্পিত পদ্ধতির জন্য সমান সংখ্যক অনুরোধ পেতাম। তাই আমাদের অনুমান, গুরুতর রোগীরা দ্রুত ছাড়পত্র পাচ্ছেন।'
