'ম্যাংগো’র প্রতিষ্ঠাতা ইসাক অ্যান্ডিক কি আসলেই পা পিছলে মারা গিয়েছিলেন, নাকি ছেলের ধাক্কায়?
গত বছর বার্সেলোনায় পরিবারের সঙ্গে হাইকিংয়ে গিয়ে ১৫০ মিটার উঁচু পাহাড় থেকে পা পিছলে পড়ে মারা যান স্পেনের বিখ্যাত পোশাক ব্র্যান্ড 'ম্যাংগো'র প্রতিষ্ঠাতা ইসাক অ্যান্ডিক।
তবে প্রথমে দুর্ঘটনা বলে মনে হলেও, তদন্ত যতই এগোচ্ছে, ততই ইসাকের বড় ছেলে জোনাথন অ্যান্ডিকের দিকে সন্দেহের তীর ঘুরছে। কাতালোনিয়ার সবচেয়ে ধনী এই ব্যক্তির মৃত্যু দুর্ঘটনা নাকি খুন, তা নিয়ে গত ১০ মাস ধরে চলছে নিবিড় তদন্ত।
জানা গেছে, ঘটনার দিন ইসাক তার বড় ছেলে জোনাথনের সঙ্গে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে আর কেউ ছিলেন না। জোনাথনের দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী, ইসাক পা পিছলে গিরিখাদে পড়ে যান। কিন্তু মার্টোরেলে অবস্থিত কাতালোনিয়ার আঞ্চলিক পুলিশ মসোস ডি'এসকুয়াদ্রার একটি ছোট ইউনিট তদন্ত শুরু করার পর থেকেই ঘটনা নতুন মোড় নিয়েছে। কেন্দ্রীয় পুলিশের সহযোগিতায় এই তদন্ত দলই কেবল ঘটনার বিস্তারিত জানে।
প্রাথমিকভাবে আদালতে জানানো হয়েছিল, ইসাকের মৃত্যু সম্ভবত দুর্ঘটনাজনিত। তবে পরে তদন্তকারীরা জোনাথনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার বক্তব্যে অসঙ্গতি ধরা পড়ে। সে সময় এটি মানসিক আঘাতের ফল বলে ধরে নেওয়া হলেও, এখন তদন্তকারীরা বিষয়টিকে খুনের দিক থেকেও দেখছেন।
তদন্তকারীরা ইসাকের গত ছয় বছরের সঙ্গী এস্তেফানিয়া নুথের সঙ্গেও কথা বলেছেন। এস্তেফানিয়া ইসাকের মৃত্যুর সকালের ঘটনা বর্ণনা করেন। জোনাথন জরুরি পরিষেবা ডাকার আগেই প্রথম ফোনটি এস্তেফানিয়াকে করেছিলেন।
ইসাকের দীর্ঘদিনের সঙ্গী এস্তেফানিয়া নুথ জানিয়েছেন, ইসাকের মৃত্যুর দিন সকালে জোনাথন প্রথম ফোনটি তাকে করেন, জরুরি পরিষেবায় নয়। এস্তেফানিয়ার বক্তব্য অনুযায়ী, বাবা-ছেলের সম্পর্ক কয়েক বছর ধরেই তিক্ত ছিল। ২০১৫ সালে কোম্পানির পরিচালনা নিয়ে দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। পরে ম্যাংগো ব্যাপক লোকসানে গেলে ইসাক আবার নিয়ন্ত্রণ নেন।
পরের বছরগুলোতে 'ম্যাংগো' কোটি কোটি ইউরো লোকসান গুনে এবং ইসাককে পুনরায় নিয়ন্ত্রণ নিতে হয়। এস্তেফানিয়ার কাছ থেকে এই তথ্য পাওয়া গেলেও, তিনি সাম্প্রতিক কোনো সমস্যা বা জনাথনের প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছার ইঙ্গিত দেননি।
তদন্তকারীরা আরও জানতে পেরেছেন যে, ইসাকের তিন সন্তান – জোনাথন, জুডিথ এবং সারা এবং এস্তেফানিয়ার মধ্যে উত্তরাধিকার নিয়ে একটি চলমান বিবাদ রয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ইসাক অ্যান্ডিক একটি উইল তৈরি করেছিলেন, যেখানে তার তিন সন্তানকে সম্পদের সমান অংশ দেওয়া হয় এবং এস্তেফানিয়াসহ অন্যরা ছোট একটি অংশ পান।
এস্তেফানিয়া তার অংশকে অপ্রতুল মনে করে সন্তানদের কাছে ৭০ মিলিয়ন ইউরোরও বেশি (প্রায় ৮১.৫ মিলিয়ন ডলার) দাবি করেন। তিনি মনে করেন যে, ম্যাংগো প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে তার সম্পর্ক প্রচলিত বিবাহিত দম্পতির মতোই ছিল, তিনি আইনজীবীদের মাধ্যমে বিষয়টি আদালতেও উপস্থাপন করেন।
আইনজীবীরা যুক্তি দিচ্ছেন যে, আইন অনুযায়ী তিনি একজন বিধবার সমপরিমাণ অংশ পাওয়ার অধিকারী। ফৌজদারি তদন্তের পাশাপাশি এই উত্তরাধিকার বিবাদটিও চলমান রয়েছে এবং কোনো পক্ষই এখনো সমঝোতায় পৌঁছায়নি।
যদিও কোনো সরাসরি প্রমাণ মেলেনি, তবুও জোনাথনের বক্তব্যের অস্পষ্টতা ও আচরণ নিয়ে সন্দেহ রয়ে গেছে। সম্প্রতি তাকে রাস্তায় থামিয়ে তার ফোন জব্দ করে পুলিশ। কয়েক দিন পর তাকে জানানো হয় যে, তিনি আর শুধু সাক্ষী নন—হত্যার অভিযোগে এখন তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তাধীন।
সূত্রমতে, এই প্রক্রিয়া শেষ হতে আরও কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে। এখন পর্যন্ত তদন্তকারীরা জোনাথন তার পিতাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছেন এমন কোনো সরাসরি প্রমাণ খুঁজে পাননি। প্রক্রিয়া শেষ হলে বিচারক এবং সরকারি প্রসিকিউটর কার্যালয় উভয়কেই একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে।
