ইরাক যুদ্ধের অন্যতম পরিকল্পনাকারী সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি মারা গেছেন
২০০৩ সালে ইরাক আগ্রাসনের অন্যতম নায়ক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম ক্ষমতাধর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচিত ডিক চেনি মারা গেছেন। নিউমোনিয়া এবং কার্ডিয়াক ও ভাস্কুলার রোগে ভুগে সোমবার ৮৪ বছর বয়সে তিনি মারা যান। মঙ্গলবার তার পরিবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
রিপাবলিকান এই রাজনীতিক একসময় ওয়াইওমিং অঙ্গরাজ্যের কংগ্রেসম্যান এবং প্রতিরক্ষা সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। জর্জ ডব্লিউ বুশ ২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে টেক্সাসের গভর্নর থাকা অবস্থায় চেনিকে নিজের রানিং মেট হিসেবে বেছে নেন। নির্বাচনে জয়লাভের পর ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ডিক চেনি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়ানোর পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখেন। তিনি মনে করতেন, ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির পর থেকে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা খর্ব হয়ে আসছিল। তিনি ভাইস প্রেসিডেন্টের দপ্তরের ক্ষমতাও প্রসারিত করেন এবং একটি জাতীয় নিরাপত্তা দল গঠন করেন, যা প্রায়শই প্রশাসনের ভেতরে নিজস্ব ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করত।
২০০৩ সালে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের অন্যতম প্রধান সমর্থক ছিলেন চেনি। তিনি দাবি করেছিলেন, ইরাকের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে এবং সেটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় হুমকি। তবে পরবর্তীতে এমন কোনো অস্ত্র পাওয়া যায়নি।
যুদ্ধের আগে চেনি ইরাক ও আল-কায়েদার মধ্যে এবং ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার সঙ্গে সম্ভাব্য যোগসূত্র থাকার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। নাইন-ইলেভেন হামলা তদন্তকারী কমিশন পরে এই তত্ত্বকে ভুল বলে প্রমাণ করে।
চেনি বিশ্বাস করতেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা ইরাকে 'মুক্তিদাতা' হিসেবে স্বাগত পাবে এবং যুদ্ধ 'সপ্তাহের মধ্যে শেষ হবে'। কিন্তু বাস্তবে তা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকে। গণবিধ্বংসী অস্ত্র না পাওয়া সত্ত্বেও পরবর্তী সময়ে চেনি বলেছিলেন, তৎকালীন গোয়েন্দা তথ্য ও সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের কারণেই সেই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।
এর এক দশকেরও বেশি সময় আগে, প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ. ডব্লিউ. বুশের অধীনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী থাকাকালে চেনি প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধে কুয়েত থেকে ইরাকি দখলদার সেনাবাহিনীকে বিতাড়িত করার জন্য মার্কিন সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছিলেন।
রাজনীতিতে ফিরে আসার আগে চেনি ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তেল সেবা প্রতিষ্ঠান হ্যালিবারটনের প্রধান নির্বাহী ছিলেন। সে সময় কোম্পানিটি থেকে তিনি প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ডলারের অবসর প্যাকেজ পান। ইরাক যুদ্ধ চলাকালে হ্যালিবারটন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রধান কন্ট্রাক্টর হিসেবে বিশাল অঙ্কের চুক্তি পায়—যা নিয়ে চেনির বিরোধীরা প্রায়ই সমালোচনা করতেন।
